মহসিন কবির: দিন যত যাচ্ছে, নির্বাচনের দাবি ততই জোরালো হচ্ছে। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে আসা বিএনপি এ বিষয়ে আর বেশি দিন ধৈর্য না ধরার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে।
বিএনপি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, দলটির তরফ থেকে এরই মধ্যে স্পষ্ট করেই নির্বাচনী রোডম্যাপ চাওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ দেওয়া না হলে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে সোচ্চার হবে দলটি।
সরকারের তরফে নির্বাচনের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। সরকারের কেউ কেউ ইঙ্গিত দিচ্ছেন, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আমাদের এই সরকার খুবই স্বল্পকালীন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আগামী বছরই আমরা হয়তো একটি রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেখব। জানি না কী হবে। আবার কেউ বলছেন, প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। তাই নির্বাচন নিয়ে সরকার কী ভাবছে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তা স্পষ্ট নয়।
বিএনপি বলেছে, সংস্কার একটি দীর্ঘ ও চলমান প্রক্রিয়া। রাষ্ট্র সংস্কারে সরকার যে ১০টি কমিশন করেছে, সেগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে কবে নাগাদ সংস্কার কার্যক্রম শেষ হবে, সেটাও স্পষ্ট নয়। অবশ্য বিএনপির তরফে এরই মধ্যে সরকারকে নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাধান্য দিয়ে সংস্কার কার্যক্রম চালানোর জন্য বলা হয়েছে। দলটির নেতারা বলেছেন, সব সংস্কার কার্যক্রম সমাপ্ত করতে গেলে এই সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে হবে। এটা সম্ভব নয়। এতে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে এবং নির্বাচন বিলম্বিত হবে। তাই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি জনগণের মধ্যেও আস্থা তৈরি হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন চাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল বলেন, ওই পর্যন্ত যেতে হলে সবাইকে ভূমিকা নিতে হবে। বিএনপি দেশে দ্রুত স্থিতিশীল অবস্থা দেখতে চায়। তিনি বলেন, আমরা দুই বছর আগে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ২৭ দফা দিয়েছিলাম। আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার বিদায় নিচ্ছে। তবে আমাদের জানা ছিল না, কবে স্বৈরাচারের বিদায় হবে। বর্তমানে ৩১ দফা অর্জন কম-বেশি তখনই করতে পারব, যখন জনগণের সমর্থন নিয়ে আপনারা সরকার গঠন করতে পারবেন। এ জন্য ৩১ দফাকে জনগণের দ্বারে দ্বারে নিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ দিলে ষড়যন্ত্র পাত্তা পাবে না। তিনি বলেন, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে হবে। যদি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়, তাহলে জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচন বিলম্বিত হোক, তিনি তা চান না। এমনটি ঘটলে সরকার দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। যুক্তিসঙ্গতভাবে বোঝা যাবে, আগে সংস্কার হবে, পরে নির্বাচন। তবে সংস্কার পর্যন্ত নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার প্রয়োজন নেই।
রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে একের পর এক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সাময়িক হিসেবেই সবাই বিবেচনা করছে। নির্বাচন দিতে দেরি হলে বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা বাড়বে এবং বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থনও কমে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, তা নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোরও আগ্রহ রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক সরকারকে দায়িত্ব দেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
আপনার মতামত লিখুন :