ট্রাম্পের শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) লেনদেনের শুরুতে দেশের শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।
লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০০ এর বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে লেনদেনে ভালো গতি দেখা যাচ্ছে।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে মূল্যসূচকও ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। সেই সঙ্গে লেনদেনে ভালো গতি দেখা যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী কার্যকর হতে যাওয়া রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা দিয়ে বুধবার (৯ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করার কথা জানান ট্রাম্প।
এর আগে চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রশাসন ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে চীন।
ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেয়া এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা প্রথম দেড় ঘণ্টাজুড়েই অব্যাহত থাকে।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় লেনদেনের ৭ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৩ পয়েন্ট কমে যায়। দাম বাড়ার এ ধারা অব্যাহত থাকায় এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে এর পর দাম বাড়ার তালিকা থেকে কিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। এতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কিছুটা কমেছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১১টা ৩৪ মিনিটে ডিএসইতে ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭২টির। আর ৮১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ২৩ পয়েন্ট। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়েছে। এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২২৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে ১ কোটি টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ১০৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৮টির, কমেছে ৪০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির। সূত্র: জাগোনিউজ
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলা হয়েছে, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শেয়ারবাজারে স্বস্তির বাতাস বাইছে। আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে বাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাপানের নিক্কি এশিয়া সূচকের ৮ শতাংশ উত্থান হয়েছে। গতকাল মার্কিন শেয়ারবাজারের যে উত্থান হয়েছে, তাকেও ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছে বিবিসি। সেই সঙ্গে এশিয়ার অন্যান্য সূচকের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচকের উত্থান হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ; সাংহাই কম্পোজিট সূচকের উত্থান হয়েছে ১ শতাংশ; হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচকের উত্থান হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ; তাইওয়ানের তাইয়েক্স সূচকের উত্থান হয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স সূচকের উত্থান হয়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগে গতকাল এশিয়ার বাজারের সব সূচকই ছিল নিম্নমুখী।
শেয়ারবাজারের পাশাপাশি অন্যান্য বাজারেও ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছিল, তবে এখন তা বাড়ছে। সোনার দামও আজ বেড়েছে। আউন্সপ্রতি সোনার দাম বেড়েছে ২৯.৪৫ ডলার বা ০.৯৯ শতাংশ। তেলের দামেও কিছুটা বৃদ্ধি হয়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ১.৩৭ শতাংশ বেড়ে ৬৫.০৯ ডলারে পৌঁছেছে।
গতকাল চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং তার জেরে চীনের ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘটনায় বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসে। এরপর ট্রাম্প শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দিলে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৫ ডলারে উঠে যায়, যদিও আজ সকালে দাম আবার কিছুটা কমে ৬৪ ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম এখন ব্যারেলপ্রতি ৬১ দশমিক ৮২ ডলার। তবে বাজারে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসার কারণেই তেলের দাম কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকেরা। খবর অয়েল প্রাইস ডট অর্গের।
এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসও মন্দার সম্ভাবনা হ্রাস করেছে, আগে যেখানে তারা বলেছিল যে মন্দার আশঙ্কা ৬৫ শতাংশ, সেখানে এখন তারা বলছে, মন্দার আশঙ্কা ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ তারা আগের অবস্থানে ফেরত গেছে। যদিও তারা বলছে, এখনো যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে সামগ্রিক শুল্ক হার ১৫ শতাংশ বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী স্কট বেসেন্টও ট্রাম্পের মতো বাজারের অস্থিরতা বা টালমাটাল পরিস্থিতির বিষয়টি একরকম উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প বলেছিলেন কেউ যেন প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ না করে, যারা তাঁর কথা রেখেছে, এই ৯০ দিন স্থগিত রাখার ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের উপকার হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মূলত আলোচনায় সর্বোচ্চ সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যই ট্রাম্প শুল্ককে একধরনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি শুরু থেকেই এই কৌশল অবলম্বন করে আসছেন। বা আপনারা বলতে পারেন, ট্রাম্প চীনকে বাজে পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছেন।