শিরোনাম
◈ আমাদের পরামর্শ হয়তো আর দরকার নেই, এজন্য ডাকেনি : মুজিবুল হক চুন্নু ◈ পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সরকার: বৈঠক শেষে গণফোরাম ◈ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রেসক্লাবের সামনে মারধর ◈ পলাতক পুলিশ সদস্যরা এখন ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচিত হবে, দেখামাত্রই গ্রেফতার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (ভিডিও) ◈ প্রয়োজনে সিস্টেম ভেঙে নতুন লোক বসাবো : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ: এবারও ডাক পায়নি জাপা ◈ নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা, বেঁচে গেলেন অল্পের জন্য ◈ সিনওয়ারের মরদেহ নিয়ে ‘দর কষাকষি’ করতে চায় ইসরায়েল ◈ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : সাড়ে চারশ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হাত বদল

প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট, ২০২৪, ০২:২৯ দুপুর
আপডেট : ১৪ অক্টোবর, ২০২৪, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সরকার গঠনের দিকে নজর রাখছেন

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে শুরু হয়েছে বিশৃঙ্খলাও। সে কারণে শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সারা দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, মন্দির পাহারা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো প্রশংসনীয় কাজ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাধারণ জনতাও। শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়করা তাদের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের গ্রুপে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সরকার গঠনের দিকে নজর রাখছেন। সূত্র : কালবেলা

গত সোমবার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। মঙ্গলবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১১ জন সমন্বয়ক ও দুজন লিয়াজোঁ কমিটির নেতা এবং তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে চূড়ান্ত করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বঙ্গভবনে ওই বৈঠকের পর সেখান থেকে বেরিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে দ্রুত জনগণের মাঝে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা হবে। তারা না আসা পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। মন্দির পাহারা দিতে হবে।

সেই নির্দেশনার পর সারা দেশে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলেছেন। সেখানে যারা মন্দির পাহারা দেবে, সংখ্যালঘুদের বাড়ি পাহারা দেবে এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করবে, তাদের সেখানে যুক্ত করা হচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব জেলাতেই সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। অনেকে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও মন্দির পাহারা দিচ্ছেন। এতে সব ধর্মের শিক্ষার্থীদেরই অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি তারা সরকার গঠনের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন এবং নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমরা সমন্বয়করা নির্দেশনা দিয়েছিলাম। সে অনুযায়ী সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, মন্দির পাহারার মতো কাজ করছে। যারা বঙ্গভবনে গিয়েছে, আর যারা যায়নি, সবাই সমন্বয়কদের গ্রুপে মতামত দিচ্ছে। সবার মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী সবকিছু করা হচ্ছে। সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থী সবাই সচেতনভাবেই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে খোঁজখবর রাখছে।’

আরেক সমন্বয়ক নিশিতা জামান নিহা বলেন, ‘বঙ্গভবন থেকে বেরোনোর পর সমন্বয়করা সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা এবং সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও মন্দির রক্ষায় পাহারার নির্দেশনা দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেরা গ্রুপ করে পাহারা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে।’ তিনি বলেন, ‘এই সময়ে সমন্বয়কদের গ্রুপে আমরা সরকার গঠন প্রক্রিয়া বিষয়ে আলোচনা করি। তাৎক্ষণিক না হলেও পরবর্তী সময়ে সবার মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। সমন্বয়করাই এখন সব নয়, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও মতামত নেওয়া হয়। সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে গ্রুপে ও আলাদা করে যোগাযোগ হচ্ছে।’

এদিকে ছাত্র-জনতা যাদের প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চান, তাদের সরকারে রাখা উচিত বলে মত দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়সীমা নিয়ে তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী আজিজুর রহমান রিজভী বলেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান শিক্ষার্থীদের। সে কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য শিক্ষার্থীদের স্টেকহোল্ডার হিসেবে রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, সব মন্ত্রণালয়ে অভিজ্ঞ ও রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করবে না, এমন ব্যক্তিদের রাখতে হবে। মন্ত্রণালয়গুলোতে রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্যেই শিক্ষার্থী ও জনতার এই অভ্যুত্থান। সেই সংস্কারে কিছুটা সময় লাগবে। অন্তত দুই বা তিন বছর। সে কারণে দ্রুত আরেকটি নির্বাচন না দেওয়ার আহ্বান জানাই।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক স্বর্ণা আক্তার রিয়া কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা যেহেতু সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ চেয়েছি, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তো সেটি করতে পারবে না। সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে শিক্ষার্থীদের স্টেকহোল্ডার হিসেবে রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আমরা ভরসা করতে পারছি না। সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় তিন মাস বা ছয় মাস নয়, অন্তত তিন বছর করতে হবে। আমরা চাই এর মাঝে রাজনীতিতে নতুন মুখ উঠে আসুক, যারা শিক্ষার্থী ও জনতার চাওয়া পূরণ করতে পারবে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইইই বিভাগের স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী ও ব্যাচ প্রতিনিধি আবু ওবায়দা মায়ায কালবেলাকে বলেন, ‘যারা দেশের এসেট (সম্পদ), গণতান্ত্রিক পন্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, নিজ নিজ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ, পূর্বে ফ্যাসিজমের পক্ষের ছিলেন না, এমন ব্যক্তিদের সরকারে রাখা যায়। এ ছাড়া স্টেকহোল্ডার হিসেবে শিক্ষার্থীদেরও রাখা যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশ এখন অস্থিতিশীল। এটি স্থিতিশীল করতে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন জরুরি। এরপর সব রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রাখা প্রয়োজন। আবার বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি তৈরির জন্যও কিছুটা সময় প্রয়োজন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকা উচিত। সে ক্ষেত্রে সরকারের মেয়াদ এক বছর করা যেতে পারে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ঈশা দে কালবেলাকে বলেন, ‘এই সময়টায় দেশের অনেক জায়গায় হামলা হচ্ছে। ক্ষমতায় বসা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখতে পাচ্ছি। একে অন্যকে দোষারোপ করতে দেখতে পাচ্ছি। ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরালেও দেশে এখনো ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। সেজন্য অপরাধচক্রকে উৎখাত করতে হবে। এজন্য দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এই সরকারে শিক্ষার্থী, কৃষক, জনতা যাদের প্রতিনিধি হিসেবে চায়, তাদের রাখা যেতে পারে। এই সরকারের মেয়াদ তিন বা ছয় মাস হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সুযোগ না দিলে কারা সরকারে আসবে, সেটিও প্রশ্ন থেকে যায়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলকে উৎখাতই সমাধান নয়। সব মানুষ রাজনীতি সচেতন হলে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গঠন হতে পারে। তাদের মাধ্যমেই জনতার সরকার গঠন সম্ভব।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়