ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ‘পর্দা’ না করায় যৌন হেনস্তা করা কর্মচারী মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। তদন্তের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এদিকে হেনস্তাকারীর জামিনে ক্ষোভ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশটিরও অধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দিয়েছে। হেনস্তাকারীকে চাকরিতে বহাল করলে ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। খবর: আজকের পত্রিকা।
আজ শুক্রবার (৭ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. রফিকুল ইসলাম ছুটিতে পাঠানোর এবং তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের উদ্বেগকে বিবেচনায় রেখে হেনস্তাকারীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বাকি দুজন হলেন সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান। কমিটি আগামী পরশু (রোববার) এ নিয়ে বসবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করবে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট অভিযুক্ত কর্মচারী মোস্তফা আসিফ অর্ণবের ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
তদন্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘তদন্ত কমিটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করবে। ভুক্তভোগী, অভিযুক্ত সবার সঙ্গে কথা বলবে এবং প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট অভিযুক্তের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ব্যক্তি চাকরিতে থাকতে পারবে না।’
এদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এবং চাকরিতে বহাল করলে ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০টিরও অধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দিয়েছেন। ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে এবং অভিযুক্তের পক্ষে নানাভাবে মব উসকানোর মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা এ বিবৃতি দেন।
বিবৃতি তাঁরা বলেন, ‘হেনস্তার পক্ষে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ ও স্বীকারোক্তি থাকায় হেনস্তাকারীকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকে হেনস্তাকারীকে কোনোভাবে চাকরিতে বহাল রাখার চেষ্টা করা হয়, তাহলে অবিলম্বে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করবেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।’
মামলা প্রত্যাহার নিয়ে বিতর্ক
বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দেন। পরে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মামলা প্রত্যাহার করেছেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রক্টর চাপ প্রয়োগ করেছে বলে অনেক শিক্ষার্থীকে অভিযোগ তুলতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার প্রক্টরিয়াল বডি থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি তথ্য ছড়িয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার মামলা প্রত্যাহার করতে অনুরোধ বা চাপ প্রয়োগ করেছে—এ তথ্যটি অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ছড়ানো হচ্ছে।
মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় মামলা প্রত্যাহার করেছেন। এ ক্ষেত্রে কেউ তাঁকে জোর করেননি।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, ‘মামলা এখনো তদন্তাধীন। প্রত্যাহার করলেও তা আদালতের এখতিয়ারে রয়েছে।’
মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে শুক্রবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাঁর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাসে বলেন, ‘আমাকে যারা বারবার বলছেন, কেন মামলা তুলে নিয়েছি! তাদের জন্য বলছি, পুলিশ আমার তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আমার ব্যক্তিগত তথ্য তাঁরা মবের মুখে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে। যা আমার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আবার একদল চরমপন্থী লোক আমাকে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে সারাক্ষণ বিরক্ত করছিল এবং ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছিল। এই মামলা তুলে নেওয়ার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো হাত নেই। তারা আমাকে জোর করেনি বরং বিভাগের শিক্ষক এবং প্রক্টরিয়াল টিম আমাকে সহায়তা করেছে।’