শিরোনাম
◈ খুব সহজেই ডাউনলোড করুন নতুন ভোটার আইডি কার্ড ◈ বৈষম্য কমবে আসন্ন বাজেটে, অগ্রাধিকার পাচ্ছে যেসব খাত ◈ বর্ষবরণ শোভাযাত্রা নতুন নামে স্বীকৃতি পেতে অনুমোদন লাগবে: ইউনেস্কো ◈ আমেরিকা ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে সেরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হিসেবে অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ শিক্ষার্থী-বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার অভিযোগ, আহত ১০ (ভিডিও) ◈ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বলল ভারত (ভিডিও) ◈ ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্য নরম সুর ভারতের, সেভেন সিস্টার্সে বিনিয়োগ টানতে বিশেষ সম্মেলন করতে যাচ্ছে দিল্লি ◈ ইসরাইল দখল করতে ছাত্রদলের এক মিনিট সময় লাগবে না শীর্ষক মন্তব্য করেননি সংগঠনটির সভাপতি ◈ কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন দুই নারী ক্রিকেটার ও ফুটবলার ◈ দূতাবাসে সেবা মিলছে না ঘুষ ছাড়া বরং উল্টো দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকী: পুনরুদ্ধার হয়নি ইরাকের শ্রমবাজার!

প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:১৩ রাত
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল: বাংলাদেশ না ভারত কে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। ফলে এখন থেকে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির জন্য ভারতীয় ভূখণ্ড আর ব্যবহার করা যাবে না। তবে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পরেও ভারতীয় ভূখণ্ড দিয়ে নেপাল বা ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

ট্রান্সশিপমেন্টে বাতিলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার মালিক ও রপ্তানিকারকেরা বলেন, ভারতের এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সাময়িক কিছুটা চাপে পড়বেন। কারণ, আমাদের বিমানবন্দরের সক্ষমতা কম। এখন আমাদের বিকল্প ট্রান্সশিপমেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে, এ সিদ্ধান্তের ফলে আমাদের চেয়ে ভারতই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাবে।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে বন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া দীর্ঘদিনের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত সরকার। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। সেখানে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৯ জুনের জারি করা সার্কুলার বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। তবে, আগের সার্কুলারের প্রক্রিয়া অনুযায়ী ইতোমধ্যে ভারতে প্রবেশ করা বাংলাদেশি কার্গো ভারতীয় অঞ্চল ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে তারা আরও বলেন, আমাদের যখন বিশেষ কোনো পণ্য পাঠাতে হয়, বিশেষ করে যে দেশে পণ্য পাঠানো হবে সেই দেশের সঙ্গে সরাসরি কোনো কার্গো (জাহাজ) আমাদের দেশে না থাকে, সেক্ষেত্রে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নেওয়া হয়। ফলে ভারত আমাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব পায়। এখন ভারত এ সুবিধা না দিলে আমরা  শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মতো দেশ থেকে এ সুবিধা গ্রহণ করব। প্রাথমিকভাবে কিছুটা চাপে পড়লেও বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে না।

ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার ফলে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের মতো দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির জন্য বাণিজ্য প্রবাহ বাধাহীন ছিল। ভারত ২০২০ সালের জুনে বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানির এ সুবিধা দিয়েছিল।

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটি কিছুটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, আমাদের অতিরিক্ত কার্গো আগে ভারতীয় বিমানবন্দরগুলো দিয়ে যেত। এখন কোন দেশ থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নেওয়া যায় তা বের করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার করব।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাণিজ্যে পোশাক খাতে ভারতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ।

ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের (এফআইইও) মহাপরিচালক অজয় সাহাই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের ফলে এখন আমাদের কার্গো পরিবহনে অতিরিক্ত সক্ষমতা থাকবে। অতীতে রপ্তানিকারকেরা বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার কারণে বন্দর ও বিমানবন্দরে স্থান কম পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করতেন।’

এর আগে, ভারতের পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন এইপিসি বাংলাদেশকে দেওয়া সুবিধা স্থগিত করার আহ্বান জানায়।

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের পণ্য ভারত হয়ে তৃতীয় দেশে যাওয়ার সুযোগ পেত। এইপিসির চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রত্যেক দিন গড়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি পণ্যবাহী ট্রাক দিল্লিতে আসত। যা কার্গোর চলাচল ধীর করে দিত এবং এয়ারলাইন্সগুলো এ ধীরগতির কারণে অযৌক্তিক সুবিধা আদায় করত।

ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তবের মতে, এ সুবিধা প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হবে। যদিও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধি অনুযায়ী, স্থলবেষ্টিত দেশগুলো এবং সেসব দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্যের অবাধ পরিবহনের অনুমতি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংস্থাটির সব সদস্যের। এর অর্থ এ জাতীয় ট্রানজিট অবশ্যই বাধাহীন হতে হবে এবং এসব পণ্য অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব ও ট্রানজিট শুল্কমুক্ত থাকবে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা 'সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্তটা বেশ অপ্রত্যাশিতই বলা চলে। তবে আমরা এই সুবিধাটা খুব যে বেশি ব্যবহার করতাম তা না। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে কিছু পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাবান্ধা দিয়ে নেপালে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন আলু রপ্তানি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

এদিকে বুধবার (৯ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার কারণে ভারতীয় বিমানবন্দর ও বন্দরে দীর্ঘ সময় ধরে যানজট তৈরি হচ্ছিল, যা লজিস্টিক বিলম্ব এবং উচ্চ ব্যয় সৃষ্টি করছিল। ফলে এই সুবিধা ৮ এপ্রিল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে, এই পদক্ষেপ নেপাল বা ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

এর আগে, ৮ এপ্রিল ভারতীয় সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডিরেক্ট অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের নোটিশ জারি করে। এর ফলে, বাংলাদেশ ভারতীয় বন্দরের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না।

২০২০ সালে, ভারত সরকার বাংলাদেশকে তার বন্দরের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি করার জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রদান করেছিল। তবে, মঙ্গলবার এই সুবিধা বাতিল করা হয়। ভারতের রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশকে দেওয়া এই সুবিধা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, বিশেষ করে পোশাক খাতের রপ্তানি নিয়ে। উৎস: নিউজ২৪

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়