মনজুর এ আজিজ : বিদ্যমান শিল্পে অপরিবর্তিত রেখে বাড়ানো হলো নতুন শিল্পের গ্যাসের দাম। শিল্পের বয়লারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটার প্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভে ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দর ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান, সদস্য সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, মো. আব্দুর রাজ্জাক ও শাহীদ সারোয়ার।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নতুন শিল্পের পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা দরে বিল দিতে হবে। নতুন দর চলতি এপ্রিল মাস থেকেই কার্যকর হবে।
বিদ্যমান গ্রাহকদের দর (শিল্প ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা) অপরিবর্তিত রেখে নতুন ও প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল পেট্রোবাংলা। প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের (ইতোমধ্যে অনুমোদিত) অর্ধেক বিল বিদ্যমান দরে, অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। অন্যদিকে নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
পেট্রোবাংলার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। পেট্রোবাংলা তাদের প্রস্তাবে বলেছে, দাম না বাড়ালে বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। পেট্রোবাংলার সেই প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শুনানিতেও ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা তীব্র আপত্তি তোলেন। বিশেষ করে শিল্পে দুই ধরণের দর করার বিরোধীতা করেন সকলেই। তারা বলেছেন, বিদ্যমান শিল্প বিদ্যমান দরে, আর নতুন শিল্পের জন্য বাড়তি দাম নির্ধারণ করা হলে অসম প্রতিযোগিতার সৃস্টি হবে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম জানান, গণশুনানিতে আমরা হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছি দাম কমানো যায়। বিগত সরকার যেসব লুন্ঠনমূলক ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছিল বর্তমান সময়েও তা বাড়ানো হলে ভোক্তাদের সুরক্ষা না দিয়ে সেই লুন্ঠনমূলক ব্যয়ের অভিযোগের দায়ভার তারা কাঁধে তুলে নিলেন বলে প্রমাণিত হবে। একই দেশে শিল্পে দুই ধরণের দর আইনের দৃষ্টিতে অচল। তাই চ্যালেঞ্জ করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, পেট্রোবাংলা কয়েকটি উৎস থেকে ভিন্ন ভিন্ন দামে গ্যাস কিনে থাকে। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কেম্পানি ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানিকে প্রতি হাজার ঘনফুটের দাম দেওয়া হয় ২৮ টাকার মতো, আর বাপেক্সকে দেওয়া হয় ১১২ টাকার মতো। দেশের খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন করা বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম দেওয়া হয় ২.৭৬ ডলার, আর তাল্লোকে দেওয়া হয় ২.৩১ ডলার।
অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজির দাম ১০.৬৬ ডলার এবং ওমান থেকে আনা এলএনজির দাম পড়েছে ১০.০৯ ডলার। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কয়েক দশকের স্থবিরতার কারণে আমদানির দিকে যেতে হয়েছে। অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিত আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এখন থেকেই জোরালোভাবে তেল, গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তাছাড়া গভীর ও অগভীর সমূদ্রেও তেল, গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালাতে হবে।