শিরোনাম
◈ নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু ◈ এই সরকার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের সামনে দুটি পথ : ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন ◈ পুকুর থেকে মাছ চুরি করে কোটিপতি! ◈ কেউ সামরিক ঘাঁটি করতে পারবে না সেন্ট মার্টিনে: রিজওয়ানা হাসান ◈ দেশে চালু করা হচ্ছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ◈ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঢাকা সিটি কলেজে, অনিশ্চয়তায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী ◈ মহিষের বীর্য বিক্রি করে মাসে আয় ৭ লাখ টাকা! ◈ আজিমপুরে দিনেদুপুরে ডাকাতি করতে ঢুকে মালামালের সঙ্গে শিশুকেও নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা ◈ দুই ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতলো ইংল্যান্ড ◈ শিল্পাঞ্চলসমূহে সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে প্রতারণা

প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:৩৪ বিকাল
আপডেট : ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঢাকা সিটি কলেজে, অনিশ্চয়তায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী

অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষাজীবন বিঘ্নিত হচ্ছে ঢাকা সিটি কলেজের প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থীর। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও হতাশায় পড়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, আগের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বেদার উদ্দিনকে জোর করে পদত্যাগ করিয়ে অবৈধভাবে পদ দখল করেন অধ্যাপক মো. নেয়ামুল হক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ‘অবৈধভাবে’ নিজেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক মো. নেয়ামুল হক ও ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ পদে মোখলেছুর রহমান নিয়োগ নিয়েছেন। 

বর্তমান অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ১৮ দিন (শুক্রবার ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত)। শিগগিরই কলেজ খুলবে এমন কোনো নিশ্চয়তাও নেই।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, আন্দোলনের কারণে ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান পদত্যাগ করেছেন। তবে অধ্যক্ষ নেয়ামুল এখনও পদত্যাগ করেনি।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত ২৮ অক্টোবর পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করে অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের অপসারণ, বৈধ অধ্যক্ষকে ফিরিয়ে আনাসহ কয়েক দফা দাবিতে প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। গভর্নিং বডি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। তবে তারা ক্লাসে ফেরেননি এবং পরীক্ষায়ও অংশ নেননি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস ও পরীক্ষাতে অংশ নেবে না বলে জানান।

এভাবে আন্দোলন ৪ নভেম্বর পর্যন্ত গড়ালে ঢাকা সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। নোটিশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা জানানো হয়।

যা ঘটেছিল

অভিযোগ উঠেছে, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদ দখল করতে কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. নেয়ামুল হক বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নিয়ে এসে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন গত ৭ আগস্ট। অধ্যক্ষ মো. বেদার উদ্দিনকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়া হয়। ঘটনার পর ওই দিনই সন্ধ্যায় (৭ আগস্ট) নেয়ামুল হক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝে নেন। সেদিনই কলেজের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মোখলেছুর রহমানকে নিয়োগ দেন কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেই নেয়ামুল হক নোটিশ জারি করেন পরদিন ৮ আগস্ট জরুরি সভা করার জন্য।

অন্যদিকে ৮ আগস্ট ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ’ হওয়ার কারণ দেখিয়ে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের কাছে এক মাসের ছুটির আবেদন করেন অধ্যক্ষ বেদার উদ্দিন।

এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়ে অধ্যাপক কাজী নেয়ামুল হক গত ১১ আগস্ট অধ্যক্ষ এবং ‘কোনও কারণ ছাড়াই’ ছয় শিক্ষককে অফিস আদেশ দিয়ে কলেজে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ 

জোর করে পদত্যাগ করানোর বিষয়ে মো. বেদার উদ্দিন হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের কারেন। গত ২৭ অক্টোবর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর একটি আদেশ দেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না– তা চার সপ্তাহের মধ্যে জানাতে রুল জারি করা হয়। আদেশে আবেদনকারীর আবেদন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিতদফতরের মহাপরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।

মো. বেদার উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মনে করি আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা অন্যায় হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, হাইকোর্ট আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমি আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অচিরেই কোর্টের রায় বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’

পরবর্তী পদক্ষেপ কী

সিটি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নিং বডির সভাপতি ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উচ্চ আদালনের আদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্টরা আইনগতভাবে বাস্তবায়ন করবেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে—শিক্ষার্থীদের দাবি, কলেজে রেগুলার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু এই নিয়োগ দিতে তো সময় লাগবে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে কোনোভাবে একজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ করার। কিন্তু তারা (শিক্ষার্থী) কোনোভাবেই মানছে না। নিয়োগ দেওয়া সময়সপেক্ষ ব্যাপর। এখন অ্যাক্টিং প্রিন্সিপ্যাল ও ভাইস-প্রিন্সিপ্যালকে সরিয়ে দিতে হবে, পদত্যাগ করাতে হবে। আমরা ভাইস-প্রিন্সিপ্যালকে পদত্যাগ করালাম এবং অ্যক্টিং ভাইস-প্রিন্সিপ্যাল দিলাম, আর প্রিন্সিপ্যাল যিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আছেন তিনি। যেহেতু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়ে গেছে, সেহেতু নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন গভর্নিং বডি নিয়ে আমরা বসবো। দুই- একদিনের মধ্যে বসে সিদ্ধান্ত নেবো।

জোর করে পদত্যাগ করানো আগের অধ্যক্ষের রিট আদেনের আদেশের পর এবং রিট চলমান থাকায় রেগুলার অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা করায় এখন আরও ঝামেলা হবে। আমরা অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারবো না। এখন আইনগতভাবে এগোবার চেষ্টা করবো।’

শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ, এখন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কী বলবেন–– জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত অনলাইনে ক্লাস নেওয়া যায় কিনা সে আলোচনা করবো।

কয়েকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছিল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। অধ্যক্ষকে সরিয়ে কলেজে সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। এর বিরূপ ফলাফল ভোগ করছি আমরা। আমাদের সন্তানদের কথা না ভেবে পদ দখলের লড়াইয়ে কলেজটি বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমাদের সন্তানদের শিক্ষার কী হবে ভেবে আমরা চিন্তিত। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়