শাহীন খন্দকার: [২] এখন চলছে বর্ষাকাল। এই বর্ষায় থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তা-ঘাটে খানাখন্দে পানি আর কাদা জমে ব্যাকটেরিয়াসহ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আর এসব রাস্তাঘাটের ভাইরাসে পথোচারি মনের অজান্তেই আক্রান্ত হচ্ছে, পথের ওপর তৈরি করা নানা খাদ্য খেয়ে।
[৩] কাদামাটির মধ্যে সুপ্ত অনেকজীবাণু অনেক সময় অন্ত্রের ওপর হামলা চালায়। তখন দেখা দেয় ডায়রিয়া। ঢাকার শেরে-বাংলা নগর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর সাবেক পরিচালক সৈয়দ সফি আহমেদ মুয়াজ বলেন,বর্ষায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা না মেনে চললে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
[৪] তিনি বলেন, অনেকেই বর্ষায় একটু অসুস্থ হলেই হুট করে ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করে দেন। তবে যেকোনো অসুস্থতায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়া ভালো। ওষুধ ছাড়াও কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আছে যেগুলো অনুসরণ করলে ওষুধ না খেয়েই বার বার ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
[৫] যেমন ডায়রিয়ার সময় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়। তাই এই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে বর্ষার সময় পানিতেই বেশি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থাকে বিধায় পানি ফুটিয়ে বা জীবাণুমুক্ত করে পান করাই উত্তম। এতে করে পানির মাধ্যমে নতুন করে শরীরে জীবাণু প্রবেশ করতে পারবে না। যার ফলে ডায়ারিয়ার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা প্রায় থাকবে না বললেই চলে।
[৬] ডায়রিয়ার মহৌষধি হল ডাবের পানি। এই পানীয় খেলে দেহে ইলোকট্রোলাইটসের ভারসাম্য ফেরানো সম্ভব। শুধু তাই নয়, এই পানীর গুণে শরীরে দ্রুত এনার্জি আসে। তাই ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
[৭] ডা. সফি আহমেদ বলেন, ডায়রিয়া হলে স্যালাইনের পানির বিকল্প নেই। প্রয়োজনীয় পরিমাণ স্যালাইন শরীরে পানির ঘাটতি পুরণ করে এবং ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য বজায় রাখে। স্যালাইন দেহের লবণ পানি যোগান করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
[৮] ডায়রিয়া অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ভারী খাবার না খাওয়াই শ্রেয়। তবে সমস্যা একটু কমলে অবশ্যই ভারী খাবার খেতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে শক্ত হবে মল। কমবে ডায়রিয়ার প্রকোপ। তবে ডায়রিয়ার সময় অনায়াসে ভরসা রাখতে পারেন ভাতের ওপর। কারণ এই খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্ব থাকে। যার ফলে এনার্জি পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, ভাত খুব সহজপাচ্য হওয়ায় পেটের সমস্যা বাড়ার আশঙ্কাও থাকে না। তাই এই সময় সামান্য পরিমাণে হলেও ভাত খান। তাতেই উপকার পাবেন।
[৯] ডায়রিয়াতে অন্ত্রে উপস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়া কমে যায়। তাই এই সময় এমন খাবার খেতে হবে, যাতে এই ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ানো যায়। আর টক দইতে রয়েছে প্রোবায়োটিকের ভান্ডার। তাই এই খাবার খেলেই অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে। ফলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব হয়। তাই চেষ্টা করুন ডায়রিয়ার সময় টক দই খাওয়ার।
[১০] টক দই প্রোবায়োটিকের কাজ করে। হজমপ্রক্রিয়া এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রোবায়োটিক কার্যকরী। টক দই পেট ফোলা কিংবা ডায়রিয়ার সমস্যা থেকে রেহাই দিতে সাহায্য করে। এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ঠান্ডা লাগা ,সর্দি-জ্বর না হওয়ার জন্য এটি ভালো কাজ করে। টক দইয়ের উপকারিতা ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে বারিয়ে হজম শক্তি বাড়ায় বা ঠিক রাখে।
[১১] তিনি আরও বলেন শিশুর পাতলা পায়খানা হলে শরীর থেকে পানি ও লবন (Electrolyte) ইলেক্ট্রোলাইট হচ্ছে এক ধরনের খনিজ বা রক্ত, টিস্যু, অঙ্গ এবং অন্যান্য শারীরিক তরলগুলোতে পাওয়া যায়। সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড, ফসফেট এবং ম্যাগনেসিয়াম সবই ইলেক্ট্রোলাইট। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, ইলেক্ট্রোলাইট শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। সে জন্য প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার সাথে সাথে শিশুকে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে শিশুর ওজন যত হবে তত চা চামচ স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
[১২] শিশুর বয়স ছয় মাসের নীচে হলে শতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। স্যালাইন তৈরিতে নির্ধারিত পানি হতে একটু বেশি পানি দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে কোনভাবেই যেন স্যালাইন গাঢ় না হয়ে যায়। পাতলা পায়খানা থাকাকালীন হালকা ও নরম খাবার খেতে দিতে হবে।
[১৩] ডা. মুয়াজ বলেন, শিশুর পাতলা পায়খানার মত আমাশা ও হতে পারে সেক্ষেত্রে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শক্রমে শিশুকে এনটিবায়োটিক খাওয়াতে হবে। সম্পাদনা: কামরুজ্জামান
এসকে/কে/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :