ফ্যাটি লিভার রোগটির ইতিহাস অনেক পুরোনো। অ্যালকোহলিক, নন-অ্যালকোহলিক—দুই ধরনের ফ্যাটি লিভার দেখা যায়। প্রাদুর্ভাব থাকলেও এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
কারণ
মদ্যপান, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ, লিভারের জিনগত কিছু অসুখ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গর্ভাবস্থা, অপুষ্টি, দ্রুত ওজন কমানো।
তবে ইনসুলিন হরমোন ঠিকমতো কাজ না করলেও ফ্যাটি লিভার হতে পারে। এর পেছনে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা। ফলে স্থূলকায় ডায়াবেটিস রোগীদের শতকরা ৭৫ জন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হন।
লক্ষণ কী
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভারের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। অন্যান্য পরীক্ষা করানোর
পর বিষয়টি ধরা পড়ে। তবে এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের অবসাদ ও দুর্বলতার কথাগুলো জানা যায়। এই অসুখ আরও অগ্রসর হলে পেটের ডান পাশে ব্যথা, পেটে চাকা অনুভব করা, জন্ডিস, রক্তবমি, এমনকি কালো পায়খানা হওয়ার এর লক্ষণ প্রকাশ পায়।
ঝুঁকিতে যাঁরা
স্থূলকায় মানুষেরা এই রোগের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ
ও রক্তে কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা এই রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।
লিভারে চর্বি জমার পরিণতি
লিভারে চর্বি জমার ফল নানা রকম হতে পারে। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে শুধু চর্বি
জমতে দেখা যায়। নন-অ্যালকোহলিক স্ট্যায়াটোহেপাটাইটিসে (ন্যাশ) চর্বি জমার পাশাপাশি লিভারে প্রদাহ হয়। ফাইব্রাস টিস্যু তৈরি হয়ে যকৃতের কোষকলাগুলো শক্ত হয়ে যেতে থাকে। ফলে লিভারের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ন্যাশ রোগীর শেষ পর্যন্ত লিভার সিরোসিস হতে পারে। এমনকি ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
এটি প্রতিরোধে শরীরে জমে থাকা মেদ ঝরিয়ে ফেলতে হবে। বলা হয়, ফ্যাটি লিভার খুব খারাপ অবস্থায় না গেলে শরীরের ওজনের ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে ফেলার পর এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিয়ন্ত্রিত কর্মমুখর জীবনযাপন আর সুষম খাদ্যাভ্যাসের সমন্বয় প্রতিরোধ করতে পারে ফ্যাটি লিভার।
খাদ্যাভ্যাস
মেডিটেরিয়ান ডায়েট লিভারে চর্বি কমানোর জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে আমাদের প্রথাগত খাদ্যাভ্যাসে এটি পুরোপুরি রপ্ত করা প্রায় অসম্ভব। কিছু খাবার ফ্যাটি লিভারের রোগীদের অবশ্যই বাদ দেওয়া উচিত। যেমন
জীবনাচরণ
স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি কর্মমুখর জীবনাচরণ খুব বেশি জরুরি। যেমন—
ফ্যাটি লিভার সারিয়ে তোলার তেমন ভালো কোনো ওষুধ নেই। কিন্তু লিভারের নিজেকে সারিয়ে তোলার দারুণ ক্ষমতা রয়েছে। এর চিকিৎসায় ব্যবহার করা
হয় ভিটামিন ই। সঙ্গে ডায়াবেটিস থাকলে তার চিকিৎসা, উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা, রক্তে কোলেস্টেরলের চিকিৎসা, ওজন বেশি থাকলে তার চিকিৎসা। তবে এই ওষুধগুলোর কোনোটিই ওজন কমানোর
আগে নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণ
করা সম্ভব।
পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. অদিতি সরকার, এমডি রেসিডেন্ট গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি,বিএসএমএমইউ
সূত্র : আজকের পত্রিকা
আপনার মতামত লিখুন :