নির্বাচনের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেছেন, ‘আমরা বলি না যে— নির্বাচন হবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিচার শুরু এবং কিছু প্রক্রিয়া শুরু পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনও নির্বাচন হবে না। কারণ, আওয়ামী লীগ ও খুনি হাসিনার বিষয়ে যদি কোনও সুরাহা বাংলাদেশে না করেই আমরা যদি কোনও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করি, সেই নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে বাংলাদেশে হবে না।’
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক) আয়োজিত ‘জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদন: জুলাই হত্যাকাণ্ডের ব্যবচ্ছেদ, দায় ও বিচার’ শীর্ষক সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আওয়ামী লীগের সামনে বিচার ছাড়া কোনও উপায় নেই। আমরা আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের প্রথম কাজ আওয়ামী লীগকে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি আওয়ামী লীগের বিচারের প্রশ্নে কোনও ক্ষেত্রে ধীরগতি বা নীরবতা অবলম্বন করেন, তাহলে হয়তো জনগণ রাজপথে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে। সেই পরিস্থিতির দিকে যদি বাংলাদেশ যায়, তাহলে আমরা মনে করি দেশে একটি গৃহযুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন দেশের মানুষের সামনে নতুন একটি সংকট সৃষ্টি হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ওনাদের চামড়া গন্ডারের চামড়ার মতো। ওনাদের কোনও কিছু বলা হলে, সেটি ছয় মাস পরে দেখা যায়। যাদের চামড়া গন্ডারের মতো, তাদের বলবো— চামড়াগুলো একটু পাতলা করুন। আপনারা যদি আওয়ামী লীগের বিচার প্রশ্নে ধীরগতি দেখান, তাহলে মানুষ আবার রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। আপনাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ সরকারে বসিয়েছে। আপনারা যদি সচিবালয় বা অফিসগুলোকে কোনো দামি রিসোর্ট বা হোটেল মনে করেন, তাহলে ভুল করবেন। মানুষ এখনও রাজপথে আছে, বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় আছে। আমরা অনক ক্ষেত্রে মানুষকে নিবৃত করে রাখছি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের উদ্দেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘উনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে অনেক বড় বড় কথা বলতেন। কিন্তু যখনই তিনি চেয়ারে বসে গেছেন, উনার চেয়ারের গদি অনেক মোটা হয়ে গেছে। সুতরাং, যারা আইন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল জায়গায় আছেন, তাদের বলবো— জনতা আপনাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেই দায়িত্ব পালনে আপনারা বাধ্য। এখানে অবাধ্য হওয়ার সুযোগ নেই। যদি মনে করেন অবাধ্য হবেন, কোনো কানাগলি দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করবেন, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতা করে পরবর্তী সরকারে আসার পথ পরিষ্কার করবেন, এই সুযোগ আপনাদের বাংলাদেশ আর দেবে না। কারণ, আপনারা যে চেয়ারে বসেছেন সেটা শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে বসেছেন।’
আন্দোলনকারীরা এখনও ধৈর্য্য ধারণ করে আছে বলেও জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, ‘কে কোথায় কী করছেন, সেসব বিষয়ে আমরা অবগত। আমরা যখন আবার মাঠে নামবো, তখন আর আপনাদের দ্বিতীয় সুযোগ দিবো না। আমরা এই সরকার থেকে আওয়ামী লীগের বিচার বুঝে নিবো। এই সরকারের সামনে আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই।’
অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দাবি করছে, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। আমরাও কেউ দাবি করছি না, প্রমাণ হয়েছে। এ জন্যই আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা বলছি। ৫ তারিখের পরেও মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনাও এখানে এসেছে। এগুলো নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, ‘যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাকে আমি ঝুলিয়ে দেবো; তা হবে না। আমার অনেক রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে, কিন্তু আন্তর্জাতিক মান অনুসারে এগোতে চাই, নতুন সমাজ গড়তে চাই। তাহলে আমাদের প্রশ্ন করতে হবে, আমরা এভাবে চলবো কিনা। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ, আহতদের পাশে দাঁড়ানো। এখন বিভেদ আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘যারা এত গুম, খুন ও মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়াসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করলো, তারা যেন কোনোভাবে পার না পায়। সরকারকে এই জায়গায় কাজ করতে হবে। যেখানে জাতিসংঘের রিপোর্টে সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনার নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, সেখানে এখনও সরকার ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার বিচার বিষয়ে আলাপ শুরু করতে পারেনি। মানুষের যে দাবি, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিচার করার জন্য দেশের সমস্ত অঙ্গগুলোকে কাজে লাগাতে হবে পাশাপাশি জাতিসংঘের সহায়তা নিতে হবে।’
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা, অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর প্রমুখ। উৎস: বাংলাট্রিবিউন ও এখন টিভি।