মুযনিবীন নাইম, আরমান হোসেন: [২] কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবং বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী এবং চাকরীপ্রত্যাশীরা মিছিল নিয়ে এসে শাহবাগে অবস্থান করে। শাহবাগ ছাড়ার আগে শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
[৩] শুক্রবার বিকাল ৪টায় বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে এসে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় ঢাবি লাইব্রেরির সামনে। পরে বিকাল ৫ টায় মিছিল নিয়ে বের হয় শিক্ষার্থীরা। মিছিল কলাভবন, শ্যাডো চত্ত্বর ও রাজু ভাস্কর্য অতিক্রম করে শাহবাগে এসে থামে। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের ফলে শাহবাগের গুরুত্বপূর্ণ চত্বরটি দিয়ে সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
[৪] পরে একঘণ্টা অবস্থান শেষে আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বকর মজুমদার জানান, শনিবার বিভিন্ন জেলায় সমন্বয়কদের নিয়ে অনলাইন এবং অফলাইনে বৈঠক করা হবে। সমন্বয়করা আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
[৫] আবুবকর কর্মসূচি ঘোষণার পাশাপাশি পুলিশের বাধা ও হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, দেশের যেকোনো স্থানে হামলা করা হলে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে শিক্ষার্থীরা।
[৬] বিক্ষোভ সমাবেশে আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন ক্যাম্পাসে বহিরাগত আনার প্রতিবাদ করেন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও মহানগর উত্তরের ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে দেখা যায়। এ কথা উল্লেখ করে মাহিন বলেন, এরা সম্মিলিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করতে চায়।
[৭] আন্দোলন কতদিন চলবে, এ বিষয়ে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সরকার যতদিন চাইবে ততদিন আন্দোলন চলবে। সরকার যদি দাবি মেনে নেন তবে সাথে সাথেই আন্দোলনের ইতি টানা হবে ।
[৮] এ সময় ছাত্রলীগকে উদ্দেশ করে আন্দোলনকারীরা বলেন, বৃহস্পতিবার আমাদেরকে মারার জন্য ক্যম্পাসে বাস ও ট্রাকে করে সন্ত্রাসী আনা হয়। যাদের আমাদের পক্ষে থাকার কথা ছিল, তারা আমাদের বিপক্ষে অবস্থান করছেন।
[৯] তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী, আপনার নাম ভাঙ্গানো সংগঠন আমাদের যদি আঘাত করার চেষ্টা করে তার পরিণতি ভালো হবে না। পেটে আঘাত করলে আমরা বসে থাকব না।
[১০] কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সংলগ্ন স্টেশন বাজার রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে সারাদেশের সঙ্গে রাজশাহীর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তাদের ভাষ্য, কোটা থাকবে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য। এছাড়া দেশে কোনো কোটা সিস্টেম চলবে না। যতদিন পর্যন্ত ২০১৮ এর পরিপত্র জারি না হবে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
[১১] কোটা পদ্ধতি সংস্কারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চবি অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীতে এ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
[১২] আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের দাবি না মেনে নিয়ে উল্টো আমাদেরকে আহত করা হচ্ছে।
[১৩] সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল ও চলমান কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে মিছিল করেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকাল ৩টায় কুমিল্লা শহরে এই মিছিল শেষে তারা আগের দিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
[১৪] এ সময় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সাবরিনা উর্মি বলেন, কোটা প্রথা আমাদের মেধা বিকাশের অন্তরায়। কোটা প্রথার কারণে আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা চাই, আমাদের চাকরী ক্ষেত্রে এই কোটা যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকবে তিনি যেন শিক্ষার্থীদের এই ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে নেন ও কোটা প্রথার উচ্ছেদ করেন।
[১৫] চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব
এমএন/এএইচ/এসবি/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :