মধ্যরাতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকার জুলাই আন্দোলন দমনে সকল স্বৈরাচারী অস্ত্র ব্যবহার করেও ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের ছয় মাস পর কুয়েট প্রশাসন আবারো শিক্ষার্থীদের ওপর ওই একই স্বৈরাচারী অস্ত্র ব্যবহার করে ব্যর্থ হবেই হবে। ‘কুয়েটের পাঁচ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ঐক্যবদ্ধ আছি’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কুয়েটের শিক্ষার্থীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা আন্দোলন আমরা কেউ ব্যর্থ হতে দেব না। আমাদের ভাইয়ের রক্তের হিসাব আমরা নিয়েই ছাড়ব’।
বিবৃতির বাকী অংশটুকু হুবহু দেওয়া হলো : ‘কুয়েট প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য ও নৈতিক দাবির কাছে পরাজিত হয়ে গতকাল (২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) ১৫ ঘণ্টার মধ্যে হল ভ্যাকান্ট করার নোটিশ দিয়েছে। আমরা সেই ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই বলে এসেছি, আমাদের হল ভ্যাকান্ট করা যাবে না। তাই আমরা হল ভ্যাকান্ট-এর নোটিশ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি।
তবে, কুয়েট প্রশাসন হল ভ্যাকান্ট করার জন্য আজকে দুপুর থেকে আমাদের হলের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে, সকল প্রকার পানির লাইন অফ করে দিয়েছে।
আমরা আশঙ্কা করছি। যেকোনো সময়, বিদ্যুতের লাইনও বন্ধ করে দেবে। অপরদিকে, কুয়েটের রেজিস্ট্রার, শিক্ষকবৃন্দ, মাসুদ স্যার একের পর এক মিথ্যাচার করে যাচ্ছে মিডিয়ার সামনে।
কুয়েট প্রশাসনের সার্বিক আচরণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জুলাই বিপ্লবে পতিত স্বৈরাচারের কথা।
স্বৈরাচার যেমন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য ছাত্র-জনতার রক্ত নিয়ে খেলা করতে পিছপা হয়নি, তেমনই আজকে কুয়েট প্রশাসন আমাদের দেড় শতাধিক ভাইয়ের রক্তের সঙ্গে তামাশা করছে। পতিত স্বৈরাচারের মতো, আন্দোলন দমনের জন্য হল ভ্যাকান্ট করছে, তা না মানলে ওয়াইফাই, পানি বন্ধ করে অমানবিক আচরণ করছে।
কুয়েট প্রশাসন একের পর এক মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। কুয়েটের রেজিস্ট্রার বলেছেন, ছাত্রদের বাঁচাতে গিয়ে ২০-২৫ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, আমাদের বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন শুধুমাত্র ২ জন শিক্ষক, প্রফেসর ডক্টর মো. আবদুল্লাহ ইলিয়াস স্যার এবং প্রফেসর ড. শেখ শরীফুল আলম স্যার।
স্যারদের সঙ্গে আমরা সমব্যাথী। কিন্তু রেজিস্ট্রারের কথা মতো যদি আজকে এত পরিমাণ শিক্ষকদের আমরা ১৮ তারিখ হামলার সময় পাশে পেতাম, তাহলে হয়তো আমাদের এত রক্ত ঝরত না। কুযেটের রেজিস্ট্রারের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য, পতিত স্বৈরাচারের একটি ব্যর্থ কৌশল ছাড়া আর কিছুই না।
আপনারা গতকাল দেখেছেন, কিভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের ‘তোমার রেজাল্ট নেওয়া লাগবে না!’ বলে রেজাল্ট নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে, কিভাবে আমাদের ‘তোমার আব্বা কী করে’ বলে পরিবার তুলে শাসানো হয়েছে, কিভাবে ‘শিক্ষকদের সঙ্গে বেয়াদবি’-এর মোড়কে আমাদের দেড় শতাধিক ভাইয়ের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে ন্যায্য আন্দোলনকে পিষে ফেলার স্বৈরাচারী অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।’
মধ্যরাতে অজ্ঞাত স্থান থেকে সামাজিক মাধ্যমে এ বিবৃতি দেওয়া হয়। উৎস: কালের কণ্ঠ।