নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে চুরি, ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস)। শুক্রবার রাজধানীর মগবাজারে জুয়েলার্স সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি মো. নিপনুল হাসান।
জুয়েলার্স সমিতির নেতারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এবং ব্যবসায়ীদের ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। এ ছাড়াও জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের হত্যা, হত্যাচেষ্টা এবং অপহরণ চেষ্টা তাদের জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি বাসাবাড়িতেও জুয়েলারি ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ বোধ করছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৩টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ১১টি, আশুলিয়া সাভারে ১টি, মুন্সিগঞ্জে ১টি, খুলনায় ৪টি, কুমিল্লায় ১টি, পটুয়াখালীতে ২টি, ময়মনসিংহে ১টি, সিলেটে ১টি এবং হবিগঞ্জে ১টি প্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতি হয়।
আশুলিয়া-সাভারে ডাকাতির সময় ডাকাতদের গুলিতে এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী নিহত হন, আর বনশ্রীতে সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হন। গত এক বছরে এসব চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় দেশের ২৩টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আরও উপস্থিত ছিলেন, জুয়েলার্স সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ, সহসভাপতি এম এ হান্নান আজাদ, সহসভাপতি মাসুদুর রহমান, জয়নাল আবেদীন এবং সমিত ঘোষ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, গত ২৬ মার্চ ভোর ৫টায় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অলংকার নিকেতনের কর্ণধার ও জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি এমএ হান্নান আজাদের বাসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় ও ছদ্মবেশী ২৫-৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল হামলা চালায়। তারা তার বাসা ভাঙচুর ও লুটপাট করে এবং এমএ হান্নান আজাদকে অপহরণের চেষ্টা করে। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাজুসের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. ওয়াহিদুজ্জামান সুজনের ওপর এবং তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হয়, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়।
লিখিত বক্তব্যে বাজুস নেতা মো. রিপনুল হাসান বলেন, জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। এজন্য জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সশস্ত্র প্রহরার পাশাপাশি, দেশের সব জেলার জুয়েলারি মার্কেটে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা উচিত। তিনি বলেন, জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হওয়া অলংকার উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি, অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা রোধে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সোনা পরিবহনে পুলিশ সহায়তা নেওয়া।