শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট, ২০২৪, ১২:২৮ দুপুর
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বর্তমানে দেশে প্রায় দুইকোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে

শাহীন খন্দকার: ডব্লিউএইচ’র গ্লোবাল রির্পোট অন হাইপারটেশন ২০২৩ এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সনে বাংলাদেশে দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করছেন। এর ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ি উচ্চ রক্তচাপ। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশের জন্য অসংক্রামক রোগ দায়ি। এছাড়াও বর্তমানে দেশে প্রায় দুইকোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ।

দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, শহরের জনগোষ্ঠির মধ্যে প্রায় প্রতি ৪জনের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। সেই সঙ্গে ১৪ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বেসরকারী সেভ দ্য চিলড্রেন তাদের এক গবেষনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি সেভ দ্য চিলড্রেন তাদের এক গবেষনায় উঠে এসেছে, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে জরিপে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উচ্চ রক্তচাপ ও স্থলতা নির্ণয় ও ঝুঁিক যাচাই করা হয়। তারা এর জন্য ছোট ছোট বুথ তৈরী করে এবং সেখানে মানুষদেও উচ্চ রক্তচাপ ও ঝুঁকির পরিমাপ করে।

 এতে দেখা যায় যে, শহরের বাসিন্দাদেও মধ্যে ২৩ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তবে নারীদের চেয়ে পুরুষের উচ্চরক্তচাপ বেশী। এছাড়া শাহরে বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে ৮ শতাংশ স্থলতায় ভুগছে, আর ৩৬ শতাংশ মানুষ স্থলতার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সব চেয়ে বেশী উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে রয়েছে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মানুষ। সেভ দ্য চিলড্রেন পাবলিক হেলথ কমিউনিকেশন্স’র টেকনিক্যাল স্পেশালিষ্ট জান্নাতুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, নগরায়ণ যতোদ্রুত গতিতে বাড়ছে মানুষের জীবনযাত্রায় ততোধিক পরিবর্তন আসছে। সেটাই উচ্চ রক্তচাপের কারণ।

তিনি আরও বলেন, নগরায়ণের ফলে মানুষের শারীরিক কর্মকান্ড কমে যাওয়া , দীর্ঘক্ষণ বসে বসে কাজ করা এবং স্পাইসিখাদ্যাভাসে অভ্যস্থ হয়ে পরাও বলে মনে করছেন। রাজধানীর শ্যামলী আগারগাঁও বাংলাদেশ ন্যাশনাল হৃদরোগ ইনিস্টিটিউট এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন,  প্রতিবছর  দেশে দুই লাখ চল্লিশ হাজারের অধিক হৃদরোগী মারা যায়।

তিনি বলেন, হৃদরোগ থেকে প্রতিকার পেতে হলে অবশ্যই অতিরিক্ত সোডিয়াম খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ উচ্চ রক্তচাপের জটিলতাগুলোর প্রধানতম কারণ এবং যা খাবারে লবণ গ্রহণের মাত্রা কমানোর মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান তিনি। ডা. জামাল উদ্দিন বলেন, অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণের কারণে বিশে^ বছওে প্রায় ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতি ৫ জন মৃতব্যাক্তির মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

পরিচালক আরও বলেন, শুধুমাত্র খাবারে সোডিয়ামের মাত্রা হ্রাসের মাধ্যমে হৃদরোগসহ উচ্চ রক্তচাপের জটিলতাগুলো বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ এবং বহু অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে সরকারের স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পাবে। 

বিশিষ্ঠ এই চিকিৎসক বলেন, বাংলাদেশের সামনে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ৩০ শতাংশ সোডিয়াম গ্রহণ হ্রাসের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আদর্শ সুযোগ রয়েছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ৫ গ্রামের প্রায় দ্বিগুণ।

এই লবণের একটি বড় অংশ আসে প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট করা খাবার থেকে। বাংলাদেশে অধিকাংশ প্যাকেটজাত প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিমাত্রায় লবণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা হৃদরোগসহ অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

একই সাথে প্যাকেটজাত খাবারে এ ধরণের অতিরিক্ত লবণ প্রতিরোধে প্যাকেটের সামনে সতর্কতা লেবেল এবং কোনও খাবারে সর্বোচ্চ কি পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা যাবে, সেই সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়