শিরোনাম
◈ শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল হচ্ছে ◈ আ. লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না: ডা. শফিকুর ◈ শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে আবারো ধোঁয়াশা, দিল্লি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে! (ভিডিও) ◈ যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন ইতিকাফের সময় ◈ যে কারণে লন্ডনে হাজার হাজার বাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন, সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর বন্ধ ◈ ইউরোপের বাজারে কদর বাড়ছে তৈরি পোশাকের ◈ আওয়ামী লীগের চার খলিফা নিয়ে নাজমুলের পোস্ট ◈ দাউদকান্দিতে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক জেলে ◈ গোয়েন্দাপ্রধানকে বরখাস্ত করলো ইসরায়েল ◈ গুলশানে গুলিতে নিহত যুবকের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা ছিলো : ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার

প্রকাশিত : ২০ মার্চ, ২০২৫, ১১:৩৫ রাত
আপডেট : ২১ মার্চ, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

ভোলা-বরিশাল-ঢাকা গ্যাস পাইপলাইনের কাজ পেতে গাজপ্রমের দৌড়ঝাঁপ!

মনজুর এ আজিজ : আওয়ামী সরকারের আমলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে বিশেষ আইনের সুযোগে চড়া দরে কাজ বাগিয়ে নিয়েছিল রাশান কোম্পানি গাজপ্রম। বর্তমান  অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে বিশেষ আইন বাতিল হওয়ার পর এখন জি টু জি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে রাশান এ কোম্পানিটি।

অভিযোগ আছে, বিগত সরকারের আনুকূল্যে সব সময় দ্বিগুণের বেশি দামে কাজ পেয়েছে কোম্পানিটি। সাধারণ কাজের খরচ বিবেচনায় ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) চূড়ান্ত করা হয়, কিন্তু গ্যাজপ্রমের ক্ষেত্রে হয়েছে কত টাকা দিতে হবে সে মোতাবেক ফরমায়েশি ডিপিপি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গ্যাজপ্রমকে চড়া দরে কাজ দেওয়ার বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকায় যে কূপ খনন করতে পারে, একই কূপ খননে তিনগুণেরও বেশি দামে ২২০ কোটি টাকায় কাজ দেওয়া হয়েছিল গ্যাজপ্রমকে। এভাবে ২০টি কূপ খননে রাষ্ট্রের কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়। 

পলাতক আওয়ামী লীগের লবিস্টরা অন্তরালে চলে গেলে নতুন করে একটি গ্রুপের আবির্ভাব হয়েছে। যারা চড়া দরে কাজ দেওয়ার জন্য দূতিয়ালি শুরু করেছেন। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ও পেট্রোবাংলার ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।

দ্বীপ জেলা ভোলার উদ্ধৃত গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডে আনার বিষয়টি কয়েক বছর ধরেই আলোচিত হচ্ছে। পাইপ লাইনের রুট আংশিক পরিবর্তন সাপেক্ষে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপ লাইনের ভোলা-বরিশাল অংশ অপরিবর্তিত রেখে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা (আমিনবাজার) পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের জন্য ২৬০০ কোটি টাকা দর প্রাক্কলন করা হয়েছে। কাজটি পেতে গাজপ্রমের লোকজনের দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মতো। মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা ও জিটিসিএল এ দৌড়ঝাঁপ করছে। কাউকে প্রলোভন আবার কাউকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

শুধু পাইপলাইনের কাজ নয় বাতিল হয়ে যাওয়া ৫ কূপ খনন প্রকল্পের কাজও চড়া দরে পেতে তৎপর রয়েছে। পলাতক আওয়ামী লীগ সরকার যেগুলো বিশেষ আইনে গাজপ্রমকে দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে এনেছিল। অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় বসে বিশেষ আইন বাতিল করে দিলে ওই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। বেঁচে যায় বাপেক্সের কয়েকশ কোটি টাকা।

ইতোমধ্যেই ওই ৫ কূপ খনন প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র জমার শেষ তারিখ ছিল গত ৩ ফেব্রুয়ারি। বেশকিছু দরপত্র জমাও হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বাপেক্স সেই দরপত্র না খুলে আরও ৪৬দিন সময় বাড়িয়ে দিয়েছে। সময় ক্ষেপণ করার কৌশল গাজপ্রমকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এতে ওই কূপগুলোর বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহলে চাপ প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছে গ্যাজপ্রম।
গ্যাজপ্রমের ওই কূপগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত এক পত্রে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা দেখলে মনে হবে গ্যাজপ্রম এই দেশে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে ২০১২ সাল থেকে গ্যাজপ্রম ২০টি কূপ খনন করে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় অবদান রেখেছে। আরেক প্যারায় বলা হয়েছে ৫ কূপ খননের কাজ দেওয়া না হলে রিড ও জনবল ডিমোবিলাইজেশনের বিল দিতে হবে। বাস্তবতা হলো, যখনই তারা রিগ সরিয়ে নেমে তখনই ডিমোবিলাইজেশনের বিল পাবে চুক্তি অনুযায়ী। কিন্তু এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন কাজ না দিলেই শুধু ওই টাকা দিতে হবে। চিঠিতে চড়াদরের বিষয়টি সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছে বাপেক্স। ৫ কূপ খনন প্রকল্পের পিডির সঙ্গে গ্যাজপ্রমের মাখামাখি নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

গ্যাজপ্রমের বাংলাদেশি এজেন্টের কনসালটেন্ট ড. আমিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পাইপলাইনের বিষয়ে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে প্রাইমারি কথাবার্তা চলছে। গ্যাজপ্রমের প্রকৌশলী এনে স্পিডবোর্টে করে নদী ঘুরিয়ে দেখিয়েছি। আমাদের বিশেষ প্রযুক্তি রয়েছে যেগুলো এখানে ব্যবহার করা হতে পারে।

তিনি দাবি করেছেন, পাইপলাইনের বিষয়টি খুবই হাইটেক বিষয়, যার জন্য গাজপ্রম খুবই উপযুক্ত। গ্যাজপ্রমের মতো সাগরে পাইপলাইন করার অভিজ্ঞতা খুব কম কোম্পানির রয়েছে। আর আমাদের কাজের কোয়ালিটি খুবই উন্নতমানের। আমরা যেগুলো কূপ খনন করেছি সেগুলো যাচাই করলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে।

গ্যাজপ্রম উন্নতমানের কাজ দাবি করলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। গাজপ্রমের খনন করা কূপগুলো নিয়ে একটি গোপনীয় প্রতিবেদন কোয়ালিটি নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি (২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর) পেট্রোবাংলার কাছে পাঠায়। রিপোর্টে বাপেক্স কূপ ধরে ধরে নিম্নমানের কাজের উদাহরণ তুলে ধরেছে।

গ্যাজপ্রম তিতাস ২০ কূপটি খনন শেষ করে ২০১৩ সালের ১৯ মে। নিম্নমানের খনন ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বলে বাপেক্সের রিপোর্টে দেখা গেছে। কূপটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদনকালেই অতিরিক্ত পানি আসায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরে রির্জাভারের সম্ভাব্য ড্যামেজ এড়ানোর জন্য রি মিডিয়াল ওয়ার্ক করা হয়। এজন্য গ্যাজপ্রম বাড়তি ১৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বিল আদায় করে।

গ্যাজপ্রমের খনন করা আরেকটি কূপ তিতাস ২১ কূপ ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু করে। মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই গ্যাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় পানি ও বালি (৩৫ এমএমএসসিএফ) এলে (২০১৪ সালের ২০ জুন) উৎপাদন বন্ধ (সেলফ কিলড) হয়ে যায়। সাধারণত টিউবিং এবং সিমেন্টিং যথাযথ না হলে এমন সমস্যা হয়ে থাকে বলে খনি বিশেষজ্ঞদের অভিমত। পরে উত্তোলন সচল করতে বাপেক্সের মাধ্যমে ওয়ার্কওভার করতে গিয়ে টিউবিং প্লেসমেন্টে ত্রুটি ধরা পড়ে।

তথ্য নির্ভর এই কাজটি করেন তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আতিকুজ্জামান। এই কাজের জন্য তার পুরস্কার পাওয়ার কথা। কিন্তু মাত্র ৬ দিনের ব্যবধানে তাকে বাপেক্সের এমডি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আতিকুজ্জামানের পরিণতির পর আর কেউ গ্যাজপ্রমের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস দেখায় নি।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে, বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হচ্ছে। তিনি জানান, বরিশাল-খুলনা পাইপলাইনও হবে, তবে প্রথম ধাপে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়