শিরোনাম
◈ ‘আপনার মতো ব্যক্তিদের থেকে আমরা শিখি’—ড. ইউনূসকে আমিরাতের মন্ত্রী ◈ ১৩ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেখ পরিবারের নাম বাদ দিয়ে গেজেট জারি ◈ হাসিনাকে ফেরাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিল্লিকে পাঠিয়েছে ঢাকা (ভিডিও) ◈ সব ধরনের শিল্পেই বাড়ছে গ্যাসের দাম! ◈ ৯৯৯ সেবা ইংরেজি ভাষায়ও পাওয়া যাবে ◈ শিক্ষকদের ওপর আজও পুলিশের জলকামান-লাঠিচার্জ, আন্দোলন থেকে ১৪ জন আটক (ভিডিও) ◈ আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৩০০ প্রবাসীর চিঠি ◈ আয়নাঘরে নির্যাতনে জড়িতদের চাকুরিচ্যুত করার আহবান চিফ প্রসিকিউটরের (ভিডিও) ◈ বিশেষ ‘ব্লক রেইড’  বিভিন্ন অপরাধে জড়িত  গ্রেফতার ১৬  ◈ জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ বিএনপির (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:০৯ দুপুর
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

সরকার কি চাপে পড়ে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে?

সরকার কি চাপে পড়ে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে?

এল আর বাদল : ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আশ্বাস পাওয়ার পরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশব্যাপী সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। তবে ভিন্ন অবস্থানে জামায়াতে ইসলামী। তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে চায় না।

তবে সারাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের স্থাপনায় দুদিন ধরে ভাঙচুরের ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। সেই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আশ্বাস পাওয়ার কথা জানান তারা। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এতদিন অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় নিয়ে নানা রকম বক্তব্য দেওয়া হচ্ছিল। এখন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হলো। চাপের কারণেই কি সরকারকে আশ্বাস দিতে হলো, এ নিয়ে আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

সরকারের আশ্বাসের পরও বিএনপি মাঠের কর্মসূচি নিয়ে নির্বাচনের চাপ অব্যাহত রাখতে চাইছে। তাহলে তারা সরকারের আশ্বাসে কতটা ভরসা বা আস্থা রাখতে পারছে, এমন প্রশ্নেও আলোচনা রয়েছে রাজনীতিতে। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা বিশ্বাস রাখতে চান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করছেন ভিন্নভাবে। বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, যদি নির্বাচন সম্পর্কিত ন্যূনতম সংস্কার করা হয়, এরপরও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা বেশ কঠিন হবে।

সরকার কি চাপে পড়েছে?

শুরু থেকেই চাপে রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কারণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ সবকিছুই ভেঙে পড়ে। সরকার ছয় মাসেও সামলাতে পারেনি। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের দূর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা থামাতে না পারায় সঙ্কট আরও বেড়েছে। ফলে সমাজে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মাঝে দুদিন ধরে দেশজুড়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় সরকার ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটের মুখোমুখি হয়। গত পাঁচই ফেব্রুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস যখন পুরো হয়, সেদিন ঢাকায় ধানম-ির ৩২ নম্বরে ঘোষণা দিয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।

এরপর সারাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বাড়িঘর বা স্থাপনায় ভাঙচুর করা হয়। দুদিন ধরে ভাঙচুর চললেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিস্ক্রিয় ছিল। ভাঙচুরের ঘটনার দ্বিতীয় দিনে এসে বিবৃতি দিয়ে সরকারের দিক থেকে দায় এড়ানোর চেষ্টা ছিল বলে রাজনীতিকরাই বলছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন দলের নেতারা বলেছেন, সরকার সেই 'অরাজকতা বা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দায় এড়াতে পারে না।

ভাঙচুরের ঘটনার পটভূমিতে সরকার 'অপরেশন ডেভিল হান্ট' নাম দিয়ে সারাদেশে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযানকে দলগুলো সমর্থন করলেও তারা মনে করছে, দুদিনের অরাজক পরিস্থিতি সামলাতে সরকার কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে। এখন মুখরক্ষায় এ অভিযান চালানো হচ্ছে।

দেশব্যাপী দুই দিনের সেই পরিস্থিতি সরকারকে বাড়তি চাপে ফেলেছে। বিভিন্ন দলের নেতারা মনে করেন, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির এ ধরনের পরিস্থিতি আরও ঘটলে তা সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতা সরকারের নেই। ফলে নিরাপদে বেরিয়ে যেতে হলে নির্বাচনের দিকে এগোনো ছাড়া সরকারের জন্য অন্য কোনো পথ নেই।

বিএনপির মিত্রদের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, পরিস্থিতির কারণে সরকার নিজেরাই একটা চাপ অনুভব করছে। বিএনপি এবং তারা অন্য দলগুলোও নির্বাচনের জন্য চাপ বাড়াচ্ছেন। আর এমন পটভূমিতেই নির্বাচনের একটা সময়ের কথা সরকারকে বলতে হচ্ছে। তবে সরকার এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ দেয়নি।

আশ্বাসে কতটা ভরসা বিএনপির?

দলটির নেতারা বলছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আশ্বাসে ভরসা বা বিশ্বাস রাখতে চান। কিন্তু বিএনপিতে সন্দেহও আছে। সেকারণে নির্বাচনের চাপ অব্যাহত রাখতে তারা মাঠের কর্মসূচি নিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যে নতুন দল গঠন করছে, এর পেছনে সরকারের একটা অংশের সমর্থন রয়েছে বলে বিএনপি নেতাদের ধারণা। আর সেকারণে তারা মনে করেন, সরকারের ভেতরে কারও কারও নির্বাচন প্রলম্বিত করার চিন্তা থাকতে পারে। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের সময় নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না বিএনপি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, নির্বাচিত সরকার এলে দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যাসহ সব সঙ্কটের সমাধান সম্ভব। সেজন্য তারা প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছেন। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির চাপের কারণে সরকারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব আরও বাড়বে কি না- এই প্রশ্নও আসছে।

তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, তারা সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি কোনো অবস্থানে যেতে চান না। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে, সরকারের এ আশ্বাসে তারা বিশ্বাস রাখতে চান। নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির অবস্থানের প্রতি সমর্থন রয়েছে দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোর।

তবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামপন্থী কিছু দলের অবস্থান ভিন্ন। আগে এই দলগুলো সার্বিকভাবে সংস্কারের পর নির্বাচন করার পক্ষে ছিল। সে অবস্থান থেকে সরে এসে তারা এখন নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ভোট চাইছে। কিন্তু এখন বিএনপির সঙ্গে তাদের ভিন্নমত হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবিসি বাংলাকে বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা প্রয়োজন। এটাই তাদের দলীয় অবস্থান।
আর বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন মানবে না, দলের এই অবস্থান তারা অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়ে দিয়েছে। সরকার দিক থেকে অবশ্য এখনও অবস্থান স্পষ্ট করা হয়নি। আমার বাংলাদেশ পার্টি বা এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সব দলের মতামত বিবেচনায় নিয়েই সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়