শিরোনাম
◈ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ফের শুরু ◈ সাকিব আল হাসান মার্চে আবার বোলিং পরীক্ষা দেবেন  ◈ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক হয়েও দুবাইতে খেলতে যাওয়ায় ঠাট্টা ও বিদ্রুপের শিকার পাকিস্তান ◈ শেখ হাসিনাকে ৩ বছর আগেই সতর্ক করেছিলাম, আমার কথা রাখলে এভাবে পালাতে হতো না: কর্ণেল অলি ◈ সাউন্ড গ্রেনেড-জলকামান দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হলো আউটসোর্সিংকর্মীদের ◈ পাকিস্তানে স্টেডিয়াম হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নামে ◈ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তান মহারণ রোববার ◈ 'ভারত কিছু একটা করবে' এই ভরসায় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা ◈ চোরাই স্বর্ণালংকার উদ্ধারসহ গ্রেফতার ৩  ◈ নেতা–কর্মীদের ‘বিশেষ’ তালিকা করছে পুলিশ. অনেকের জামিনে সরকারের উচ্চমহলে উদ্বেগ

প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:০৬ দুপুর
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

রাতের ভোটের কারিগরদের বিষয়ে হার্ডলাইনে সরকার

মহসিন কবির: তিনটি জাতীয় নির্বাচনে রাতের ভোটের কারিগরদের বিষয়ে হার্ডলাইনে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন তিনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

তিন নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) সব কর্মকর্তার ভূমিকাই খতিয়ে দেখছে সরকার। ভোট কারচুপিতে পুলিশের ভূমিকা কী ছিল, সেসব আলোচনাও সামনে চলে এসেছে।

জানা গেছে, রাতের ভোটের কারিগরদের তালিকায় সবচেয়ে বেশি ৬৭৭ জন পুলিশ সদস্য। জেলা প্রশাসক ও ইউএন রয়েছেন ৩৬৪ জন। রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবদের নামও। এর মধ্যে ১৮৭ পুলিশ কর্মকর্তা আত্মগোপনে রয়েছেন। ১৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন আমেরিকা, লন্ডন, দুবাই ও ভারতে।

১ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০১ জন পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ১ জন ডিআইজি, ৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ২ জন পুলিশ সুপার, ১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৫ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ৫ জন পুলিশ পরিদর্শক, ১৪ জন এসআই ও সার্জেন্ট ১৪ জন, ৯ জন এএসআই, ৭ জন নায়েক এবং ১৩৬ জন কনস্টেবল।

রাতের ভোট হিসেবে খ্যাত ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ডিসিদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে তাদের একটা বড় অংশকেই বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। চাকরির বয়সকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ২০১৪ সালে দায়িত্ব পালনকারী ডিসিদের মধ্য থেকে ২২ জনকে গতকাল বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডিসি। পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বপালনকারী বিভাগীয় কমিশনার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারসহ (ইউএনও) নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

একটি নির্বাচন প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে রাষ্ট্রের অনেক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখে। ডিসি তথা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব সর্বাধিক। তার জেলায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা এবং অনিয়ম হলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সর্বোপরি দায়িত্ব তার। তাকে সাহায্য করবেন অন্যরা। 

সহকারী রিটার্নিং অফিসারদেরও দায়িত্ব আছে। নির্বাচনী এলাকার তদারকি করেন তিনি। ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব প্রিসাইডিং অফিসারের কাঁধে। আবার এসপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও দায়িত্ব আছে নানা স্তরে। কার কী কাজ, তা ভাগ করা আছে। কোথাও অনিয়ম হলে কী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নিজে রোধ করতে না পারলে কাকে জানাতে হবে, সবই বলা আছে আইনে। 

গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমালোচনা হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। এরপর অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনেই ভোট কারচুপির মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করার অভিযোগ আসে। পরাজিত প্রার্থী ও দল এমন অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই তা অস্বীকার করা হয়। নির্বাচনে কারচুপি হয় কী করে এবং কারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত এ বিষয়টি থাকে উপেক্ষিত। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাচনে এহেন কারচুপির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্ব পায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, বিগত তিনটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত) দায়িত্বে থাকা সাবেক জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়েছে, তাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এবং বাকিদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে চাকরির বয়স ইতিমধ্যে ২৫ বছর হওয়া ২২ জন সাবেক ডিসিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আরও জানান, সম্প্রতি জনপ্রশাসনসংক্রান্ত একটি কমিটি হয়েছে সেখানে চারজন উপদেষ্টা আছেন। কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবও আছেন। আর মোখলেস উর রহমান নিজে সাচিবিক দায়িত্বে আছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে। তিনি বলেন, এ কমিটিতে কয়েকটি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তা (ডিসি) ছিলেন, তারা নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৪৩ জনকে ওএসডি করা হয়েছে। তাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকবে, তাদের বিষয়গুলো দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে।

সাবেক ডিসিদের বাইরেও অন্য কর্মকর্তাদের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, যাদের নামে দুর্নীতি আছে বা যারা আইনের বাইরে গিয়ে অতিরঞ্জন কাজগুলো করেছেন, তারা চাকরিবিধি অনুযায়ী সাজা পাবেন।

জানা গেছে, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে গতকাল। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও আছে। 

এ ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান এবং ওএসডি হওয়া সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানকে গতকাল অবসরে পাঠানো হয়েছে। বিতর্কিত নির্বাচনে তারা ডিসির দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময়ে ডিসি ছিলেন এবং গতকাল অবসরে পাঠানোদের মধ্যে আরও রয়েছেন- অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা, মো. হামিদুল হক, এস এম আলম, আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, অতিরিক্ত সচিব এনামুল হাবীব, অতিরিক্ত সচিব তন্ময় দাস, শওকত আলী, মো. তোফায়েল ইসলাম, ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, ফয়েজ আহম্মদ, মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, রাব্বী মিয়া, উম্মে সালমা তানজিয়া, আব্দুল আউয়াল, কামরুন নাহার সিদ্দীকা ও মো. মাসুদ করিম। এ ছাড়া যুগ্ম সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও উপসচিব আহমেদ কবির প্রমুখকে জনস্বার্থে গতকাল অবসরে পাঠানো হয়।

এর আগে বুধবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে কর্মরত যুগ্ম সচিব ও সমপর্যায়ের পদে থাকা প্রশাসনের ৩৩ কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করেছে সরকার। তারা ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের দায়িত্বপালন করেছিলেন।

সদ্য সমাপ্ত ডিসি সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছিলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণকে অত্যাচার, নিপীড়ন করার জন্য এবং তাদের অপকর্ম জায়েজ করার জন্য ডিসিদের ব্যবহার করেছে। তিনি আরও বলেন, আশা করব ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, প্রশাসন ক্যাডারের যে অসীম সম্ভাবনাময় শক্তি, এটিকে যেন জনগণের নিপীড়নের জন্য ব্যবহার করার কাজে না লাগিয়ে আমাদের সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, সেভাবে জনগণের সেবা করার কাজে যেন লাগানো হয়।

২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাদেরকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার পাশাপাশি অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে এ তথ্য জানান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

তিনি তার পোস্টে লেখেন, ‘২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে ৬৪ জেলার দায়িত্বে থাকা এসপিদেরও ওএসডি/বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে।’

গত ২২ জানুয়ারি দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধমূলক অসদাচরণ, জাল-জালিয়াতি, দিনের ভোট রাতে করা এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচনের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। পাঁচ সদস্যের একটি টিম এ-সংক্রান্ত কাজ করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়