শিরোনাম
◈ অনুমোদন পেল ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ◈ মুস্তাকিমের অনন্য রেকর্ড, ৫০টি চার ও ২২ ছক্কায় করেছেন ৪০০ রান, দল জিতেছে ৭৩৮ রানে ◈ ইতালি প্রবাসী ফুটবলার ফাহমিদুলকে জাতীয় দলে নেওয়ার দাবিতে লং মার্চের ডাক ◈ ঈদের আগে মার্চ মাসের বেতন পাচ্ছেন না ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী ◈ অসহায় গ্রামবাসীদের পাশে ফুটবলার হামজা চৌধুরী ◈ নিউজিল্যান্ডের কাছে টানা দুই ম্যাচ হেরে গেলো পাকিস্তান ◈ নেতাকর্মীদের আস্তে আস্তে খেতে বলার ব্যাখ্যা দিলেন বিএনপি নেতা (ভিডিও) ◈ রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী 'আরসা'র প্রধান আতাউল্লাহ নারায়ণগঞ্জে গ্রেফতার ◈ এনজিওর দুই কর্মীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন: পুরুষ কর্মীকে বিদ্যুতের শক দেওয়া হয়, নারী কর্মীকে নগ্ন করে ভিডিও ধারন ◈ যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় ইসরায়েলী হামলা নৃশংস ও বর্বরোচিত : সাইফুল হক

প্রকাশিত : ১৮ মার্চ, ২০২৫, ০৫:১১ বিকাল
আপডেট : ১৮ মার্চ, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : আর রিয়াজ

দেশ থেকে চুরি হওয়া সম্পদ ফেরাতে যুক্তরাজ্যের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্যের দ্বারস্থ বাংলাদেশ

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন: দেশ থেকে চুরি হওয়া সম্পদ ফেরাতে রোডম্যাপ তৈরি করছে বাংলাদেশ। যাতে শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে পাচার হওয়া ৭৫ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার ফেরত আনা যায়। সরকারের লক্ষ্য এই বছরের শেষের মধ্যে হাসিনা, তাঁর সরকারের সাবেক মন্ত্রী এবং নয়টি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন পক্ষে পাচার করা সম্পদের অর্ধেক ফেরত আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এই আশায় যে, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ দেশে অবৈধভাবে টাকা পাচারকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আর্থিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে রাজি হয়। এসব ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে রেখেছে।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর গতকাল সোমবার লন্ডনে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। যাতে বাংলাদেশ ব্রিটিশ সরকারকে ১১টি বাংলাদেশি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করতে করতে পারে এবং অবৈধভাবে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করতে পারে।

পোর্টকুলিস হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মনসুর ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের বলেন, ‘কিছু ব্যবসায়ী সরাসরি বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। (এই পাচার করা অর্থ উদ্ধারে) যুক্তরাজ্য হলো প্রথম দেশ, যাদের সাহায্য আমরা চাইছি...যদি যুক্তরাজ্যের আইনি ব্যবস্থায় কিছু ইতিবাচক হয়, তাহলে বিশ্বব্যাপী এর প্রতিক্রিয়া থাকবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরও বলেন, ব্রিটিশ সরকারের সহায়তায় অন্যান্য দেশকেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা হবে। সফরে আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি এবং বর্তমান ও সাবেক বিচারমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা করেছে। আগামী বুধবার আহসান এইচ মনসুর আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে একটি সম্মেলন আয়োজন করবেন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে ১১টি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর পাচার করা অর্থ উদ্ধার করতে চাইছে তাদের নাম এখনো প্রকাশ করেনি। তবে, অবৈধ অর্থ পাচারের তদন্তকারী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মতে, এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে—অ্যারামিট গ্রুপের মালিক ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সৈয়দুজ্জামান চৌধুরী, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং নাসা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম মজুমদার অন্যতম। তাদের সবারই গার্মেন্টস এবং ব্যাংকিংসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবসা আছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সরকার শিগগির একটি বিশেষ আইন তৈরি করবে, যাতে চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

গত সপ্তাহে রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তিনি যুক্তরাজ্যকে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে বাংলাদেশি অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে রাজি করাতে সক্ষম হবেন।

আহসান এইচ মনসুর নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশি আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের ওপর অন্তত ১৫০টি মামলা প্রস্তুত করেছে, যাতে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।’

২০১০ এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার উদ্যোগের (এসটিএআর) আওতায় যুক্তরাজ্যের অনুরোধে ১৫ লাখ ডলারের বেশি সম্পদ ফেরত দিয়েছিল। এ ছাড়া, ২০০৭ সালে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কাছ থেকে ২৩ কোটি টাকা (বর্তমান বিনিময় হারে ১ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার) যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ দুই বার যুক্তরাজ্যের সম্পদ ফিরিয়ে দিয়েছে। এখন আমাদের পালা যুক্তরাজ্য থেকে চুরি হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে নেওয়ার।’

রোডম্যাপ অনুযায়ী, পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে মে মাসে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির অধীনে কাজ করা আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয় কেন্দ্র (আইএসিসিসি) এবং বিশ্বব্যাংকের এসটিএআর—এর সহযোগিতায় লন্ডনে বাংলাদেশ ‘অ্যাসেট রিকভারি’ বা সম্পদ পুনরুদ্ধার সম্মেলন আয়োজন করবে।

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এ বছরের শেষ নাগাদ ১১টি অগ্রাধিকার মামলার অন্তত ৫০ শতাংশ সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে এবং ওই গোষ্ঠীগুলোর সব সম্পদ জব্দ করতে এবং একটি সম্পদ পুনরুদ্ধার সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি বেসরকারি আইন সংস্থা নিয়োগ করবে, যা মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাবে এবং সরকার বড় আকারের পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একবার টাকা ফিরে পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক সঞ্চয় হারানো ব্যাংক গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেবে এবং ব্যাংকিং খাতের বাইরে যেসব সম্পদ পাচার হয়েছে সেগুলো উদ্ধার হলে সাধারণ জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে।’ অনুবাদ: আজকের পত্রিকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়