শিরোনাম

প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর, ২০২৪, ০২:১২ রাত
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সদ্য শপথ গ্রহণ করা উপদেষ্টা ফারুকীকে অপসারণের দাবিতে জাবিতে বিক্ষোভ

সদ্য শপথ গ্রহণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টা পদ থেকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনতিবিলম্বে তাকে অপসারণ না করা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন তারা।

রবিবার (১০ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।

বিক্ষোভ  মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, মুজিববাদী সরকারে’, ‘মুজিববাদের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘ মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ, ‘ সাঈদ নূর আসাদ ভাই, দোসরের জায়গা নাই’,  ‘মুজিববাদের ঠিকানা, বাংলাদেশে হবে না’,‘এক দুই তিন চার, ফারুকী তুই গদি ছাড়’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়ামের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।

সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘বিগত সরকার মুজিববাদকে পুঁজি করে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার গড়ে তুলেছিল। সেই ফ্যাসিস্ট শাসনের ভগবান ছিল মুজিব এবং তার প্রতীক ছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি আর টুঙ্গিপাড়ার মাজার। 

গণঅভ্যুত্থানের পর মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী সেই ৩২ নম্বরের বাড়ি সংস্কার করতে বলেছিলেন। আমরা মনে করি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সেই ভেঙে দেওয়া বাড়ি ভাঙাই রাখতে হবে। ফ্যাসিস্ট শাসনকে কীভাবে ছাত্রজনতা ভেঙে দিয়েছে তার প্রতীক হিসেবে থাকবে এই বাড়ি। মুজিবের প্রতি যাদের সহানুভূতি আছে তাদের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৈরী হওয়া সরকারে থাকার কোনো অধিকার নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এই গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্রজনতার সরকারে কোনো মুজিববাদী থাকলে তাকে গদি থেকে নামানোর নেতৃত্বও দিবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার বলেন,  ‘তিন মাস আগে হাজার হাজার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে হঁটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে গদিতে বসিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করছি এই সরকার আবারও ফ্যাসিবাদদের পুনর্বাসনে উঠে পড়ে লেগেছে। যারা আমাদের আহত ও নিহত ভাইদের মেরেছিল সেই খুনিদের বিচার এখনও তারা করতে পারেনি। তার বদলে তারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই আমাদের ভাইয়েরা জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে আপনাদের যে ক্ষমতার আসনে বসিয়েছে, ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করলে আপনারদের সেই ক্ষমতা থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনতে দ্বিধাবোধ করবো না। আপনারা যেভাবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছেন, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করবেন। গণহত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার  করুন এবং উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করুন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্যাসিস্টরা বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে ভগবানের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রে মুজিবের বউয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর স্ত্রী অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। 

২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্রেও রেণু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিশা। ফারুকী তার স্ত্রীকে মুজিবের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করতে দিয়ে ফ্যাসিস্টদের তোষামোদি করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পরে ফারুকী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেটি অত্যন্ত ন্যাক্যারজনক। যাদের মধ্যে ফ্যাসিস্টদের রক্ত রয়েছে, ফ্যাসিস্টদের ধারণ করে তারা পট পরিবর্তনকালীন সময়ে ছাত্রদের পক্ষে থাকলেও ফ্যাসিবাদের ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। ছাত্র সমাজ এই ধরনের ফ্যাসিস্টদের সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে দেখতে চায় না।’

আজ রবিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছেন নতুন তিন উপদেষ্টা ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। এদের মধ্যে সেখ বশির উদ্দিন পেয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পেয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মাহফুজ আলমকে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।  উৎস: দেশ রুপান্তর।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়