মনিরুল ইসলাম: পশ্চিমবঙ্গের বারাকপুর এর নিমতার একদম সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে ভারতের সংগীত জগতের আকাশে বিচরণ শুরু হল মানসী ঘোষ ।
রোববার ‘ইন্ডিয়ান আইডল সিজন-১৫’ প্রথম হয়ে সুরের জগতে প্রতিষ্ঠিত হল আরও এক বাঙালি। এই খবরে গর্বিত রাজ্য তথা দেশবাসী। তাঁর একরাতে তারকা হওয়ার পিছনে অবশ্য রয়েছে দীর্ঘ কুড়ি বছরের সাধনা।
মা-বাবার ইচ্ছেতেই নিমতা পাইকপাড়ার বাসিন্দা মানসী ঘোষের মাত্র চার বছর বয়সে গান শেখা শুরু। শিখতে শিখতেই তাঁর গানের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। ১৩ বছর বয়সে প্রথম স্টেজ শো করেছিলেন তিনি, আর স্টেজ শো করে রোজগার শুরু হয় ১৫-১৬বছর বয়স থেকে। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে মানসী অগুনতি স্টেজ শো করেছেন।
সমান তালে পড়াশোনাও চালিয়েছেন। দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ হাই স্কুল থেকে পাশ করে ইংরেজি অনার্স নিয়ে শিয়ালদহ সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে তাঁর স্নাতক হওয়া ২০২১ সালে। ওই বছরই সুপার সিঙ্গারে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় হন মানসী। এখানেই তিনি থেমে যায়নি। বরং নিজেকে আরও তৈরি করে ২০২৪ সালে জুন-জুলাই মাসে ইন্ডিয়ান আইডলের জন্য অডিশন দেন। তারপর থেকে সাত-আট মাস টানা দর্শক ও বিচারকদের মনজয় করে রোববার মানসীর ইন্ডিয়ান আইডলে প্রথম হন।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় মানসীর ইতিকথা।
এতে বলা হয়, সুপার সিঙ্গারের পর থেকে সোনু নিগমের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়েছিল মানসীর। ইন্ডিয়ান আইডলেও তিনজন বিচারক শ্রেয়া ঘোষাল, বাদশা, বিশাল দাদলানি প্রিয় হয়ে উঠেছেন নিমতার মেয়ে। প্রশংসা কুড়িয়েছেন অক্ষয় কুমার থেকে করণ জোহর, কঙ্গনা রানাউত, অনুপম খের, গোবিন্দা, সুখবিন্দর সিং সকলের। ইতিমধ্যেই সংগীত পরিচালক ললিত পণ্ডিতের সুরে ‘মন্নু কেয়া করেগা’ বলিউড সিনেমায় সে প্লে-ব্যাক করেছেন শানের সঙ্গে।
নিজের অরিজিনাল একটি বাংলা সিঙ্গেলও খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশিত হবে। যার সুর মানসী নিজেই দিয়েছেন। এক বেসরকারি চ্যানেলের হয়ে মে থেকে ব্রিটেন, আমেরিকা ট্যুর শুরু হচ্ছে তাঁর। পাশাপাশি মুম্বইয়ে প্লে-ব্যাকের জন্য পরিশ্রম চালিয়ে যাবেন। ইতিমধ্যে বাদশার সঙ্গে কোলাবরেশনের কথা রয়েছে। এককথায় বছর চব্বিশের মেয়ে এখন থেকে ২৪ ঘন্টাই ব্যস্ত।
এখনও কোনও বিশেষ বন্ধু নেই মানসীর। তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, “কারেন্টলি আই অ্যাম ভেরি মাচ সিঙ্গেল।” জয়ী হওয়ার পর ফোনে মানসী জানায়, “খুব চেষ্টা করেছি, পরিশ্রম করেছি। তবে নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এখনও গান শিখেছি। বাবা, মা, মাসি আমার সবথেকে বড় সাপোর্ট। আনন্দ শর্মা, রণদীপ ভাস্কর আমায় গ্রুমিং করেছেন।”
ভবিষ্যতে অরিজিৎ সিংয়ের সঙ্গেও গান গাওয়ার স্বপ্ন রয়েছে তাঁর। মানসীর কথায়, “মানুষের ভালোবাসা, আশীর্বাদ থাকলে ভবিষ্যতে অরিজিৎ সিংয়ের সঙ্গে গান করা স্বপ্ন রয়েছে। তবে নিজেকে প্রমাণ করার পরে যদি মনে করি আমি ওঁর সঙ্গে কাজ করার মত যোগ্যতা অর্জন করেছি, তাহলেই এগোব।” মানসীর পরিচিত মুকেশ রায় ম্যাক্স জানিয়েছেন, “ওঁকে বহুদিন চিনি, আমার বোনের মতো। খুবই প্রতিভাবান। আমি নিশ্চিত ওঁর আরও উন্নতি হবে।”