শিরোনাম
◈ ঈমাম নিয়ে দুই পক্ষের উত্তেজনার জেরে ঈদগাহে ১৪৪ ধারা জারি ◈ ঈদের দিনও ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৫ শিশুসহ ৯ ফিলিস্তিনি ◈ মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন কিনা ইশরাক, যা জানালেন মির্জা ফখরুল ◈ জাতির উদ্দেশে ঈদ শুভেচ্ছা বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে যেসব বিষয়ে অবহিত করলেন সেনাপ্রধান ◈ আইন ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই হোক এবারের ঈদের অঙ্গীকার: তারেক রহমান  ◈ তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কাজ করতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে চীন (ভিডিও) ◈ আল-আকসায় ঈদের নামাজ পড়লেন ১ লাখ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি ◈ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে প্রধান উপদেষ্টার দাওয়াত ◈ জাতীয় ঈদগাহ কেন্দ্রিক থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার

প্রকাশিত : ২৭ মার্চ, ২০২৫, ০১:০৮ দুপুর
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত পুলিশি নির্যাতন তুলে ধরা সিনেমার মুক্তি আটকে দিল ভারতীয় সেন্সর বোর্ড

‘সন্তোষ’ সিনেমাটি ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর অন্ধকার দিক নিয়ে নির্মিত একটি স্পষ্ট ও সাহসী কাহিনি। এতে পুলিশ বাহিনীর গভীরে নিহিত নারীবিদ্বেষ, দলিতদের প্রতি বৈষম্য এবং নির্যাতন ও সহিংসতাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার প্রবণতা দেখানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত সিনেমা 'সন্তোষ'-এর মুক্তি আটকে দিয়েছে ভারতের চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। সিনেমায় ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর নারীবিদ্বেষ,  ইসলামবিদ্বেষ ও সহিংসতা যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সেন্সর বোর্ড।

ব্রিটিশ-ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সন্ধ্যা সুরির লেখা ও পরিচালিত 'সন্তোষ' সিনেমা উত্তর ভারতের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত। সিনেমায় এক তরুণ বিধবার গল্প দেখানো হয়েছে, যিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে এক দলিত কিশোরীর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেন। ছবিটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।

'সন্তোষ' সিনেমাটি ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর অন্ধকার দিক নিয়ে নির্মিত একটি স্পষ্ট ও সাহসী কাহিনি। এতে পুলিশ বাহিনীর গভীরে নিহিত নারীবিদ্বেষ, দলিতদের প্রতি বৈষম্য এবং নির্যাতন ও সহিংসতাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার প্রবণতা দেখানো হয়েছে। ছবিটি ভারতে যৌন সহিংসতা, বিশেষ করে নিম্ন বর্ণের নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ, এবং ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষের বিষয়েও আলোকপাত করেছে।

'সন্তোষ' কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম প্রদর্শিত হয় এবং প্রশংসিত হয়। এটি যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে অস্কারের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনীত হয়েছিল এবং সেরা নবাগত পরিচালক বিভাগে একটি বাফটা মনোনয়ন পেয়েছিল। ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। দ্য অবজারভার এটিকে 'অসাধারণ অর্জন' বলে পাঁচ তারকা রেটিং দিয়েছে। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা শাহানা গোস্বামী এশিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন।

সিনেমাটি সম্পূর্ণভাবে ভারতে নির্মিত। এতে শুধু ভারতীয় অভিনেতারা অভিনয় করেছেন এবং হিন্দি ভাষায় নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাতারা শুটিংয়ের জন্য আগেই চিত্রনাট্য জমা দিয়েছিলেন এবং তখন কোনো বাধার মুখে পড়েননি। ভারতের সবচেয়ে বড় সিনেমা চেইনও জানুয়ারিতে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।

তবে এখন 'সন্তোষ' হয়ত ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে কখনোই মুক্তি পাবে না। দেশটির সরকারি সেন্সর বোর্ড, সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি) পুলিশ বাহিনীর নেতিবাচক চিত্রায়ণের অজুহাতে সিনেমাটির ছাড়পত্র বাতিল করেছে।

সিনেমার পরিচালক ও লেখক সন্ধ্যা সুরি সেন্সর বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে 'হতাশাজনক ও হৃদয়বিদারক' বলে বর্ণনা করেছেন।

সুরি বলেন, 'এটি আমাদের সবার জন্য বিস্ময়কর ছিল, কারণ আমি মনে করিনি যে এই বিষয়গুলো ভারতীয় সিনেমার জন্য নতুন কিছু বা এর আগে অন্যান্য ছবিতে এগুলো তুলে ধরা হয়নি।'

সুরি জানান, সেন্সর বোর্ড এমন কিছু পরিবর্তনের তালিকা দিয়েছে, যা এত দীর্ঘ ও বড় যে তা বাস্তবায়ন করা 'অসম্ভব'। আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি বিস্তারিত বলতে পারেননি, তবে বোর্ডের কাটছাঁটের তালিকা কয়েক পৃষ্ঠাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং এতে পুলিশের আচরণ ও সামাজিক সমস্যার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ছবিটির মূল ভাবনার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

'আমি সত্যিই চেয়েছিলাম ছবিটি ভারতে মুক্তি পাক, তাই আমি সমাধানের পথ খুঁজতে চেয়েছিলাম,' বলেন সুরি। 'কিন্তু শেষ পর্যন্ত এত কাটছাঁট করে এমন একটি ছবি বানানো কঠিন হয়ে পড়ে, যা অর্থবহ থাকবে, তার মূল ভাবনা অক্ষুণ্ন রাখা তো দূরের কথা।'

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ছবিটি পুলিশ বাহিনীর নির্দয় বাস্তবতা তুলে ধরলেও, 'আমি মনে করি না, আমার সিনেমা সহিংসতাকে মহিমান্বিত করেছে, যেভাবে অনেক পুলিশকেন্দ্রিক সিনেমা হয়ে থাকে। এখানে কোনো অতিরঞ্জিত উপস্থাপনা নেই।'

সেন্সর বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এলো, যখন ভারতে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর হয়েছে। রাজনৈতিক সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে নির্মিত সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়ে, ঘৃণার শিকার হয়, এমনকি মুক্তির আগেই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

সুরি স্বীকার করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতে ছবিটি মুক্তি দেওয়া নিয়ে তার কিছুটা উদ্বেগ ছিল। তবে তিনি মনে করেন, যারা বাস্তবে এই সমস্যাগুলোর শিকার, তাদের ছবিটি দেখা অত্যন্ত জরুরি। ২০১২ সালে দিল্লিতে বাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা, যা 'নির্ভয়া কাণ্ড' নামে পরিচিত, তাকে এই ছবি বানানোর অনুপ্রেরণা দেয়। গল্পটি নির্মাণের সময় তিনি ভারতীয় বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে কাজ করেছেন।

ভারতে পুলিশি সহিংসতা ও নির্যাতন বহুবার আলোচিত হয়েছে। ২০২০ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশটির পুলিশ নিয়মিতভাবে নির্যাতন চালায় এবং গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ার বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে। কিন্তু তাদের প্রায় কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না।

ভারতীয় সিনেমায় আগেও পুলিশি সহিংসতার চিত্র দেখানো হয়েছে। তবে সুরি মনে করেন, 'সন্তোষ'-এর অতিরিক্ত বাস্তবসম্মত উপস্থাপন হয়ত সেন্সর বোর্ডকে অস্বস্তিতে ফেলেছে, কারণ বলিউড ও অন্যান্য ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পে পুলিশি সহিংসতাকে সাধারণত নান্দনিক ও শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা হয়।

সুরি বলেন, 'হয়ত এই সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডের জন্য অস্বস্তিকর, কারণ এখানে সবাই নৈতিকভাবে দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে, কোনো একক নায়ক নেই। ভারতীয় সিনেমায় সাধারণত দেখা যায়, একজন সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা নষ্ট একটি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এই ছবিতে তেমন কিছু নেই।'

ছবিটি উত্তর ভারতের একটি কাল্পনিক শহরকে কেন্দ্র করে নির্মিত হলেও, এখনো কোনো ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তা এ নিয়ে মন্তব্য করেননি। সিবিএফসি-এর কাছে বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছে।

একবার সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে তা আপিল বা পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। কেবল আদালতের দ্বারস্থ হওয়াই একমাত্র উপায়। তবে সুরি জানিয়েছেন, তিনি এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাবেন, যাতে ছবিটি ভারতীয় দর্শকরা দেখতে পারেন।

তিনি বলেন, 'আমার সব কাজই ভারতের ওপর ভিত্তি করে। একটি সিনেমাতে পুরোনো দিনের স্মৃতি ছিল, অন্যটি ছিল চমৎকার ও আবেগময়।' 

তিনি আরো বলেন, 'হ্যাঁ, এই সিনেমাতে দেশের আরেকটি দিক দেখানো হয়েছে। তবে এই সিনেমার প্রতিটি চরিত্রেই মানবিকতা রয়েছে।'

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়