শিরোনাম
◈ ইউনূসের অবস্থান চীনের কৌশলগত কাঠামোকে আরও জোরদার করবে ◈ বাংলাদেশে স্টারলিংক ডিজিটাল উল্লম্ফন নাকি সার্বভৌমত্বের বাণিজ্য! ◈ স্থগিত হ‌লো সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ ফুটবল ◈ ঝটিকা মিছিল বিরোধী অভিযান,ডিবির জালে ধরা ১১ ◈ ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তা ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার ◈ ‘কাশ্মীরের হামলার পেছনে যারা আছে, তাদের কল্পনারও বাইরে শাস্তি দেওয়া হবে’ ◈ চালের দাম কিছুটা বাড়তে পারে: খাদ্য উপদেষ্টা ◈ সাধারণ কাজ করা বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বাড়বে না সরকার ◈ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের নোটিশ জারি পাকিস্তানের: এএনআই'র প্রতিবেদন ◈ সংশোধন হচ্ছে চাকরি আইন: ৮ দিনের নোটিশে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে সরকার

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:১৪ দুপুর
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:২০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাজস্ব বাড়াতে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প: ‘ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেয়নি সরকার’

রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা এবং নিরীক্ষা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে বিশ্বব্যাংকের ঋণের টাকায় ডিজিটাইজেশন ও অটোমেশনের যে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে তাতে শুধু সরকারি অর্থের শ্রাদ্ধ হবে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি বলছে, একই উদ্দেশ্যে এর আগে নেওয়া বেশ কয়েকটি প্রকল্প থেকে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়নি। অথচ সেই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান ও সমাধান না করেই সরকার আবারও বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে নতুন প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে।

টিআইবি মনে করে, পূর্বের প্রকল্পের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে কেবল দাতা সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন প্রকল্প গ্রহণ অপরিণামদর্শী এবং সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। একইসঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি আয়কর আদায় সহজ করতে এবং কর ফাঁকি রোধে আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তি ও সক্ষমতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আয়কর আদায় বাড়াতে ও কর ফাঁকি নিয়ন্ত্রণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। টিআইবি বলছে, গত দেড় দশকে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশন ও অটোমেশনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়াতে এনবিআর অন্তত তিনটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও এর কোনোটিরই কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলেনি।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'আগের প্রকল্পগুলো যে উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, তার বড় প্রমাণ হলো বিশ্বব্যাংকের ঋণনির্ভর এই হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ। কারণ এখনো আয়কর রিটার্ন দাখিল বা ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইনে আসেনি, কাগুজে পদ্ধতিই রাজস্ব আদায়ের প্রধান উপায়। এর ফলে হয়রানি ও দুর্নীতি কমেনি, চালান জালিয়াতি বা কর ফাঁকি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, অর্থ পাচারও ঠেকানো সম্ভব হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'এক যুগে দেশের কর জিডিপির অনুপাত ৯.১ শতাংশ থেকে কমে ৮.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এমনকি এক যুগের গড় অনুপাত আরও কম, ৭.৪ শতাংশ, যা বাংলাদেশকে বিশ্বের সর্বনিম্ন কর জিডিপির অনুপাতের দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছে।'

এই পরিস্থিতিতে বছরের পর বছর ধরে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো কেন উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হলো, তার কারণ অনুসন্ধান জরুরি বলে মনে করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। এর পেছনে রাজস্ব বিভাগের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির চক্র, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জিম্মিদশা, দেশীয় প্রযুক্তি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে অনীহা বা কর নীতির ধারাবাহিকতার অভাব কতটা দায়ী, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আয়কর ব্যবস্থাপনা সহজীকরণ, পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন, পরিসংখ্যান ব্যবস্থার উন্নয়ন, সরকারি ক্রয় ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা এবং নিরীক্ষা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রণীত ৫ বছর মেয়াদি 'স্ট্রেনদেনিং ইন্সটিটিউশনস ফর ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি (সিটা)' নামের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি মার্কিন ডলার। এর একটি বড় অংশ ব্যয় হবে সরকারি আয় ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার অটোমেশন কার্যক্রমে।

প্রযুক্তি-নির্ভর এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজস্ব বিভাগের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'আয়কর আদায় ব্যবস্থাপনা অটোমেশন করার জন্য একসময় ঠিকাদার যে সফটওয়্যার দিয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করাই যায়নি। পরে দেশেই স্বল্প খরচে আরেকটি ই-রিটার্ন ফাইলিং ব্যবস্থা তৈরি করতে হয়েছিল। একইভাবে অন্য প্রকল্পে দাতা সংস্থার শর্ত মেনে ভেন্ডর লকড বা কমার্শিয়াল অফ-দ্য-সেলফ সফটওয়্যার কিনে ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাওয়ার উদাহরণও আছে।'

তিনি সতর্ক করে বলেন, নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দাতা সংস্থার নির্দেশনার অন্ধ অনুসরণ না করে সহজ ব্যবহারযোগ্যতা ও টেকসই সক্ষমতার কথা বিবেচনা করে প্রযুক্তি বাছাই করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান দেশীয় প্রযুক্তি জ্ঞান ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এনবিআর নিজস্ব কারিগরি অবকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়