শিরোনাম

প্রকাশিত : ১১ আগস্ট, ২০২৪, ০৩:০৮ দুপুর
আপডেট : ২১ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভিন্নমতের স্বাধীনতা ও সংস্কার চান শিল্পীরা

রাশিদ রিয়াজঃ শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে ‘নতুন’ বাংলাদেশের যাত্রায় মুক্তচিন্তা ও রাষ্ট্র-সংস্কারের পক্ষে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ভিন্নমত প্রকাশের অবাধা স্বাধীনতার দাবি উঠেছে চারটি প্ল্যাটফর্মের শিল্পীদের সম্মিলিত এক সমাবেশ থেকে। 'বিক্ষুদ্ধ থিয়েটারকর্মীগণ', 'আলোকচিত্রী সমাজ', 'দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ' ও 'গেট আপ স্ট্যান্ড আপ (বাংলাদেশ সঙ্গীতশিল্পী সমাজ)' নামের সংগঠনের কর্মীরা শনিবার (১০ আগস্ট) বিকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ সমাবেশ আয়োজন করেন।

আয়োজক সংগঠনগুলো ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে একাধিক কর্মসূচিও পালন করেছিল। ‘রক্তাক্ত জুলাই’ এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় খুন ও সন্ত্রাসের কারণে যারা শহীদ ও গুরুতর আহত হয়েছেন, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া এবং আহতদের পুনর্বাসন করার দাবি করা হয় সমাবেশে।

শেখ হাসিনার পতন-পরবর্তী সব ধরনের হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞেরও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার বিভাগীয় নিরপেক্ষ তদন্তের জোর দাবির পাশাপাশি আহত নাগরিকদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার দাবি তোলেন তারা।

সমাবেশে আয়োজকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী ঋতু সাত্তার। তিনি বলেন, “শহীদদের স্মরণে স্থাপন করতে হবে শহীদ মিনার। নৃশংস রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

“সরকার পতনের পরও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দেশব্যাপী নানা ধর্মীয় সম্প্রদায়, ভিন্নমতের নাগরিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হত্যা-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। হামলা ও লুটপাট হয়েছে ধর্মীয় উপাসনালয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক স্থাপনা, ঐতিহ্যবাহী ভাস্কর্য, সংগ্রহশালা, জাদুঘর, স্মৃতিস্মারকসহ শিল্পী, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিকর্মীদের বাড়িতে।”

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, অগ্নিসংযোগ, হামলা, ধ্বংস ও লুটপাটের সাথে জড়িত রয়েছে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহল; যারা আমাদের এই বিজয়ের সকল অর্জন ম্লান করে দিতে চায়।"

সময়টা শুধু উদযাপনের নয় মন্তব্য করে ঋতু সাত্তার বলেন, "সময়টা রাষ্ট্র পুনর্গঠনের। আমরা বিশ্বাস করি, এই নতুন বাংলাদেশ সকল জাতির, সকল বর্ণের, সকল ধর্মের, সকল লিঙ্গের একটি বৈষম্যহীন জনপদ হয়ে উঠবে। আন্দোলনে আমরা ছাত্রদের ওপর যেমন ভরসা রেখেছি, ঠিক তেমনি রাষ্ট্র পুনর্গঠনে তাদের পাশে থেকে পাহাড় থেকে সমতলে সর্বজনের প্রতিনিধিত্বমূলক বৈষম্যহীন সম্প্রীতির নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।"

এর আগে সূচনা বক্তব্যে কিউরেটর ও লেখক আমিরুল রাজিব বলেন, "আজকে এস এম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী। সুলতান তার সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এই সমাবেশ তাকেই উৎসর্গ করছি। আমরা মানুষের সঙ্গে সমব্যথি হতেই আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা শিল্পী সমাজ কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করি না। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাও চাই।"

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনা করা হয়।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, "এই গণঅভ্যুত্থানে যে বিজয় এসেছে, তাকে ধরে রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন তা নসাৎ না হয়। আমরা স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা থেকে বেরিয়েছি। আবার কোনো স্বৈরশাসনে পড়তে চাই না।"

সঙ্গীতশিল্পীদের পক্ষে বক্তব্য দেন প্রবর রিপন। তিনি বলেন, "আমরা শিল্পীরা মানুষের পাশে থাকতে চাই। আমরা শুধু স্বাধীনতা চাই। মন খুলে গান করতে চাই। আমাদের স্বাধীনতা যদি কেউ হরণ করতে চান, এই শহীদেরা আবার ফিরে আসবে। তারা আমাদের লাঠি হাতে প্রতিবাদ শিখিয়ে গেছে।"

হাতিরঝিলের এম্ফি থিয়েটার মঞ্চটি কনসার্টের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি গানের কপিরাইট রয়্যালিটির জায়গাগুলো নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

থিয়েটারকর্মীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন কাজী রোকসানা রুমা। তিনি বলেন, "এখন যে সরকার এসেছে, তাদের কাছে আমাদেরও কিছু দাবি আছে। আমরা সেই দাবি সরকারকে জানাতে চাই।"

বিভিন্ন জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা এবং নাট্যদলের কার্যালয়ে হামলার নিন্দা জানিয়ে এগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি তোলেন তিনি। সমাবেশে শিল্পীরা সমবেতকণ্ঠে 'মুক্তির মন্দির সোপান তলে', 'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে' গানগুলো পরিবেশন করেন।

সমাবেশে অন্যের মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন, জাকিয়া বারী মম, নূরুল আলম আতিক, সঙ্গীতশিল্পী তানজীর তুহিন, আরমিন মুসা উপস্থিত ছিলেন।

থিয়েটারকর্মীদের সুপারিশ

কাজী রোকসানা রুমা 'বিক্ষুব্ধ থিয়েটকর্মিগণ' এর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সমাবেশ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।

  • সবার আগে যে চাওয়া, তা হোল আমরা আমাদের মঞ্চে ফিরতে চাই। শিল্পকলা একাডেমিগুলো যত দ্রুত খুলে দেওয়া হবে, তত দ্রুত আমরা আমাদের প্রাণের জায়গায় ফিরতে পারব।
    - থিয়েটারকে আধুনিক, সময়োপযোগী ও পেশাদার করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক বিনিময়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দল-মত নির্বিশেষে সৃষ্টিশীলতা এবং তারুণ্যের নিরিখে কমপক্ষে পাঁচটি থিয়েটার প্রযোজনাকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে।
  • - দলীয় বিবেচনায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ পূরণ করা চলবে না। প্রতি পাঁচ বছর পর পর নতুন পরিচালক নিয়োগ করতে হবে এবং থিয়েটার সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে যে কোনো সংগঠন বা প্ল্যাটফর্মে তরুণ কর্মী ও অ্যাকটিভ থিয়েটারগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
    - ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মঞ্চের অভাবে নাট্য প্রদর্শনী সম্ভব হয় না। ঢাকার বিভিন্ন স্থানসহ ঢাকার বাইরে প্রতিটি এলাকায় মঞ্চের ব্যবস্থা করতে হবে।
    - থিয়েটারশিল্পী এবং কলাকুশলীদের দীর্ঘদিনের দাবি হল- মাসিক ভাতা। সে দাবিটি পূরণ করতে হবে।
    - নাটকের জন্য একটি রেপার্টরি টিম গঠন করতে হবে, যেখানে চুক্তিভিত্তিক শিল্পীরা কাজ করবেন এবং এটা হতে হবে অবশ্যই শিল্পকলার তত্ত্বাবধানে।
    - হল বরাদ্দের সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে। তিন মাস কিংবা ছয় মাস আগেও কোনো সংগঠন হল বরাদ্দ চাইতে পারে এবং ১০ বা ১৫ দিন টানা দর্শক সমাদৃত নাটকের প্রদর্শনী যেন করতে পারে এমন ব্যবস্থা করতে হবে।
    - নাট্যদলগুলোর রিহার্সেল রুম সংকট কাটাতে সন্ধ্যার পর স্কুল-কলেজের রুম বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে এবং বিভিন্ন জায়গার শিল্পকলা একাডেমিগুলোতেও রিহার্সেল রুমের ব্যবস্থা করতে হবে।
    - ঢাকা শিল্পকলা একাডেমিতে একটি বহুতল কমপ্লেক্স নির্মাণ করে সেখনে রিহার্সেল রুম, বিভিন্ন দলের জন্য সেট রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ডরমেটরির ব্যবস্থা করতে হবে।
    - মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়