শিরোনাম
◈ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মিথ্যা তথ্য পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রে: মার্কিন সিনেটর গ্যারি পিটার্স  ◈ স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, প্রতি ভরি ১ লাখ ৫৫ হাজার ◈ দেড় ঘন্টার বেশি সময় পর ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ সমাপ্ত ◈ হিন্দুদের ওপর আক্রমণ ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক: মার্কিন সিনেটরকে প্রধান উপদেষ্টা ◈ অনুমোদন পেল ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ◈ মুস্তাকিমের অনন্য রেকর্ড, ৫০টি চার ও ২২ ছক্কায় করেছেন ৪০০ রান, দল জিতেছে ৭৩৮ রানে ◈ ইতালি প্রবাসী ফুটবলার ফাহমিদুলকে জাতীয় দলে নেওয়ার দাবিতে লং মার্চের ডাক ◈ ঈদের আগে মার্চ মাসের বেতন পাচ্ছেন না ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী ◈ অসহায় গ্রামবাসীদের পাশে ফুটবলার হামজা চৌধুরী ◈ নিউজিল্যান্ডের কাছে টানা দুই ম্যাচ হেরে গেলো পাকিস্তান

প্রকাশিত : ১৮ মার্চ, ২০২৫, ০৩:০০ রাত
আপডেট : ১৮ মার্চ, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্যাংক খাত ঝুঁকির মুখে: খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি ৫ ব্যাংকে

দেশের ব্যাংক খাত বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। মাত্র পাঁচটি ব্যাংকের কাছেই মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি টাকা। এর ফলে ওইসব ব্যাংকের মূলধন কমে গেছে, আয় নেমে গেছে তলানিতে, আর্থিক ঘাটতিও বেড়েছে। এতে গোটা ব্যাংক খাত আরও বিপদের মুখে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৬টি ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে পুরো ব্যাংক খাত ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতের মোট মূলধনের অনুপাত (এআরএআর) ৬.৮৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, এই হার ১০ শতাংশের বেশি থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও গত বছরের জুন পর্যন্ত এ অনুপাত ছিল ১০.৬৪ শতাংশ, অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে তা কমে গেছে অনেকটাই।

কেন সংকট বাড়ছে : বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা তহবিল (প্রভিশন) বেশি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে, ফলে মূলধন কমে যাচ্ছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে শ্রেণিকৃত ঋণ (খেলাপি ঋণ) ছিল মোট ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ বা ২.৮৫ লাখ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে তা বেড়ে ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো— এসব খেলাপি ঋণের ৮২ শতাংশই এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোকে বেশি পরিমাণে প্রভিশন বা সুরক্ষা তহবিল রাখতে হচ্ছে। এতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, যা মূলধন সংকট তৈরি করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সালের পর থেকে এত বাজে পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি।

৫ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অর্ধেকের বেশি : মাত্র পাঁচটি ব্যাংকের কাছে মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি টাকা জমা হয়ে আছে। রবিবার (১৬ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে শীর্ষ ৫টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৫১ শতাংশ।

অপরদিকে, দেশের বাকি ৫৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৪৯ শতাংশ।

শীর্ষ ১০টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৭১ শতাংশ। অর্থাৎ, দেশের বেশিরভাগ খেলাপি ঋণ সীমিত কয়েকটি ব্যাংকের মধ্যেই আটকে আছে।

দ্রুতগতিতে বাড়ছে খেলাপি ঋণ : গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে ৩.৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। শীর্ষ ৫ ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণও আরও বেড়েছে।

ব্যাংক খাতের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ব্যাংকের ৫ শতাংশের বেশি ঋণ খেলাপি হলে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। কিন্তু বর্তমানে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের প্রতিটিতেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪০ শতাংশের বেশি। ২০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ আছে আরও ১৪টি ব্যাংকে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো— মোট খেলাপি ঋণের ৮২ শতাংশই অনাদায়ী বা কু-ঋণ, যা আদায় করা প্রায় অসম্ভব।

ঝুঁকিতে যেসব ব্যাংক : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অবস্থা তুলনামূলক ভালো, এদের মূলধন অনুপাত ৪৩.৬৭ শতাংশ। বিশেষায়িত উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ, এদের মূলধন অনুপাত ৪২.২০ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মূলধন অনুপাত ২.৪৮ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৫.৪৪ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট কাটাতে— ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংকগুলোর মূলধন পুনর্গঠন করতে হবে।মুনাফা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পুরো ব্যাংক খাত আরও গভীর সংকটে পড়বে।

কেন বাড়ছে খেলাপি ঋণ : বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাত থেকে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। দখলদারিত্ব ও অনিয়মের কারণে ব্যাংকগুলো থেকে দেওয়া অনেক ঋণ এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে।

আগে এই সমস্যাগুলো গোপন রাখা হলেও সরকার পরিবর্তনের পর তা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। যে কারণে প্রতি প্রান্তিকেই খেলাপি ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

প্রভাব কী হবে : আর্থিক খাত দুর্বল হবে: মূলধন ও আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেবে।

বিদেশি বাণিজ্যে ঝুঁকি: খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকলে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ব্যয় বেড়ে যাবে, বিদেশি বিনিয়োগ কমবে।

ঋণ প্রদান কমবে: ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ তহবিল সংকুচিত হবে, ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

ব্যাংক বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাবে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক লেনদেনে খরচ বেড়ে যেতে পারে। সাধারণ মানুষের জন্য ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এআরএআর কমে গেলে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, যা অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।’

উপায় কী? : ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলোর সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, পুনঃমূলধনীকরণ (রিক্যাপিটালাইজেশন), খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার এবং মুনাফা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দিতে হবে। তারা এও মনে করেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই ব্যাংক খাতকে বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়