শিরোনাম
◈ দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য সকলকে কুরআনের দিকেই ফিরতে হবে: জামায়াতে আমীর ◈ দুই উপদেষ্টার এপিএসের দুর্নীতির বিষয়ে যা বলছে দুদক ◈ বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের হার বাড়তে পারে: বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ◈ বাংলাদেশকে ৩ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে ইতালি ◈ সর্বদলীয় বৈঠক পাকিস্তান ইস্যুতে, সরকারের যেকোনো পদক্ষেপে ‘পূর্ণ সমর্থন’ বিরোধীদলের ◈ রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান ◈ পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫: এবার সরকারের কাছে নির্দিষ্ট ৬ দাবি পুলিশের ◈ সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের জামাতা মাহমুদুজ্জামানকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার ◈ ৩০ কেজি গাঁজা ও কাভার্ড ভ্যানসহ এক মাদক কারবারি গ্রেফতার  ◈ ভারতের ভয়ংকর পরিকল্পনা ফাঁস করল পাকিস্তান

প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:২৬ রাত
আপডেট : ২৫ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের হার বাড়তে পারে: বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের হার বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমা ব্যবহার করে সংস্থাটি এই পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক মনে করে, চলতি বছর নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

বুধবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করেছে। ‘ম্যাক্রো প্রভার্টি আউটলুক’- শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশ বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানাবিধ কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সেখানে বলা হয়েছে, চলতি বছরে শ্রমবাজারের দুর্বল অবস্থা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের প্রকৃত আয় কমতে পারে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের শ্লথগতির কারণে ঝুঁকিতে থাকা গরিব মানুষের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে। এতে বৈষম্য আরও বাড়বে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থান কমে যাওয়া স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর জীবনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ৪ শতাংশ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। একই সময়ে স্বল্প দক্ষ কর্মীদের মজুরি ২ শতাংশ এবং উচ্চ দক্ষ কর্মীদের মজুরি ০.৫ শতাংশ কমেছে। এই বাস্তবতায় দেশের চরম দারিদ্র্যের হার বাড়বে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। তাদের পূর্বাভাস, চলতি অর্থবছরে দেশে চরম দারিদ্র্যের হার বাড়তে পারে। চরম দারিদ্র্যের হার ৭.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯.৩ শতাংশে উঠবে। এতে আরও ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা। সামগ্রিকভাবে দারিদ্র্যের হারও বাড়তে পারে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। জাতীয় দারিদ্র্য হার গত বছরে ছিল সাড়ে ২০ শতাংশ। ২০২৫ সালে তা বেড়ে ২২.৯ শতাংশ হবে। তবে এই বাস্তবতায় প্রবাসী আয় গ্রহণকারী পরিবারগুলো ভালো থাকবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলা করতে গিয়ে পাঁচটির মধ্যে তিনটি পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙে জীবন নির্বাহ করতে বাধ্য হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

২০২২ সালের জনশুমারি অনুসারে, দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। বিশ্বব্যাংকের হিসাবটি বিবেচনায় আনলে ২০২৫ সাল শেষে অতি গরিব মানুষের সংখ্যা হবে ১ কোটি ৫৮ লাখের মতো। অন্যদিকে জাতীয় দারিদ্র্য হার বা গরিব মানুষের সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৯০ লাখের মতো। মূলত প্রকৃত আয় কমে যাওয়ার কারণেই মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায় কিংবা গরিব থেকে আরও গরিব বা অতি গরিব হয়।

দারিদ্র্যের সংজ্ঞা: আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা দিয়ে গরিব মানুষ চিহ্নিত করা হয়। ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে, দিনে ২.১৫ ডলার আয় করে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা কেনার সামর্থ্য না থাকলে অতি দরিদ্র হিসেবে ধরা হয়। এটি আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা। তবে প্রতিটি দেশের জন্য নিজস্ব একটি দারিদ্র্যরেখা ঠিক করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় দারিদ্র্যসীমার মানদণ্ড হলো খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবা কেনার জন্য একজন মানুষের প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার ৮২২ টাকা খরচ করার সামর্থ্য যদি না থাকে, তাহলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবেন বা গরিব হয়ে যাবেন। 

সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকেও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকবে না বলেই মনে করছে বিশ্বব্যাংক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের রাজস্ব ঘাটতি জিডিপি’র ৪.৪ শতাংশে উঠতে পারে বলে তাদের পূর্বাভাস। সরকারের মূলধন ব্যয় সামগ্রিকভাবে কমে আসতে পারে, যদিও তার সুফল তেমন একটা মিলবে না বলেই মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। ভর্তুকি ও সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

যেভাবে প্রকৃত আয় কমে: এক বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি আছে। অর্থাৎ পণ্য ও সেবা কিনতে আগের বছরের গড়ে ১০ শতাংশ দাম দিতে হচ্ছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি বাড়েনি। এতে প্রকৃত আয় কমেছে সাধারণ মানুষের।

প্রকৃত আয় কমার একটি সাধারণ উপায় হলো মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ে, এর কম হারে মজুরি বাড়লে প্রকৃত আয় কমে যায়। ৩ বছর ৩ মাস বা ৩৯ মাস ধরে বাংলাদেশে মজুরির হার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। বিবিএস’র হিসাব মতো, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরির হার বৃদ্ধি বেশি। এরপর ৩৯ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম। গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে সাধারণ মানুষের বিশেষ করে গরিব মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। 

গত মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৩৫ শতাংশ আর মজুরি বৃদ্ধির হার ৮.১৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধি বা আয় বৃদ্ধি কম হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। প্রকৃত আয় কমে যায়। প্রকৃত আয় কমে গেলে সহজেই দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়। মৌলিক জীবনধারণের প্রয়োজন মেটাতে তাদের কষ্ট হয়।

এর আগে বিশ্বব্যাংকের দ্বি-বার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’-এর পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশ হতে পারে। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে ৪.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। নতুন পূর্বাভাসে বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪.৯ শতাংশ হতে পারে।
এই প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে বলেছে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ, রপ্তানি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্যে কিছু বাহ্যিক চাপ আংশিক প্রশমিত হয়েছে, যেমন ব্যালান্স অব পেমেন্ট ঘাটতি হ্রাস ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হওয়া।

অর্থনৈতিক শ্লথগতি: রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ নানা কারণে অর্থনীতির শ্লথগতি চলছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ, এসব সূচকে চাঙ্গা ভাব নেই। ৯ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি সাড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ছয় বছরের মধ্যে এডিবি বাস্তবায়ন সবচেয়ে কম। উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা খরচ গতবারের চেয়ে কমেছে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও কমেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ কম। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যায়। এ ছাড়া দুর্বল শ্রমবাজার আগের মতো বিরাজমান। ৮৬ শতাংশের বেশি কর্মসংস্থান হয় অনানুষ্ঠানিক খাতে। যারা অনানুষ্ঠানিক খাতে দিনমজুরের মতো কাজ করেন, তাদের চাকরি বা কাজের নিশ্চয়তার ঝুঁকি বেশি থাকে।

রপ্তানি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে : এই মুহূর্তে বিশ্ব অর্থনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক মনে করছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তেমন একটা পড়বে না। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এর পূর্ণাঙ্গ প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনুভূত হবে। সংস্থাটি বলেছে, প্রভাব ঠিক কতটা পড়বে, তা এখনই সুনির্দিষ্ট হয়ে বলা সম্ভব নয়। কারণ, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ও নীতি ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। সেই অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেও তাদের হিসাব, বৈশ্বিক এই বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১ দশমিক ৭ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট হারে কমবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে যা আছে- পুলিশ বাহিনী পুরোপুরি কার্যকর না হলে নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাবে। ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির প্রভাব চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। আর্থিক খাতের সংস্কার, বাণিজ্য সহজীকরণ ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বব্যাংক মনে করে, জিডিপি’র অনুপাতে বিদেশি ঋণ বাড়বে। উৎস: মানবজমিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়