মুযনিবীন নাইম: [২] কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা, গুম, নির্যাতন ও আটকের প্রতিবাদে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন  জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

[৩] মঙ্গলবার দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুখে লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মৌন মিছিলে অংশগ্রহণ করেছেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
একইসঙ্গে রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, খুলনা, টাঙ্গাইল, পঞ্চগড় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। 

[৪] মঙ্গলবার  বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মৌন মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্বরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়। পরে সেখানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে সেখান থেকে পুনরায় মিছিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একই পথে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষে হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।

[৫] জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, গত দুইদিন আগে ছয়জন সমন্বয়কারীকে ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জোরপূর্বক জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য আদায় করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত হতে দেখেছি। সমন্বয়কারীরা ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং তাদের কোনো কথা থাকলে ছাত্রদের কাছে এসে বলতে হবে। ডিবি কার্যালয়ে থেকে কোনো কথা বললে সেটি ছাত্র সমাজ গ্রহণ করবে না। 

[৬] সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, দুঃশাসন ও স্বৈরাচারি মন-মানসিকতার দুঃশাসক যখন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় থাকে, তার পরিপূর্ণ নকশা ও বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে, তখন তাদের প্রতিরোধ করতে রাষ্ট্রের বাহিনী, নানান যন্ত্র ও তাদের মদদপুষ্ট সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। এখন আবার সরকার শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে আটক করছে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করছে। একাত্তরের কালো রাতের যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, তা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।

[৭] মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ র‌্যালি ও সংহতি সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে থেকে ছাত্র হত্যা, নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনায় প্রতিবাদ র‌্যালি বের করা হয়। 

[৮] বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইফতেখারুল আলম মাসউদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালেহ হাসান নকীব বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে ভয়ংকর এক জায়গায় নিয়ে গেছে সরকার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যেভাবে মোকাবিলা করার প্রয়োজন সেভাবে করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এখনো আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হয়রানি ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে এবং ডিবি কার্যালয়ে বসিয়ে বিবৃতি দেওয়ানোসহ সব ধরনের নোংরা পন্থা অবলম্বন করেছে সরকার।  আমরা এগুলোর অবসান চাই এবং নির্বিচারে যেসব হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করে দোষীদের বিচার চাই। এছাড়াও দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

[৯] এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষক একাত্মতা পোষণ করে সংহতি সমাবেশে অংশ নেন।

[১০] কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ফারুকুজ্জামান জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কিশোরগঞ্জে ৯ দফা দাবিতে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের পুরাতন থানা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে রেল স্টেশনের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

[১১] বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে রেল স্টেশনের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। পরে রেল স্টেশন এলাকায় ৯ দফা দাবিতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। 

[১২] খুলনা প্রতিনিধি জাফর ইকবাল জানান, খুলনায় ৯ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার  বেলা ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন তারা। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ৯ দফা দাবি জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?’‘আমার ভাইদের মারলি কেন?’এমন নানা স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।

[১৩] সড়ক অবরোধের কারণে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, মজিদ সরণি, কেডিএ অ্যাভিনিউ, ইব্রাহিম মিয়া সড়কসহ আশপাশের কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হযে যায়।

[১৪] টাঙ্গাইল প্রতিনিধি আরমান কবীর জানান, টাঙ্গাইল সরকারি চাকরিতে কোট সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে টাঙ্গাইলে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে পুলিশের বাধার মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

[১৫] মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় টাঙ্গাইল শহরের রেজিস্ট্রিপাড়া শাহীন স্কুলের সামনে থেকে ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বিন্দুবাসিনী গালর্স স্কুল মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দিলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

[১৬] পঞ্চগড় প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান জানান, পঞ্চগড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে বের করা বিক্ষোভ মিছিল পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে।

[১৭] মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বৈষম্য বিরোধী সাধারণ ছাত্রদের জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বির নেতৃত্বে তেঁতুলিয়া রোডের সদর হাসপাতাল চত্বর থেকে মিছিলটি বের করা হয়। ওই এলাকায় আগে থেকেই অবস্থান করা পুলিশের একটি দল শিক্ষার্থীদের মিছিলটি আটকে দেয়। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ সময় চার শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।

[১৮] তবে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার রায় বলেন, চারজনকে আটক করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদে কোনো নাশকতায় সংশ্লিষ্টতা না পেলে ছেড়ে দেওয়া হবে। সম্পাদনা: এম খান