মালয়ালম সিনেমা ‘এল টু: এমপুরান’। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া মোহনলালের ‘লুসিফার’ সিনেমার এই সিকুয়েল হলে এসেছে গত ২৭ মার্চ। মুক্তির পরই ঝড় তুলেছে এমপুরান। পৃথ্বিরাজ সুকুমারন পরিচালিত এই সিনেমা বক্স অফিসে দ্রুততম সময়ে পার করেছে ১০০ কোটি রুপির মাইলফলক। তবে এমপুরানের এই সাফল্যের পালে লেগেছে রাজনৈতিক বিতর্কের ধাক্কা।
বিজেপি ও আরএসএস নেতাদের আপত্তিতে মুক্তির পরও আবার সিনেমাটিকে তোলা হয়েছে সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের কাঠগড়ায়। নতুন করে ১৭টি দৃশ্য বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটা না করলে আগামী সপ্তাহ থেকে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমপুরানের প্রদর্শনী।
জানা গেছে, ২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, যেটি গুজরাত রায়ট নামে পরিচিত, সেই ঘটনার কিছু অংশ উঠে এসেছে এমপুরান সিনেমায়। আর এতেই খেপেছেন বিজেপি ও আরএসএসের নেতারা। প্রায় তিন মাস ধরে চলা ওই সহিংসতায় মূলত মুসলিম জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়। হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া—সব মিলিয়ে এই দাঙ্গা ভারতের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই সহিংসতায় হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়, ২০০ জনের বেশি নিখোঁজ হয়, আহত হয় আরও কয়েক হাজার, যাদের সিংহভাগই ছিল মুসলিম।
অভিযোগ আছে, নরেন্দ্র মোদি এই দাঙ্গার নেপথ্যে ছিলেন। ভয়াবহ এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। দাঙ্গার শুরু থেকেই নানা অভিযোগ-সন্দেহ ওঠে যে গুজরাটের তৎকালীন বিজেপির রাজ্য সরকার পরোক্ষভাবে দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছে এবং হত্যাযজ্ঞ থামাতে ইচ্ছাকৃতভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি।
এমপুরান সিনেমায় গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা উঠে আসায় আবারও বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই নানাভাবে উসকানি দিয়ে আসছিল বিজেপি ও আরএসএসের নেতারা। তাদের তীব্র বিরোধিতার মুখে এমপুরান আবার দেখেছেন সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা। গুজরাত রায়টে উল্লেখ আছে এমন ১৭টি দৃশ্য বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সার্টিফিকেশন বোর্ড।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, যাতে বড় কোনো বিভ্রান্তি না ছড়ায়, সে কারণে নতুন করে ১৭টি কাট দেওয়া হয়েছে। সিনেমার কিছু দৃশ্য়ে নারীদের ওপর অত্যাচারের শটগুলো ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বাবা বজরঙ্গির চরিত্রের নামও বদলে দেওয়া হচ্ছে। কিছু সংলাপ মিউট করা হচ্ছে। নতুন সংস্করণ মুক্তি দেওয়া হবে আগামী সপ্তাহে। তবে এসবের মধ্য়েও এল টু: এমপুরানকে ঘিরে উৎসাহ ক্রমশ বাড়ছে।