শিরোনাম
◈ যে কারণে সাকিবের সঙ্গে তুলনা চান না মিরাজ ◈ ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ কতটুকু তাণ্ডব চালাতে পারে বাংলাদেশে  ◈ স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবি : তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, মহাখালীতে তীব্র যানজট ◈ সচিবালয়ে ঢুকে পড়া ২৮ জনকে মুচলেকায় মুক্তি, ২৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা (ভিডিও) ◈ সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় খালাস পেলেন মামুনুল হক ◈ চট্টগ্রামে টায়ার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট ◈ কানাডা সফরে ভিসা সহজীকরণ-প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ সেনাপ্রধানের ◈ তোপের মুখে জাস্টিন ট্রুডো ◈ বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের প্রধান কোচ সুজন ◈ রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি

প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট, ২০২৪, ১২:৪১ দুপুর
আপডেট : ২১ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এফডিসিকে দূর্নীতিমুক্ত ও দখলবাজ মুক্ত করতে হবে : অভিনেতা উজ্জ্বল

মনিরুল ইসলাম  ঃ   দেশীয় চলচ্চিত্রের মেগাস্টারখ্যাত নায়ক, প্রযোজক ও পরিচালক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দেশের বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। গেলো ৫ আগস্ট দেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর চলচ্চিত্রের লোকজনকে নিয়ে বৈষম্যমুক্ত চলচ্চিত্রাঙ্গন গড়ার ডাক দিয়েছেন এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। নিজের ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে উজ্জল এই ডাক দেন। 

তার সেই পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো। তিনি লিখেন, আমরা যারা দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং নিজেদেরকে এই মাধ্যমের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত করেছি, ইদানিং লক্ষ্য করছি  চলচ্চিত্রকে নিয়ে হুটহাট করে অনেকেই মন্তব্য করছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আবার পেশাদার চলচ্চিত্রকার নন। আমি তাদের মতামতকে স্বাগত জানাই। তবে তারা সমস্যার গভীরে না গিয়ে ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে মনগড়া সমাধান দিয়ে মন্তব্য করছেন বা বক্তব্য রাখছেন। এতে করে সরকার ও চলচ্চিত্রপ্রেমীরা বিভ্রান্ত হতে পারেন বলে আশংকা করছি। বিরোধিতা করছি না, চিন্তাশক্তির উন্মেষ ঘটাতে আমার এই আলোচনার সূত্রপাত। 

মনে রাখতে হবে আমাদের চলচ্চিত্র বিকশিত হয়েছে ঢাকার নবাব পরিবারের হাত ধরে। ১৯২৭ - ২৮ সালে জগন্নাথ কলেজের তৎকালীন ক্রীড়াশিক্ষক অম্বুজপ্রসন্ন গুপ্তের পরিচালনায় 'সুকুমারী' নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯৩১ সালে মুক্তি পায় তারই পরিচালনায় প্রথম নির্বাক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দ্য লাস্ট কিস। প্রজ্ঞাবান সাংবাদিক ওবায়েদ-উল হক পরবর্তীতে )'বাংলাদেশ অবজারভার' এর সম্পাদক) ১৯৪৬ সালে 'দুঃখে যাদের জীবন গড়া' চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন। এটি তিনি করেছিলেন হিমাদ্রী চৌধুরী ছদ্মনামে। এটি কলকাতায় নির্মিত হলেও বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশী কোনও মুসলিম পরিচালকের হাতে নির্মিত এটি প্রথম পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র। উদয়ন চৌধুরী ছদ্মনামে ইসমাইল মোহাম্মদ ১৯৪৭ সালে নির্মাণ করেন মানুষের ভগবান  চলচ্চিত্রটি।

১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট আবদুল জব্বার খান পরিচালিত এবং আমাদের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত ফিল্ম স্টুডিওতে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম সবাক বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ মুক্তি পায়। এরপর আমাদের চলচ্চিত্র সমৃদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে এহতেশাম, ফতেহ লোহানী, সালাহউদ্দিন, জহির রায়হান, খান আতা, সুভাষ দত্ত, নারায়ণ ঘোষ মিতা, কামাল আহমেদ, আলমগীর কবির, কাজী জহির, চাষী নজরুল, আলমগীর কুমকুম, আমজাদ হোসেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, জহিরুল হক, আজিজুর রহমান, মমতাজ আলী, এজে মিন্টু, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক খলিল উল্লাহ, ইফতেখারুল আলম, প্রযোজক হাবিবুর রহমান  চিত্রনায়ক ও পরিচালক রাজ্জাক, আজিম, রহমান, কবরী, ববিতা, শাবানা, আলমগীরসহ অনেকের নামই বলা যায়। 

ব্রিটিশ ভারতে প্রবর্তিত দ্য সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট ১৯১৮, যা ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পাকিস্তানে এবং স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে আরও সংশোধিত ও সংযোজিত হয়ে প্রয়োগ হয়। ১৯১৮ সালে সিনেমাটোগ্রাফ আইনের লক্ষ্য ছিল প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের নিরাপত্তা বিধানকল্পে যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্বারা চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন এবং সেন্সর কর্তৃপক্ষ দ্বারা চলচ্চিত্রের ছাড়পত্র প্রদান।

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ফিল্ম সেন্সর অ্যাক্ট ১৯৬৩ কে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৪১/১৯৭২ সংশোধন করে চলচ্চিত্র সেন্সর বিধি চালু করা হয়। এর আগে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিকাশের রূপকার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রবর্তক, চলচ্চিত্রের আধুনিকায়ন ও রঙিন যুগে নিয়ে যাওয়ার পথপ্রদর্শক, কবিরপুরে ফিল্ম সিটি বানানো ও চলচ্চিত্রে অনুদান প্রথা চালু করার রূপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭২ এর চলচ্চিত্র বিধি বাতিল করে ১৯৭৭ এ প্রণীত হয় ‘দ্য বাংলাদেশ সেন্সরশিপ অব ফিল্মস রুলস’। এর আলোকেই একটি চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়।  প্রতিষ্ঠানটি উক্ত নীতিমালার ১৩নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধি অনুসারে সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা আইন - শৃঙ্খলা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ধর্মীয় অনুভূতি, অনৈতিক বা অশ্লীলতা, বীভৎসতা, অপরাধ, নকল প্রভৃতি দিক বিবেচনা করে একটি চলচ্চিত্রকে ছাড়পত্র প্রদান করে থাকে। 

তিনি তার পোষ্টে লিখেন, এবার মূল আলোচনায় আসি।আমরা অনেকেই যার যতটুকু সমস্যা সেই আলোকে নিজের অনুকূলে পরিবর্তন বা সংশোধনী চেয়ে মনগড়া  মন্তব্য বা বিবৃতি দিচ্ছি। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন নির্দিষ্ট করে দিয়ে বলছি সংস্কার চাই। ক্ষত সারানো আর সংস্কার একই বিষয় নয়। ক্ষত সারালে ব্যাথার উপশম ঘটে বটে, স্থায়ী সমাধান হয় না। স্থায়ী সমাধানের জন্য চাই সংস্কার। এর জন্য দরকার দলমত নির্বিশেষে দীর্ঘদিন যারা চলচ্চিত্র নির্মাণ, ব্যবসায়, অভিনয়, পরিচালনার সাথে জড়িত, তাদের সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে ও অন্যান্য দেশে চলমান সেন্সর বোর্ড  বা চলচ্চিত্র নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কর্মপদ্ধতির পর্যালোচনা করে সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্তে আসা।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না -  দলকানা, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট নয় এমন অযোগ্যদের দিয়ে 'ফিল্ম সেন্সর বোর্ড' ও 'ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটি' গঠন, অনুদান কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা এখনো চলমান। এরা ধ্বংস, বৈষম্য ও অর্থ তছরুপেই ব্যতিব্যস্ত। অবিলম্বে এই সমস্ত কমিটি বা বোর্ড বাতিল করে যোগ্য লোকদের স্থলাভিষিক্ত করতে হবে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট, আইনজ্ঞ, সুশীল সমাজ নিয়ে সংস্কার কমিশন গঠন, চলচ্চিত্র পুরস্কারে স্বচ্ছতা আনা, প্রাজ্ঞদের দিয়ে চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরিবোর্ড ও অনুদান কমিটি গঠন,  বাণিজ্যিক ছবিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া, বিদেশি ছবি আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের চলচ্চিত্রবান্ধব নীতিমালা তৈরি, যৌথ প্রযোজনা চলচ্চিত্র নির্মাণে সর্বজনের মতামতে নীতিমালা তৈরি, সিনেমা হল নির্মাণে সরকারি উদ্যোগ, পুরনো সিনেমা হল ভেঙে বহুতল বিল্ডিং করলে সেখানে অন্তত দুটি সিনেপ্লেক্স থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

এফডিসিকে দূর্নীতিমুক্ত ও দখলবাজ মুক্ত করতে হবে।এফডিসির বুকে যেকোনো বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কার্যক্রম বাতিল করতে হবে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়া অন্যকোনো নির্মাণ করা যাবে না, বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণে অন্তর্বর্তী কিছু সময় নির্ধারণ করে পঁচাত্তর ভাগ ভাড়া কমিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহ ও সবধরনের কর মুক্ত করতে হবে। এফডিসির অর্গানোগ্রাম আপগ্রেড করতে হবে। কবিরপুরের জিয়া ফিল্ম সিটি বিশ্বের উন্নত ফিল্মস্টুডিওর মতো প্রয়োজনে সেইসব প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনাবিদ এনে জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণ শুরু করতে হবে, যাতে করে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা আমাদের স্টুডিও ব্যবহারে আগ্রহী হয়।

তাই আসুন, কথোপকথনের খেলা খেলে সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যাই আলোর পথে। পথ চলি সবাইকে নিয়ে একসাথে। বৈষম্য বিরোধী চলচ্চিত্র বলয় গড়ে তুলি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়