রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ছিল দাবি করেছেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ফলে এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে চরম বিশৃঙ্খলা নেমে আসে বলে জানান তারা।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এ সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৭ সালে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করা হয় জানিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দাবি, এ সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এ কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছিল, সেটা ৮ বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিপরীতে এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে নেমে আসে চরম বিশৃঙ্খলা। এক কথায় শিক্ষার মানের উন্নতির পরিবর্তে ঢাবি প্রশাসনের বৈষম্যমূলক বিভিন্ন নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার যথাযথ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
‘এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা এখন সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তুলেছেন। এ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারও থেকেই কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাইনি। তাদের এমন নিশ্চুপ অবস্থান আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে’, যোগ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের সমস্যার চিত্র তুলে ধরি। নানা সমস্যা তুলে ধরতে আয়োজিত প্রথম এ সংবাদ সম্মেলনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়েছি। এরপর একই দাবি জানিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। একই স্মারকলিপি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদেরও দিয়েছি।
এরপর গত ২২ অক্টোবর আমরা সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করি। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি চলে। বিকেলে সায়েন্সল্যাব মোড়ে কর্মসূচি থেকে ৩ দফা দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। সেইসঙ্গে সেদিনের মতো কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাত কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়,' যোগ করেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকভাবে এ কমিটি গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে এ কমিটির লক্ষ্য- উদ্দেশ্য নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে কিছুই উল্লেখ নেই। কার্যপরিধিতে সংস্কারের কথা থাকলেও আমরা মূলত এখন আর কোনো সংস্কার চাচ্ছি না। আমরা এখন সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবির আন্দোলনে রয়েছি। এখানে আমাদের দাবির সঙ্গে তাদের কার্যপরিধি সাংঘর্ষিক। তাই আমরা তাদের এ কমিটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে বেশ শঙ্কিত। এমন বাস্তবতায় কমিটির মোটিভ আর শিক্ষার্থী প্রতিনিধি না থাকায় ১৩ সদস্যের এ কমিটিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। এখানে শিক্ষার্থীদের দাবির কোনো ধরনের প্রতিফলন ঘটেনি।’
এ অবস্থায় তাদের দাবি, অনতিবিলম্বে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে কমিশন গঠন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় গঠন কাঠামো ভালো বোঝেন, এমন নিরপেক্ষ শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনে প্রাধান্য দিতে হবে। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং শিক্ষার্থীদের পালস বোঝেন, এমন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের কমিশনে যুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থী বিমুখ কোনো একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হবে না।
তারা বলেন, আমাদের দাবি ও আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আমাদেরকে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ঢাবিতে ডেকে নেন। সেখানে আন্দোলনে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের সাত কলেজ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিদের সামনে আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরি। তারা আমাদের অবস্থান বুঝতে পেরে এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানান। পরবর্তীকালে যেকোনো পদক্ষেপে তারা আমাদের সমর্থনের আশ্বাস দেন।
‘আমরা তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ১৩ সদস্যের কমিটির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেছি। এ কমিটির বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। আমরা তাদেরকে সরকারের সমন্বয়ে ‘সংস্কার’ কমিটির পরিবর্তে ‘বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন’ গঠন করতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি। তাদেরকে কমিশনের কাঠামো সম্পর্কেও জানিয়েছি। এসব দাবি বাস্তবায়নে আমরা তাদেরকে আগামী তিন কার্যদিবস সময়ের কথা জানিয়েছি। এর মধ্য দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী মঙ্গলবার আমরা আমাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো,’ যোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এরমধ্যে আগামী তিন দিন সাত কলেজের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে কর্মসূচি চলমান থাকবে জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, তিন দিনের কর্মসূচির মধ্যে রোববার নিজ নিজ ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি পালিত হবে। সোমবার কলেজে কলেজে সবগুলো ডিপার্টমেন্টে দাবির পক্ষে গণসংযোগ কর্মসূচি পালিত হবে। এরপর মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। উৎস: সময়নিউজটিভি।
আপনার মতামত লিখুন :