শিরোনাম
◈ বুয়েটে চান্সপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্র শান্ত বিশ্বাসের পাশে তারেক রহমান ◈ আমরা ৫ আগষ্টের পর নতুন একটি শব্দ শুনতে পাচ্ছি মব কালচার : ইশরাক  ◈ কুয়েটে রাজনীতিতে জড়ালে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল ◈ হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ নিজ বাসায় খুন ◈ সিএমএইচে চিকিৎসাধীন মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি লাইফ সাপোর্টে ◈ রাজধানীসহ সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে র‌্যাব ◈ কাফির বাড়ি পোড়ানোয় দুই পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার, জানা গেল তাদের পরিচয় ◈ ফরিদপুরে ছাগলের ঘরে তালাবন্দি বৃদ্ধকে উদ্ধার করলেন নির্বাহী কর্মকর্তা ◈ ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তিপণের ২৫ লাখ দিয়েও ছেলেকে ফেরত পেলনা পিতা ◈ নোয়াখালীতে মসজিদের শৌচাগারে শিশুকে বলৎকার

প্রকাশিত : ০৮ মার্চ, ২০২৫, ১২:২৩ দুপুর
আপডেট : ১০ মার্চ, ২০২৫, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

নির্বাচনের সময় নিয়ে সর্বত্র ধোঁয়াশা, এ মাসেই রোডম্যাপ চায় বিএনপি

এল আর বাদল: নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়কের বক্তব্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা। এদিকে, এ মাসেই নির্বাচনের রোডম্যাপ চান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতদিন ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বললেও বৃহস্পতিবার (৬মার্চ) তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের আগে কম সংস্কারে সম্মত হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। অন্যথায় নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক মানবাধিকার সংস্থা ‘রাইট টু ফ্রিডম’ এর সভাপতি রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং নির্বাহী পরিচালক সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন দানিলোভিচ বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় প্রধান উপদেষ্টা এই কথা বলেন। সূত্র- ডয়েচেভেলে 

আর বুধবার রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের নিরাপত্তা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি এবং এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দল ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানো জরুরি। আমরা যদি এক মাসের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে নির্বাচনের জন্য তৎক্ষণাৎ প্রস্তুত হবো। কিন্তু যদি বেশি সময় লাগে, তাহলে নির্বাচন পেছানো উচিত।

‘নির্বাচন পিছিয়ে দিলে রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হবে‘

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য জাহেদ উর রহমান মনে করেন, উপদেষ্টা এবং নতুন দল এনসিপির আহ্বায়কের কথার মধ্যে একটা যোগ সূত্র আছে। তিনি বলেন, আমরা যদি কনটেক্সটটা দেখি তাহলে তা ঘোলাটে। প্রধান উপদেষ্টা এর আগে বলেছেন যদি ১০টা বিষয়ে সংস্কারে ঐকমত্য হয় তাহলে ১০টা করব। যদি একটার ব্যাপারেও ঐকমত্য না হয় তাহলে কোনো সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন দিয়ে দেব। কিন্তু এখন তার ভাষার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এসছে। তিনি বলছেন, সংস্কার যত দ্রুত শেষ করা যায় তারপর নির্বাচন করব। 

এখন সমাজে ও রাষ্ট্রে আবার এই ধরনের বয়ান তৈরি করা হচ্ছে। তারা বলছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব না। কেউ বলছে, ভারত ড. ইউনূসকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। তাই তিন-চার বছরের মধ্যে নির্বাচন ঠিক হবে না। আর নতুন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলছেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের কারণে ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব হবে না। এই সবগুলো কথার মধ্যে একটা সংযোগ আছে। 

জাহেদ উর রহমান বলেন, এখন এই যে মব জাস্টিস হচ্ছে, গুলশানে মব বাড়ি তল্লাশী করছে পুলিশ থামাচ্ছে না, ওড়না ঠিক করার কথা বলায় এক ব্যক্তিকে আটকের পর তৌহিদী জনতা গিয়ে থানায় তান্ডব চালালো, হিযবুত তাহরীর পূর্ব ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার মিছিল করলো- এর সঙ্গে ডিপ স্টেট সক্রিয়। তারা চায় এই পরিস্থিতি তৈরি করতে যাতে নির্বাচন না হয়।

জাহেদ উর রহমান মনে করেন, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে এখন দ্রুত নির্বাচন দরকা।  যদি সরকার নির্বাচন না করে পিছিয়ে দেয় তাহলে দেশে রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হবে।

‘দলগুলোর কাছে ছক পাঠানো হয়েছে‘

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেছে। এখন মতামত নেয়ার জন্য তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট ছক পাঠিয়েছে। ১৩ মার্চের মধ্যে ওই ছক পূরণ করে মতামত দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। ওই মতামত নিয়ে তারা দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা আসলে কাজটি সহজ ও দ্রুত করার জন্য কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে এক্সেল শিট তৈর করেছি। সেখানে কোন সুপারিশগুলো তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য সেখানে তার টিক চিহ্ন দেবেন। কোনগুলো নিয়ে আলোচনা দরকার সেখানে টিক চিহ্ন দেবেন। আর কোনগুলো গ্রহণযোগ্য নয় তাও জানা যাবে। এগুলো পেলে আমরা একত্রিত করে তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারবো যে কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা দরকার। সেগুলো নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। তারা টিকের বাইরে আলাদাও লিখিত মতামত দিতে পারবেন।

তিনি আরো বলেন, ‘‘এখানে কিছু বিষয় আছে যেগুলো সংস্কার করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কিছু বিষয় আছে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে করতে পারবে। আর কিছু আছে আইনের সংস্কার। সংবিধান সংস্কার করতে হলো তো জাতীয় সংসদ লাগবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘আমরা সংস্কারের কাজ যাতে দ্রুত করা যায় তাই এই পদ্ধতিতে যাচ্ছি। তবে নির্বাচনের সঙ্গে সংস্কারের কোনো বিরোধ নেই। নির্বাচনের জায়গায় নির্বাচন হবে। সংস্কারের জায়গায় সংস্কার হবে। কোনো কোনো সংস্কারের জন্য তো দীর্ঘ সময় লাগবে। সেজন্য তো নির্বাচন আটকে থাকবে না। তবে নির্বাচন কখন হবে সেটা সরকারের বিষয়। আমাদের কমিশনের বিষয় না।

এ মাসেই নির্বাচনের রোডম্যাপ চান বিএনপি নেতা

এই অবস্থায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারেও একই কথা বলেছেন। এখন বলতে শোনা যাচ্ছে নির্বাচন ২০২৬ সালেও যেতে পারে।

 আমাদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। এখন আমরা চাই তিনি জাতির সামনে প্রেস কনফারেন্স করে যেন নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেন। সেটা এই স্বাধীনতার মাসেই চাই। যেন কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।

আর নতুন রাজনৈতিক দলের প্রধান দ্বিতীয় রিপাবলিকের কথা বলছেন। আমাদের প্রথম রিপাবলিক কার্যকর আছে। ফলে ওটার দরকার নাই। গণপরিষদ নির্বাচন কেন প্রয়োজন? তারা সেটা বুঝছেন কিনা জানি না। সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব আমাদেরও আছে সেটা নির্বাচিত সংসদ করবে। তাই সময় নষ্ট না করে দ্রুত নির্বাচন দরকার। তা না হলে দেশে এখন যে পরিস্থতি চলছে তা আরো খারাপ হবে। তাই সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দল যেন মোটিভেটেড হয়ে কোনো বক্তব্য না দেয়। সরকার যেন দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়,‘’ বলেন এই বিএনপি নেতা।

আর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রশ্নমালার ব্যাপারে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওই ধরনের টিক মার্ক ওয়ালা প্রশ্নের আমাদের দরকার নাই। আমাদের নিজস্ব সংস্কার পরিকল্পনা এবং প্রস্তাব আছে। এটা আমরা অনেক আগেই করেছি। সরকারকেও সেটা দিয়েছি।

‘মনে হচ্ছে সরকার কালক্ষেপণ করতে চায়‘

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন, প্রফেসর ইউনূস যে ডিসেম্বরের নির্বাচন থেকে শিফট করার চেষ্টা করছেন সেটা নতুন রাজনৈতিক দলের দিকে চেয়ে। ওই দলটির সঙ্গে তিনি সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। নতুন দলের প্রধানের সঙ্গে তাই তার কথার মিল পাওয়া যায়। 

এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের যে আলোচনা শুরুর কথা ছিলো সেটা না করে তারা এখন আমাদের প্রশ্নপত্র পাঠাচ্ছে। ফলে আমার মনে হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে সরকার কালক্ষেপণ করতে চায়।

নারীর প্রতি সহিংসতা, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি যেভাবে ঘটছে তাতে মনে হচ্ছে সরকার অনেক কিছু সামলাতে পারছে না। এরমধ্যে নির্বাচন পেছানোর দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে আমার মনে হয় নির্বাচন কমিশন চাইলে ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করতে পারে,‘’ বলেন তিনি।

আর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, ‘‘সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দুই-একমাসের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত আছে। রাজনৈতিক দলগুলোও প্রস্তুত আছে। কোনো উদ্দেশ্যমূলক প্রক্রিয়ায় সরকার জড়াবে না আশা করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়