মহসিন কবির: চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। বিএনপির নেতারা বলছেন, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে গেছে, তাই সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। অন্যপার্টির নেতা বলছেন তারাহুড়া করে নির্বাচন করা ঠিক হবে না।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির এ মনোভাবের কথা তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি, এ বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এ কারণে আমরা সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মনে করি, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে এবং গভর্ন্যান্সের মধ্যে মোটামুটি একটা স্ট্যাবিলিটি (স্থিতিশীলতা) এসেছে। আগামীকাল বুধবার সংস্কার-সংক্রান্ত কমিশনের প্রতিবেদন এসে যাবে। সুতরাং মনে হয় না আরও বিলম্বিত করার কোনো কারণ আছে। যত বিলম্ব হচ্ছে, ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে চলতি বছরের ৫ আগস্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। রোববার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এই আহ্বান জানান।
নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য তিন থেকে চার মাসের বেশি সময় প্রয়োজন নেই দাবি করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাব... যদি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিহাসে আরও বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান, তাহলে জুলাই–আগস্ট–এর ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থানকে সমুন্নত রাখতে ৫ আগস্টেই আপনারা সংসদ নির্বাচন করতে পারেন। তাহলে জাতি আপনাদের স্মরণ রাখবে এবং দিবসটিকেও স্মরণীয় করে রাখতে পারবেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। যদি সংস্কার লাগে, সংস্কার করতে হবে। কিন্তু সংস্কার–সংস্কার খেলা যেন আমরা না করি। সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন সেই সংস্কারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে।’
বিএনপি কেন জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, “সরকার চাইলে আরও আগে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। আমরা সরকারকে বেশ কিছুটা সময় দিচ্ছি। আর নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি তো নির্বাচন কমিশনের। এখানে সরকারের কোনো বিষয়ও নেই। আমরা দেখছি দেশের আইন-শৃঙ্খলা, মানুষের নিরাপত্তার ব্যাপক অবনতি হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা চাই এসব সমস্যা দূর করতে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।”
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন মনে করে, কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ছাড়া তড়িঘড়ি নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে আত্মঘাতী। এর মধ্য দিয়ে আগের ফ্যাসিবাদী শাসন ফেরার পথ সুগম করবে। জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, তারাও দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায়। কিন্তু সেটা হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবে না। আবার রাষ্ট্রকাঠামোর পুরোপুরি সংস্কার করা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, এটাও আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু নির্বাচনটা নিরপেক্ষ করতে যতটুকু আইনকানুন সংস্কার সম্ভব, সেটা করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই। আমরা ১৫ বছর অপেক্ষা করেছি। এখন তিন-পাঁচ মাস বেশি লাগলেও জাতি কাঙ্ক্ষিত সংস্কার শেষে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।’
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিএনপি তার জায়গা থেকে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। তবে আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার এবং নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরির জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া।’
জুলাই-আগস্টের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিএনপির দাবি সম্পর্কে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, যদি নির্বাচন কমিশন, দুদকসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার সম্পন্ন হয়। সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই। কিন্তু সেটা অবশ্যই হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন। এ মুহূর্তে গণপরিষদ নির্বাচন হচ্ছে নির্বাচনের একমাত্র যৌক্তিক পন্থা।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেছেন, “নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের আন্তরিক ইচ্ছার ওপর। তারা চাইলে যেকোনো সময় একটি নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। আমরা রাজনৈতিকদলগুলো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। ভোটাররাও ভোট দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। আমরা মনে করি ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে একটি নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।”
৪ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) রূপা হককে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সীমার কথা আবারও ব্যক্ত বলেছেন। একটি ডিসেম্বর ২০২৫ বা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি।
আপনার মতামত লিখুন :