শিরোনাম
◈ খাদ্য আমদানি: প্রয়োজন প্রায় ৮০ লাখ টন, হয়েছে ৪৮ লাখ ◈ ব্যক্তির ছবি থাকছে না নতুন টাকায়, হাতে পাওয়া যাবে যখন (ভিডিও) ◈ সরকারকে বাইরে থেকে দেখা আর ভেতর থেকে দেখা সম্পূর্ণ আলাদা অভিজ্ঞতা, দ্য ডিপ্লোম্যাটকে নাহিদ ইসলাম ◈ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আনিসুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটি ◈ করমুক্ত আয় সীমা ৫ লাখ টাকা করার দাবি ঢাকা চেম্বারের ◈ যুক্তরাজ্য থেকে ১৩৭৬ কোটি টাকায় দুই কার্গো এলএনজি কিনছে সরকার ◈ সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের জন্য ১৫১৩ কোটি টাকা অনুমোদন ◈ ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় অস্ত্র আমদানিতে ভারতের কৌশলগত পরিবর্তন ◈ অপরাধ প্রতিরোধে মহানগরীর অলিতে গলিতে মোটরসাইকেল টহল আরও বাড়ানো হবে: ডিএমপি কমিশনার ◈ দিনে কেউ ফল বিক্রেতা-অটোরিকশাচালক, রাতে ডাকাত (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০২৫, ০৩:৪১ রাত
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০২৫, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খাদ্য আমদানি: প্রয়োজন প্রায় ৮০ লাখ টন, হয়েছে ৪৮ লাখ

বণিক বার্তার প্রতিবেদন।। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে অন্তত ৬৮ লাখ টন গম আমদানির প্রয়োজন পড়বে বলে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে অন্তত ৬৮ লাখ টন গম আমদানির প্রয়োজন পড়বে বলে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এছাড়া পর পর দুটি বন্যায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দেশে চাল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ লাখ টন। সে হিসেবে রক্ষণশীলভাবে হিসাব করলেও চলতি অর্থবছরে সর্বমোট চাল ও গম আমদানির প্রয়োজন পড়ে ৮০ লাখ টনের বেশি।

গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে খাদ্যশস্য দুটি আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৮ লাখ টনের বেশি। এ অনুযায়ী বাকি তিন মাসে আমদানি করতে হবে ৩২ লাখ টন। ইউএসডিএর পরিসংখ্যানকে আমলে নিয়ে অত্যন্ত রক্ষণশীলভাবে হিসাব করতে গেলেও অর্থবছরের বাকি সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ১০ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে। বন্যায় উৎপাদন হ্রাসের প্রেক্ষাপটে বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং খোলাবাজারে চাল বিক্রিসহ সরকারের খাদ্যভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো নির্বিঘ্ন রাখতে এ পরিমাণ আমদানির বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এর আগে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আরেক পূর্বাভাসে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৬৬ লাখ টন চাল ও গম আমদানির প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছিল। সংস্থাটির তথ্যমতে, দেশের আমদানির ৮০ শতাংশই মূলত গম। কিছু চাল ও ভুট্টা আমদানির প্রয়োজন পড়ে। সে হিসেবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চাল আমদানি প্রয়োজন পড়ার কথা সাড়ে চার লাখ টন। আর গম আমদানির প্রয়োজন পড়ার কথা প্রায় ৬১ লাখ টন।

এফএওর আমদানি প্রয়োজনীয়তার এ প্রক্ষেপণটি বন্যার আগে করা। এর সঙ্গে বন্যার প্রায় ১৫ লাখ টন ক্ষতিকে যুক্ত করলে সব মিলিয়ে এখানেও চলতি অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্য আমদানি প্রয়োজনীয়তা ৮০ লাখ টন ছাড়ায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের চালের বর্তমান মজুদ পর্যাপ্ত না। আমদানির পরিমাণও প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাছাড়া আমন ও বোরো মৌসুমের মাঝামাঝি এ সময়ে খাদ্যশস্যের এমনিতেও দাম কিছুটা বেড়ে যায়। বর্তমানে কম উৎপাদন ও আমদানির সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বড় মিলারদের বিরুদ্ধে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দর অস্থিতিশীল করে তোলার অভিযোগ উঠছে। এ অবস্থায় আমদানি না বাড়ালে চালের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাজধানীতে এখন প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। মাঝারি মানের চালের কেজিপ্রতি দাম ৬৫ টাকা ছাড়িয়েছে। আর মোটা চাল ৫৫ টাকার ওপরে। যদিও মাত্র আমন মৌসুম শেষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ টন। আবার এখন পর্যন্ত চাল আমদানিও হয়েছে ছয় লাখ টনের বেশি। এর পরও বাজারে চালের দাম কমানো যাচ্ছে না।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে খাদ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার টন। যার মধ্যে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৩৪ হাজার টন। আর গম আমদানি হয়েছে ৪৩ লাখ ৪২ হাজার টন। যার মধ্যে বেসরকারিভাবেই আমদানির পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ টনের বেশি। তবে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে কোনো চাল আমদানির প্রয়োজন পড়েনি। তবে সে বছর দেশে গম আমদানি হয়েছিল ৬৬ লাখ টন।

সরকারের চালের মজুদ ও আমদানির পরিমাণকে পর্যাপ্ত মনে করছেন না খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন দ্রুত আমদানির পরিমাণ না বাড়লে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকার ১৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ছয় লাখ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশ। ফলে সরকারের চালের মজুদ সাড়ে নয় লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এটা পর্যাপ্ত না। খোলাবাজারে বিক্রির জন্য আরো চালের প্রয়োজন পড়বে। তাই সরকারের দ্রুত আরো পাঁচ লাখ টন চাল আমদানি করা প্রয়োজন। বিশ্ববাজারেও দাম কমেছে। তবে আমন ও বোরোর মাঝামাঝি এ সময়ে এমনিতেই চালের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। এবার উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় বাজারে বিক্রয়যোগ্য উদ্বৃত্ত কম। আমনের উৎপাদন দেড় কোটি টনের বেশি হয়নি। ফলে বড় মিলাররা এ কম উৎপাদনের সুযোগ নিচ্ছে। বোরোর ফলন ভালো হলে দাম কমে আসতে পারে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এবার আমন মৌসুমে ফলন হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ টন। চলতি আমন মৌসুমে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৫৬ লাখ হেক্টর। দেশে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমন মৌসুমে রেকর্ড ১ কোটি ৬৬ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। এবার সে রেকর্ড অতিক্রম করেছে বলে দাবি করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, আমনের উৎপাদন কোনোভাবেই দেড় কোটি টন ছাড়ানো সম্ভব না।

এবার দেশের পূর্বাঞ্চলে আগস্টের বন্যায় ২৩ জেলায় ২ লাখ ৮ হাজার ৫৭৩ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে আমনের ক্ষতি ছিল উল্লেখযোগ্য। বন্যায় রোপা আমন ১ লাখ ৪১ হাজার ৬০৯ হেক্টর ও বোনা আমনের ৭৬৪ হেক্টর আবাদি জমি এবং রোপা আমনের ১৪ হাজার ৯০৮ হেক্টর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এছাড়া ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নেত্রকোনার ১০ উপজেলা সপ্তাহ খানেক পানিতে ডুবে থাকায় নষ্ট হয় ৯৪ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, রবিশস্যসহ বিভিন্ন শাকসবজি।

গত বছরের দুটি বন্যার প্রভাবে এবার আমন উৎপাদন গতবারের চেয়ে কমে ১ কোটি ৪০ লাখ টনে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)।

দেশের অন্যতম শীর্ষ ধান-চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় বেড়েছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সরু চালে বেড়েছে ২-৪ টাকা। খুচরা বাজারে আরো বেড়েছে চালের দাম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরু চাল হিসেবে পরিচিত জিরাশাইল (জিরা) ও কাটারিভোগ (কাটারি) ধানের আমদানি বর্তমানে বাজারে নেই বললেই চলে। চাহিদার তুলনায় যে সামান্য ধান আমদানি হচ্ছে, তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। স্থানীয় বাজারে দুই-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ধানের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের দামও বেড়েছে।

নওগাঁ শহরের আড়তদারপট্টির পাইকারি চাল বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে জিরাশাইল ৭৮-৮০ এবং কাটারিভোগ ৮২-৮৩ টাকা দরে বিক্রি করছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা। অপরিবর্তিত রয়েছে মোটা চাল বলে পরিচিত স্বর্ণা-৫ জাতের চালের দাম। প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এ মোকামে মানভেদে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৭৫-৭৬ এবং কাটারিভোগ ৭৯-৮০ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী তাপস খাদ্য ভাণ্ডারের প্রোপ্রাইটর তাপস কুমার মণ্ডল বলেন, ‘জিরাশাইল ও কাটারিভোগ চালের প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বর্তমানে ১০০-১৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যার কারণে খুচরা বাজারেও দাম কিছুটা বেশি। খুচরা বাজারে দাম বাড়ায় বেচাকেনা একদম নেই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২ হাজার টাকারও বিক্রি হয়নি। আমদানি না হলে এসব চালের দাম আরো বেশি হতো।’

জেলার আড়তদারপট্টির পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মেসার্স সততা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, ‘রোজার কারণে মানুষ মোটা চাল খাচ্ছে না। সরু বা চিকন চালগুলোই বেশি কিনছে, যার কারণে এসব চালের চাহিদা একটু বেশি। এখন মৌসুমের শেষ সময় চলছে, বাজারে তেমন ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সরু চালের দাম কেজিতে ২-৪ টাকা করে বেড়েছে। নতুন ধান এলে আবারো চালের দাম কমে আসবে।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘বাজারে দেশী জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধান বাজারে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না, যার কারণে এ দুটি চালের দাম একটু বেশি। এছাড়া স্বর্ণা-৫ জাতের চালের দাম দেড় মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। স্বর্ণা-৫ বাজারে তেমন বিক্রিও হচ্ছে না। মৌসুমের নতুন ধানের ফলন ভালো হলে চালের দাম কমে আসবে। নতুন ধান না আসা পর্যন্ত দেড়-দুই মাস জিরাশাইল এবং কাটারিভোগ চালের দাম এমনই থাকতে পারে। চাল আমদানি করায় দাম স্থিতিশীল রয়েছে।’

বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিলে এক সময় পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হতো। তবে সাম্প্রতিক গৃহযুদ্ধে দেশটির অর্থনীতি ক্রমেই ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং গৃহযুদ্ধের অভিঘাতে ব্যাহত হচ্ছে মিয়ানমারের শস্য উৎপাদন। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক পূর্বাভাসে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, চলতি মার্চ-এপ্রিল নাগাদ রাখাইনের স্থানীয় উৎপাদন নেমে আসতে পারে সেখানকার মোট চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশে। বছরের মাঝামাঝি এ পরিস্থিতি দুর্ভিক্ষের রূপ ধারণ করতে পারে। এ অবস্থায় সেখানে বেড়ে যেতে পারে খাদ্যশস্যের কালোবাজারি। সেক্ষেত্রে রাখাইনে খাদ্য সংকটের ধাক্কা প্রতিবেশী বাংলাদেশের খাদ্য ঘাটতিতে থাকা কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোয়ও এসে পড়তে পারে। অবৈধ পথে দেশটিতে বাড়তে পারে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের চোলাচালান।

শুধু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অবস্থানরতরা নয়, দেশটি থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরাও বাংলাদেশী চালের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় বাংলাদেশীদের মতো মিয়ানমারের নাগরিকরাও বিপদে পড়ে যাওয়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক খাদ্য সহায়তা কমে যাওয়ার আশঙ্কা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলছে।

ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি হাইব্রিড ধান ও কাজল লতার মতো মোটা জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল পলিশ করে মিনিকেট নামে বিক্রি করা হয়। চালের আরেক বড় জোগানদাতা জেলা কুষ্টিয়ায়ও ধানের অভাবে এ ধরনের চাল উৎপাদন কমে এসেছে। মিল মালিকরা বলেছেন, বাজারে এখন এসব ধানের সরবরাহ কম। এপ্রিলের শেষ নাগাদ বাজারে বোরো মৌসুমের সরবরাহ শুরু হলে এ চালের দাম কমে আসবে। জেলার খাজানগরে গত মাসখানেক ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

মিল মালিকরা বলছেন, যে তিন জাতের ধান থেকে মিনিকেট বা এ ধরনের সরু চাল তৈরি করা হয় সে ধান এখন বাজারে কম। তাদের গুদামেও এর মজুদ নেই। এ কারণে খুচরা বাজারে বেড়েই চলেছে সরু চালের দাম। কুষ্টিয়ার মিলগেটে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮১ টাকা দরে। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৮৬ টাকায়।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাজারে ধান পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো মিলার দেশের দূরদূরান্ত থেকে কিছু ধান নিয়ে আসছেন। কিন্তু দাম পড়ছে অনেক। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে।’

খাজানগরে ৬৫টি অটো রাইস মিল রয়েছে। এর মধ্যে হাতেগোনা ১৫-২০টি মিল মিনিকেট চাল উৎপাদন করছে। এগুলোর প্রতিটিরই উৎপাদন কমেছে।

সাদা রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আরশাদ আলী দাবি করেন, ‘এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মিনিকেটের দাম কেজি ৯০ টাকা হয়ে যেতে পারে। স্বাভাবিক সময়ে আমার মিলে গড়ে প্রতিদিন ৪৬ টন চাল উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে ধানের অভাবে এখন বেশির ভাগ সময় দিনে ১৪-১৫ টনের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না।’

বাজার বিশ্লেষকরা অবশ্য কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ করছেন। উৎপাদন মৌসুম শেষে এত আমদানির পরও চালের বাজার এতটা বেড়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক মনে করছেন না তারা। এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রিপন কুমার মণ্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, সঠিক সময়ে বাজারে চাল না আসায় দাম বাড়ছে। মিলগেটে চাল আটকে থাকছে। বাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা, সে বিষয়ে জেরালো নজরদারি করা হচ্ছে না। ফলে বড় মিলাররা কৃত্রিম সংকট তৈরির সুযোগ পাচ্ছে। ধানের দাম বেড়েছে। কিন্তু তাই বলে কেজিতে ৫-৭ টাকা দাম বাড়তে পারে না। চালকলে কতটুকু মজুদ আছে তা দেখা দরকার। উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার কথা।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাজার স্বাভাবিক করতে আরো পাঁচ-ছয় লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। বোরো ফলনে কোনো সমস্যা হলে আমদানির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। সেটা আমরা বোরোর ফলন দেখে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের ৭০ লাখ টন গম লাগে। সেখানে বেসরকারি খাতই প্রায় পুরোটা আমদানি করে থাকে। সরকারিভাবে যতটা করার সেটা আমরা করছি।’

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়