শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর, ২০২৪, ০৩:৪১ দুপুর
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে নেপাল-বাংলাদেশেরও পেছনে ভারত-পাকিস্তান (ভিডিও)

আর রিয়াজ : গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ভারতের পিছিয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে চাইল্ড ম্যাল নিউট্রেশন। শিশু মৃত্যুর হারও অনেক বেশি। তবে ২০০০ সাল থেকে চাইল্ড ম্যাল নিউট্রেশনে অনেকটাই উন্নতি করেছে ভারত। তবে তার পরেও ভারতের কাছে এটি একটি বড় ইস্যু। বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২৪-এ ভারতের অবস্থান ১২৭ দেশের মধ্যে ১০৫তম। ভারতের যা অবস্থা তাকে গুরুতর বলে অভিহিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ভারতের অবস্থান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের উপরে হলেও বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার ও নেপালের মতো দেশের পেছনে। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ভারতের স্কোর ২৭.৩। রিপোর্টে বলা হয়েছে ভারতে যে ক্ষুধার যে পরিস্থিতি তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ২০১৬ সালে ভারতের এই ইনডেক্স ছিল ২৯.৩। ২০০০ সালে এটি ছিল ৩৮.৪ ও ২০০৮ সালে এটি ছিল ৩৫.২। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের ক্ষুধার সূচক ১০৯।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের যে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স প্রকাশিত হয়েছে তাতে  ২০১৬ সালের থেকে তা খানিকটা কমেছে। তবে ১২৭টি দেশের মধ্যে ৪২ দেশে ক্ষুধা এখনও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে বিশ্বে ক্ষুধার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির সঙ্গে।

অবশ্য বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে তিন ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ, পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতার দিক থেকে ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এ বছর ৮৪তম। সূচক অনুসারে, বাংলাদেশ বর্তমানে ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধা মোকাবিলা করছে।

গত শুক্রবার গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) বা বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবছর আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও জার্মান সংস্থা ওয়েলথ হাঙ্গার হিলফে যৌথভাবে এ সূচক প্রকাশ করে।

দেশভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের এবারের স্কোর ১৯ দশমিক ৪। এই নম্বর নিয়ে ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। গত বছর বাংলাদেশর মোট নম্বর ছিল ১৯; ১২৫টি দেশের মধ্যে অবস্থান ছিল ৮১তম।  

কোনো দেশে অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার এই চারটি মানদণ্ড বিবেচনা করে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতীয় যেকোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে এই সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে কোনো দেশের স্কোর শূন্য হলে বুঝতে হবে, সেখানে ক্ষুধা নেই। আর স্কোর ১০০ হওয়ার অর্থ, সেখানে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ। ক্ষুধা সূচক ১০ থেকে ১৯ দশমিক ৯-এর মধ্যে থাকলে ওই দেশ ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধায় আক্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ চলতি বছরের আগে ক্ষুধা মেটানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি করেছিল। ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৩ দশমিক ৮। গত বছর ছিল ১৯। যদিও এ বছর তা বেড়ে ১৯ দশমিক ৪ হয়েছে।

তবে ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল (৬৮তম অবস্থান, স্কোর ১৪ দশমিক ৭) ও শ্রীলঙ্কা (৫৬তম অবস্থান, স্কোর ১১ দশমিক ৩)। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।

ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতার দিক থেকে এ বছর ভারতের অবস্থান ১০৫তম, স্কোর ২৭ দশমিক ৩। ভারত এ বছর ছয় ধাপ এগিয়েছে। আর সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান ১০৯তম, স্কোর ২৭ দশমিক ৯। দেশটি সাত ধাপ পিছিয়েছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের অবস্থান ১১৬তম, স্কোর ৩০ দশমিক ৮। এটিও দুই ধাপ পিছিয়েছে।

জিএইচআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সার্বিকভাবে ক্ষুধা এখনো গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। নিম্নমানের খাদ্য, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে এ অঞ্চলে অপুষ্টি বাড়ছে; বিশেষ করে শিশুদের অপুষ্টির সমস্যা উচ্চ স্তরে রয়ে গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টির শিকার এবং ২ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু তাদের জন্মের পর পাঁচ বছরে পৌঁছানোর আগেই মারা যায়। দেশের ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি অপুষ্টির কারণে থমকে গেছে। আর অপুষ্টির কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১১ শতাংশ শিশুর শারীরিক বিকাশ নষ্ট হয়েছে; অর্থাৎ উচ্চতার অনুপাতে তাদের ঠিকমতো ওজন বাড়ছে না।

আবার ভারতের জিএইচআই স্কোর চারটি উপাদান সূচকের মানগুলির উপর ভিত্তি করে: জনসংখ্যার ১৩.৭% অপুষ্টির শিকার, ৩৫.৫% পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে এবং তাদের মধ্যে ১৮.৭% নষ্ট হয়ে গেছে এবং ২.৯ শতাংশ শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের আগে মারা যায়। 

প্রতিবেদনে উপসংহারে বলা হয়েছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে জিরো হাঙ্গার জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা খুব কম দেখা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত খাদ্যের অধিকারের গুরুত্বের উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বারবার জোর দেওয়া সত্ত্বেও, প্রতিষ্ঠিত মান এবং বাস্তবতার মধ্যে একটি উদ্বেগজনক বৈষম্য রয়ে গেছে যে বিশ্বের অনেক অংশে খাদ্যের অধিকারকে স্পষ্টভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবারের যোগানের অভাবে প্রতিদিন প্রায় ৭৩৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার সম্মুখীন হয়, যেখানে প্রায় ২.৮ বিলিয়ন মানুষ একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য বহন করতে পারে না।

আফ্রিকার কিছু দেশ এ সূচকে চরম প্রান্তে ‘শঙ্কাজনক’ বিভাগের অধীনে রয়েছে, গাজা এবং সুদানের যুদ্ধগুলি ব্যতিক্রমী খাদ্য সংকটের কারণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া কঙ্গো, হাইতি, মালি এবং সিরিয়া সহ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অন্যত্র সংঘাত এবং গৃহযুদ্ধও খাদ্য সংকট তৈরি করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়