বছরজুড়ে পর্যটকরা ঘোরাঘুরি করলেও ভ্রমণের মৌসুম মূলত শীতকাল। এই সময়ে রোদ-বৃষ্টির কোনো ভয় থাকে না। বাংলাদেশ তার চিরাচরিত নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ফিরে পায় শীতকালে। সেই সৌন্দর্যের মোহে আবিষ্ট হয়ে দীর্ঘ শিশির ভেজাপথ হেঁটে গেলেও ভর করবে না কোনো ক্লান্তি। তাই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির সময়টিতে দেশজুড়ে পড়ে যায় বনভোজনের ধুম। শীতে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে পারেন দেশের কয়েকটি স্থান।
শ্রীমঙ্গল : চায়ের জন্য বিখ্যাত শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানীও বলা হয়। শীতে শ্রীমঙ্গল গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বেশ কয়েকটি স্থানে। সেখানকার বাইক্কার বিলে গেলে দেখতে পাবেন অতিথি পাখিদের। এ ছাড়া ঘুরতে পারবেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। লাউয়াছড়া উদ্যান ঘুরে যেতে পারেন নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, আদি নীলকণ্ঠ টি-কেবিন (সাত রঙের চায়ের জন্য বিখ্যাত), সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা ও চা জাদুঘরে।
পঞ্চগড় : বাংলাদেশের হিমালয়কন্যা খ্যাত জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের পাদদেশে জেলাটির ভৌগোলিক অবস্থান হওয়ায় পঞ্চগড়কে বলা হয় হিমালয়কন্যা। কাঞ্চনজঙ্ঘা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত। প্রতি বছর শীতের সময় বাংলাদেশ থেকে দেখা মেলে এই পর্বতের। পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়া থেকে স্পষ্টভাবে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখা মেলে পর্বতের। শীতের আকাশ মেঘমুক্ত ও পরিষ্কার থাকায় ভেসে ওঠে তুষারশুভ্র হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের সরকারি ডাকবাংলো চত্বর কিংবা জিরো পয়েন্ট থেকে দেখা মেলে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম পর্বতের। পাশাপাশি স্পষ্টভাবে দার্জিলিংয়ের সবুজে ঘেরা পাহাড় শ্রেণিও দেখা যায়।
মারায়ন তং : বান্দরবান জেলার আলীকদম থানার মিরিঞ্জা রেঞ্জে অবস্থিত একটি পাহাড় মারায়ন তং। ত্রিপুরা, মারমা, মুরংসহ বেশ কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস এই পাহাড়ে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৬৪০ ফুট উচ্চতায় মারায়ন তংয়ের চূড়া অবস্থিত। শীতের এই সময় সাদা মেঘে ঢেকে যায় পাহাড়ের চূড়া। আপনার মনে হবে আপনি সাদা মেঘের জমিনের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। চাইলেই এই শীতে ঘুরে আসতে পারেন মারায়ন তং।
চর কুকরি মুকরি : ভোলা জেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত একটি দ্বীপ কুকরি মুকরি। বর্ষায় ডুবে থাকলেও শীতে এই চর ভেসে ওঠে। বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বৃহৎ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এই দ্বীপ। নাম না জানা অসংখ্যা গাছ ও সারি সারি নারিকেল গাছ সঙ্গে বিশাল বালুময় চর দেখলে আপনার মনে হবে সৈকতে দাঁড়িয়ে আছেন। চাইলে ক্যাম্পিং করে রাত্রিযাপনও করতে পারেন দ্বীপে।
কুয়াকাটা : সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। কক্সবাজারের মতো অভিজাত না হলেও এখানকার নিরিবিলি বেলাভূমি এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কুয়াকাটাকে করেছে অনন্য।
সুন্দরবন : বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সুন্দরবনের ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটারজুড়ে আছে নদীনালা, বিল, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিচিত্র সব পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। এখানে আরও আছে ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ ধরনের সরীসৃপ এবং ৮ শ্রেণির উভচর প্রাণী। সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এই বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়েছে। শীতকাল সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এ ছাড়াও সুন্দরবন গেলে দেখবেন জামতলা সৈকত, মান্দারবাড়িয়া সৈকত, হীরণ পয়েন্ট, কটকা বিচ ও দুবলার চর।
ঢাকার আশপাশে : ঢাকার বাইরে যাওয়ার মতো সময় বের করতে না পারলে এক দিনের ছুটিতে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন রিসোর্ট থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পূর্বাচল ও গাজীপুরে বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে। ছুটি রিসোর্ট, সারাহ রিসোর্ট, ভাওয়াল রিসোর্ট, নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টসহ আরও অনেক রিসোর্ট পেয়ে যাবেন ঢাকার অদূরেই।
আপনার মতামত লিখুন :