মুযনিবীন নাইম, আরমান হোসেন: [২] আইন পাশ করে সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবার আবারও বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় তারা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানেই শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে নানান কর্মসূচি পালন করেছে। এরমধ্যে কিছু স্থানে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শাহবাগে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। তবে আন্দোলনকারিরা বলেছেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো মহল এই হামলা করেছে।
[৩] বুধবারের ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সাড়ে তিনটার পর চতুর্থ দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির প্রস্তুতি শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ও চাকুরীপ্রার্থীরা। এসময় বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসলে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে তারা, কিছুক্ষণ পরই ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় তারা। সেখানে পুলিশের একটি এপিসি কার ও জলকামান ছিল। শিক্ষার্থীরা সেগুলোর ওপরে উঠে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ গাড়ি দুটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে সরিয়ে নেয়।
[৪] সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ার পর থেকে রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ থেকে এলিফ্যান্ট রোডগামী, বাংলা মোটরগামী, মৎস্য ভবনগামী ও টিএসসিগামী রাস্তায় যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
[৫] কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সময় টেলিভিশনের প্রতিবেদক ত্বহা খান তামিম এবং ভিডিও জার্নালিস্ট প্রিন্সের ওপর হামলা হয়েছে। এ সময় আরেফিনের হাতে থাকা ভিডিও ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। এদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা হঠাৎ ত্বোহা খান তামিম ও প্রিন্স আরেফিনের ওপর চড়াও হয়। মাথায় বাংলাদেশের পতাকা বাঁধা ও আবির নাম লিখা কালো রঙের জার্সি পরা এক যুবক সাংবাদিক তামিমের ওপর আঘাত করতে থাকে।
[৬] কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ বাধা দিলে সেই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে আন্দোলনকারীরা। এরপর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধের প্রস্তুতিকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ ২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
[৭] রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপরেও লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
[৮] চট্টগ্রামেও আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে। নগরের দুই নম্বর গেটের কাছে এলে কোটাবিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে চায় পুলিশ। এতে উত্তেজনা বাড়ে। পুলিশ সেখানেও ব্যারিকেড দেয়। কিন্তু ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোলনকারীরা মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে। এছাড়া টাইগারপাস এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে আন্দোলনকারীরা।
[৯] রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগও উঠেছে। [১১] কোটা সংস্কারের দাবিতে পুলিশের লাঠিচার্জ উপেক্ষা করে সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
[১০] একদফা দাবিতে এবং সারাদেশে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকাল ৪টায় দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচীর ঘোষণা দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
[১১] সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উচ্চ আদালতের রায় আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয়।
আপনার মতামত লিখুন :