শিরোনাম
◈ পারমাণবিক বোমার মালিক হওয়া থেকে দূরে নেই ইরান: রাফায়েল গ্রোসি ◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা নিয়ে এবার যা বললেন খামেনি ◈ আদালতের এজলাসে পুলিশকে মারধর, বিএনপির ৬ নেতাকর্মী কারাগারে ◈ জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে বাংলাদেশকে ৭২৪ কোটি টাকা দেবে জার্মানি ◈ হিন্দু বোর্ডে মুসলিম নেই, ওয়াকফ বোর্ডে হিন্দু কেন: ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন ◈ চী‌নে এক‌টি ভব‌নের ১১ তলা থেকে পড়ে ফুটবলারের মৃত্যু ◈ গভীর রা‌তে আ‌র্সেনাল ও রিয়াল মা‌দ্রিদ মু‌খোমু‌খি ◈ শর্ত শেষ হওয়ায় ভারত থেকে চাল আসছে না ◈ শাজাহান খান বললেন, বাইরের চেয়ে ভিতরেই ভালো আছি, ‘দিন আমাদেরও আসবে’ মেননকে বললেন ইনু ◈ শিগগিরই ইউরোপে মুক্ত ভ্রমণের দ্বার খুলছে সৌদি নাগরিকদের জন্য

প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:২১ বিকাল
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

বিনিয়োগ বান্ধব ও সময়োপযোগী বাজেটের প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী বাজেটকে বিনিয়োগ বান্ধব ও সময়োপযোগী  করার প্রত্যাশা করেছেন দেশের সনামধন্য ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা বান্ধব বাজেটের কোন বিকল্প নেই। দীর্ঘদিন যাবত সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি বজায় থাকায় বেসরকারিখাতে প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হয়নি। তাছাড়া বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রবৃদ্ধি না বাড়লে অর্থনীতি সম্প্রসারিত হবে না। এজন্য সহায়ক নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। রোববার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল-২৪ যৌথভাবে আয়োজিত লাইভ ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা: প্রেক্ষিত বেসরকারিখাত’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা।  

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এফসিএমএ। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইসিসি বাংলাদেশ-এর সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির হোসেন এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিকল্পে করজাল সম্প্রসারণ এবং কর ব্যবস্থাপনার সহজীকরণ করা আবশ্যক। এছাড়া অটোমোটেড কর্পোরেট কর রিটার্ন পদ্ধতি চালু, আমদানি পর্যায়ে আগাম কর উৎপাদনকারীদের জন্য বিলুপ্তি ও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য হ্রাস করা, অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য ১% এবং অন্যান্যদের জন্য ভ্যাটের হার সিঙ্গেল ডিজিট হার নির্ধারনের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বৈশ্বিক বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ঋণের সুদহার কমানো, ঋণ শ্রেণিবদ্ধকরণের সময়সীমা আরোও ছয়মাস পেছানো ও সকল শিল্পের জন্য অন্তত ৬ মাস মোরাটিরিয়াম সুবিধা প্রদান, মন্দ ঋণ হ্রাসে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সিএমএসএমই খাতের অর্থায়নের শর্তাবলীর সহজীকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে ইক্যুইটি ভিত্তিক শেয়ার নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের এলডিসি গ্রাজুয়েশন এবং শিল্পায়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে অবকাঠামো ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে নির্মাণ উপকরণ ও মেশিনারির উপর শুল্ক এবং ভ্যাট ছাড় নিশ্চিতকরণ, শিল্পখাতে প্রতিযোগীসক্ষম জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণের উপর জোরারোপ করেন তিনি। এছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি, চামড়া, ঔষধ, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল ও তথ্য-প্রযুক্তির ন্যায় সম্ভাবনাময় খাতে আসন্ন বাজাটে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা প্রয়োজন বলে মত প্রকশ করেন তিনি। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, পুরো রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অটোমেশনের পাশাপাশি বিদ্যমান রাজস্ব, ভ্যাট ও শুল্ক হার যৌক্তিকীকরণ করা হবে। তিনি বলেন, র্দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি ন্যাশনাল সিঙ্গেল ইউন্ডো চালু করা হয়েছে এবং ব্যবসায়ীরা এর সুবিধাও পাচ্ছেন। কর কাঠামোর প্রতিটি স্তরে সামনের দিনগুলোতে অটোমেশন বাস্তবায়ন করা হবে এবং শিগগিরই বন্ড অটোমেশন প্রকল্প চালু হবে। 

তিনি বলেন, আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ে এবং কর্পোরেট কর হার তুলনামূলক বেশ কম, তাই এবছর উক্ত খাতে কর অপরিবর্তিত রাখার ইঙ্গিত প্রদান করেন। তবে আগামী বাজেটে রাজস্ব হারে বিদ্যমান বৈষম্য দূর হবে। তিনি বলেন, আমাদের একটি কর অবকাশ নেওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। আমরা যে পরিমাণ কর আদায় করি, তার সমপরিমাণ কর অব্যাহতি দেই। আমরা এই সংস্কৃতি থেকে বেরুতে চাই। আমরা বৈষম্যহীন কররেট চাই। সবার জন্য একই রেট করতে চাই। কাউকে কমালাম কাউকে বাড়ালাম এটা হবে না। দীর্ঘদিন ধরে যারা কর অব্যাহতি পাচ্ছেন, আমরা আর তাদের দিতে চাই না। আমরা লাইবেলিটিকে সহজ করবো এবং বৈষম্যহীন কর রেটা করবো।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর জিডিপি অনুপাত কম এটা সত্য। সমস্যা হচ্ছে কমপ্লাইন্স কর দাতাদের। যে কারণে কর হার বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এই জায়গা থেকে বের হতে হবে। কর জিডিপি অনুপাত কমের আরও একটি কারণ কপ্লাইন্স লেভেল খুবই কম। আমাদের এক কোটি ১৪ লাখ করদাতা রয়েছে। যাদের মধ্যে ৪৫ লাখ রিটার্ন দেয়। যাদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের শূন্য করে রিটার্ন দেয়। আবার ৮০ লাখ রিটার্ন দেয় না। যারা দেয় না, তাদের চিহ্নিত করতে পারিনি। এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা।

ইন্টারন্যাশন্যাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশ (আইসিসিবি)-এর সভাপতি মাহবুবুর রহমান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের রপ্তানির উপর শুল্কারোপের প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের উচিত এ ব্যাপারে নেগোশিয়েশনের উদ্যোগ নেওয়া এবং ডিসিসিআইসহ বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা। শুধুমাত্র কর ব্যবস্থাপনাই নয়, শুল্ক কাঠামোকে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। 

তিনি বলেন, বাজেট শুধুমাত্র একবছরের জন্যই নয়, দেশি বিনিয়োগকারীদের আগামী বাজেটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুবিধা প্রদান করা হলে আমাদের অর্থনীতিতে তারা অধিক হারে অবদান রাখতে পারবে।  

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রবৃদ্ধি না বাড়লে অর্থনীতি সম্প্রসারিত হবে না। এজন্য সহায়ক নীতিমালা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় সংষ্কার আবশ্যক। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। ফলে কাঙ্খিত মাত্রায় ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না, কারণ হলো স্বল্পমেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রদান কখনই টেকসই হয়না। বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য কার্যকর এবং সহায়ক কর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি। 

এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা বান্ধব বাজেটের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি বজায় থাকলে বেসরকারিখাতে প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না। আমাদের উদ্যোক্তারা পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আর্থিক কর্মকান্ড সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী, তবে প্রয়োজন সহায়ক নীতিমালা। এছাড়া রাজস্ব নীতিমালার সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য নীতিসমূহের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। তিনি বলেন, কর-জিডিপি’র হার বৃদ্ধিকল্পে টিআইএন থাকা সত্ত্বেও যারা কর প্রদান করেন না, তাদেরকে করের আওতায় নিয়ে আসার উপর জোরারোপ করতে হবে।  

এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, গতানুগতিক ঘাটতি বাজেট এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। তিনি সরকারের নিকট হতে একটি ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বান্ধব, অন্তর্ভূক্তিমূলক, বাস্তবমুখী এবং সময়োপযোগী বাজেট প্রত্যাশা করেন। এছাড়াও রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে সরকারি ব্যয় হ্রাসে আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কর হয়রানি বন্ধ করা গেলে অধিক সংখ্যক মানুষ কর প্রদানে উৎসাহিত হবে। 

এছাড়া বিভিন্ন সেশনের বক্তব্যে ডিসিসিআই সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহামান বলেন, বিদ্যমান পরিস্থতির আলোকে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত নয়, তাই সরকারের আরও ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। 

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ইতোমধ্যে লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, তবে এ খাতের সুফল পেতে হলে দশ বছর মেয়াদী একটি লজিস্টিক মাষ্টারপ্ল্যান থাকা প্রয়োজন। 

বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুক্তরাষ্ট্রের ভালো মানের তুলা আমদানি বৃদ্ধিতে ওয়্যার হাউস নির্মাণ সুবিধা প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এতে সেদেশের সাথে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পাবে। এছাড়া ম্যান মেইড ফাইবারের মত হাই ভ্যালু পণ্য উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার উপর জোরারোপ করেন তিনি।  

অন্যান্য আলোচকবৃন্দ যৌক্তিকহারে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, একক ভ্যাট হার নির্ধারণ ও সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অটোমেশন, বিদ্যমান অবস্থার আলোকে এলডিসি গ্রাজুয়েশন কিছুটা পেছানো, শিল্পখাতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন, অগ্রীম কর কর্তন, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণ, স্থিতিশীল বিনিময় হার বাস্তবায়ন, ঋণের সুদ হার হ্রাসকরণ, শক্তিশালী বন্ড মার্কেট প্রবর্তন এবং পুঁজিবাজারে আস্থা আনয়নের উপর জোরারোপ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়