শিরোনাম

প্রকাশিত : ১১ জুলাই, ২০২৪, ১২:৪২ দুপুর
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বর্ষাকালে-সর্দিজ্বর ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হবার পরামর্শ দিলেন ডা. আয়েশা আক্তার

শাহীন খন্দকার: [১] বর্ষাকালে যেকোনো জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হলেই এই রোগ থেকে মুক্তি। যদিও অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন জ্বর হলেই। সবাই যদি সচেতন থাকা যায় তাহলে যে কোন সমস্যা সমাধান যেমন সম্ভব তেমনি ডেঙ্গু  থেকেও দ্রুত সুস্থ হওয়া যায় বা প্রতিরোধ সম্ভব।

বর্ষা শুরু হয়েছে, থেকে থেকে বৃষ্টি ও হচ্ছে। তাই এই বর্ষায় সর্দি-কাশি সাধারণ ঘটনা। শিশুদের একটু বেশী সমস্যা হয়। শিশুর সর্দিজ্বর দেখা দেওয়া মাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ দিলেই সুস্থ হয়ে যাবে ২-৩ দিনের মধ্যে। তবে এর মধ্যে যদি না কমে তবে বিপদের আশঙ্কা।কারণ বর্ষাকালেই বাড়ে ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়ার মতো রোগ। তবে জ্বর-ডেঙ্গুজরের মধ্যে ও বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। সেইসব পার্থক্যগুলো জেনে নেওয়া যাক, সাধারণ জ্বর ও ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সর্ম্পকে।

[২] ঠান্ডাজনিত  জ্বর সাধারণত বর্ষাকালেই বেশী হয়ে থাকে এবং জ্বর হলে চোখ জ্বালা করে। হাতে পায়ে হালকা ব্যথা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বর্ষাকালে যে জ্বর হয় তা কিন্তু অন্তত এক থেকে দু’দিন থাকে। এসময়ে জ্বর হলে মাথা হালকা ভার ভার লাগতে পারে। বেশিরভাগই ঘুম অনেকটা কমে যায়।

[৩] শ্যামলী অ্যাজমা ও টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: আয়শা আক্তার ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে  বললেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে হাত, পায়ের তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হবে। সেইসঙ্গে সারা গায়ে ফুসকুড়ি হবে। অনেক সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অনেকেরই শরীরে কোনও রকম উপসর্গ থাকে না। শুধুই শরীর দুর্বল হতে থাকে।

[৪] তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর জ্বর হলে পেটে তীব্র ব্যথা হয়, বমি লাগে, নাক দিয়ে অনেকের রক্ত পড়ে। এমনকি মল দিয়ে রক্ত আসে। বমি করলে তাতেও রক্ত আসে। খুব ক্লান্ত লাগে নিজেকে। উঠে দাঁড়ানো যায় না। প্রচন্ড মাথা ঘোরে।

[৫] ডেঙ্গু হলে সময় প্রচন্ড মাথাব্যথা হয়, চোখের চারপাশে, পেশিতে, জয়েন্টে ব্যথা হয়, পেট ব্যথা হয়সহ প্রেসার কমে যেতে থাকে।  সেই সঙ্গে রোগীর প্লাটিলেট হু হু কওে কমতে থাকে। শুধু তাই নয় অনেক সময় প্লাটিলেট রেট কমে গেলে মৃত্যুর মত ঘটনাও ঘটে থাকে।

[৬] এছাড়া  প্লাটিলেটের মাত্রা কেমন হওয়া উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন সাধারণ মানুষের  শরীরে প্লাটিলেটের মাত্রা প্রতি মাইক্রোলিটাওে একদশমিক পাঁচ লাখ থেকে চারদশমিক পঞ্চাশ লাখ পর্যন্ত থাকে। তবে ডেঙ্গুর  কিছু ক্ষেত্রে এই মাত্র কমতে থাকে। যদি এটি ১ লাখের কম হয় তবে এটি কম প্লাটিলেট গণনা হিসাবে বিবেচিত হয়, এবং এতে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নয়।

[৭] তিনি আরও বলেন, প্লাটিলেটের মাত্রা ৫০ হাজারের কম হলে পরিস্থিতি বিপদজনক হতে পারে।  এমন পরিস্থিতিতে রোগীকে প্লাটিলেট দিতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। ডা. আয়শা বলেন, যখন ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেড়ে যাবে ও হাসপাতালগুলো ভরে যাবে, তখন হয়তো সবার টনক নড়বে। এখনই সময় ডেঙ্গুর সম্ভাব্য আক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক হওয়া।

[৮] ডেঙ্গু হলে করণীয় সর্ম্পকে তিনি আরও বলেন,  রোগীকে অবশ্যই বাসায় বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাবেন, গা মোছাবেন। তরল খাবার, যেমন স্যালাইন, ডাব, স্যুপ, ফলের জুস, দুধ খাবেন দুই থেকে আড়াই লিটার প্রতিদিন। অন্যান্য খাবারও খাবেন। দিনে কয়েকবার রক্তচাপ পরীক্ষা করুন, পালস প্রেশার মাপুন। পালস প্রেশার হলো ওপরের ও নিচের প্রেশারের পার্থক্য। এটি ২০ মিমির কম হলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।

[৯] প্রস্রাবের পরিমাণ লক্ষ করুন। প্রস্রাব  কম হলে ও রক্তচাপ কমে গেলে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে, অর্থাৎ দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। প্রতিদিন সিবিসি টেস্ট করানো ভালো। কখন হাসপাতালে ভর্তি হবেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন প্রচন্ড পেটব্যথা, অতিরিক্ত বমি, শরীরে পানি জমা, রক্তপাত শুরু হওয়া, হেমাটোক্সিট বেড়ে যাওয়া, প্লাটিলেটের পরিমাণ ৫০ হাজারের নিচে নামলে, প্রস্রাব কমে গেলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি জরুরী।

[১০] বর্ষা মৌসুমে বাড়ির আশপাশে, ছাদের টবে, চৌবাচ্চায় পানি জমে। এসব জমে থাকা পানিতেই জন্মায় ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডিস মশার বিস্তার থাকে অনেক বেশি। এ সময়টাকে ডেঙ্গুর মৌসুমও বলা হয়। 

[১১] ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সেরে যায়। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে সুস্থ হতে দুই-তিন সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। শুরুতেই সচেতন হলে মৃত্যুঝুঁকি ও অন্যান্য জটিলতা এড়ানো সম্ভব। সম্পাদনা: রাশিদ 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়