মহসিন কবির: দেশে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি, জামায়াত, সিপিবি, বাম জোটসহ অন্তত ৪৮টি রাজনৈতিক দল। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রার শুরুতে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানালেও এখন দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চাইছে।
রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো নেতা নিয়মিত বক্তব্য দিচ্ছেন।
তাবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম শনিবার বলেছেন, সরকার ডিসেম্বরের দিকে ইলেকশন দেওয়ার চেষ্টা করবে। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে জনগণ আরও সংস্কার চাইলে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা এখানে দায়িত্ব পালনে এসেছি। কাজেই জনগণ যদি চায় আমরা থাকব। যদি না চায় আমরা চলে যাব। আর আমাদের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ অলরেডি বলে দিয়েছেন। যে আমরা ডিসেম্বরের দিকে ইলেকশনটা দেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি আমরা সে অনুযায়ী আগাব।
ঢাকায় সম্প্রতি বিএনপির নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে চীন ও সিঙ্গাপুরের কূটনীতিকদের। এ সময়ও যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় নিয়ে তাদের আলাপ হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। জানিয়েছে, তারা প্রত্যাশা করছে, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে শুধু দেশের রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই নয়, বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে দ্রুত জাতীয় নির্র্বাচন অনুষ্ঠানের বার্তা উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দিন যত যাবে, দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের চাপ ততই বাড়তে থাকবে। শুধু রাজনৈতিক দলের তরফেই নয়, বিশ্বসম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় ইংরেজি ভাষার টেলিভিশন উইঅন নিউজকে (ওয়ার্ল্ড ইন ওয়ান নিউজ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেন, আমেরিকা ও ভারত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়। এতে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন হয়ে গেলে দেশটি তার পরবর্তী অধ্যায় শুরু করতে পারবে। আমেরিকা ও ভারত একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়া দেখতে চায়।
অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দ্রুত নির্বাচন আমাদের জন্য ভালো হবে না। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এরপর নির্বাচন। ডিসেম্বর অথবা আগামী ফেব্রুয়ারির আগে বেসিক সংস্কারগুলো হবে না।
ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের রসায়ন প্রসঙ্গে ড. দিলারা বলেন, অনেকে মনে করেন এখনও আমেরিকা ও ভারত পৃথক দৃষ্টিতে বাংলাদেশের দিকে তাকায়। আসলে তা নয়। যতদিন পর্যন্ত আমেরিকার সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব থাকবে, ততদিন আমেরিকা ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় একই সুরে কথা বলবে। ভারত ও আমেরিকা দ্রুত নির্বাচন চায়। চাইতেই পারে। কিন্তু এর আগে শেখ হাসিনা যে তিনটা নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) করল, সেগুলো তো নির্বাচনই হয়নি। তখন তো তারা কিছু বলেনি। আসলে ভারত যেটা চায় সেটাই আমেরিকা এখানে প্রয়োগের চেষ্টা করছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ভারত দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার কে? এসব হলো ভারতের দাদাগিরি। ভারত এখন নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে কারণ তারা আগের অবস্থাকে ফেরত আনতে চায়। একইভাবে চীন যতদিন আমেরিকার শত্রু, ততদিন তারাও ভারতের সুরে কথা বলবে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী সতর্ক করে বলেছেন, পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে এসো না। কারও জন্যই ফল ভালো হবে না। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার এলে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে কথা হওয়া উচিত।
১৩ জানুয়ারি নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকের সেনা সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আপনার মতামত লিখুন :