শিরোনাম
◈ তিন মাসে ৩ দেশ সফরে যাবেন ড. ইউনূস ◈ বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রচারণায় শেখ হাসিনার প্রতি জোর: ভারত 'অন্তর্ভুক্তিমূলক' নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে: টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন ◈ সরকার সাবেক ৬৪ সচিবের আমলনামা যাচাই করবে ◈ ব্যবসায়ীকে স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা, বোমা ফাটিয়ে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট ◈ সারা দেশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তালিকা হচ্ছে! ◈ ধনী মনে করে বিয়েতে রাজি হওয়ার পর সর্বস্ব লুটে ! ◈ এক যুগ পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফের চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত ◈ তামিম ইকবালের অপরাজিত শতকে মোহামেডানের বড় জয়  ◈ ঢাবি শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ (ভিডিও) ◈ ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ১৪ মার্চ, ফিরতি ২৪ মার্চ

প্রকাশিত : ০৯ মার্চ, ২০২৫, ০৩:২০ রাত
আপডেট : ১০ মার্চ, ২০২৫, ০১:৪৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শেয়ারবাজারে এক সপ্তাহে মূলধন কমেছে ২২ হাজার কোটি টাকা

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অভ্যন্তরীণ সংকটের বলির পাঁঠা হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। অনেকেই লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। গত সাত মাসে ৫২ হাজার বিনিয়োগকারী তাদের অ্যাকাউন্টে থাকা সব শেয়ার লোকসানে বিক্রি করে পোর্টফোলিও ফাঁকা করেছেন। খবর: দৈনিক আমাদের সময়।

বিএসইসির বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নেই বাজারসংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ ব্যক্তির। দেশের শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে-২০২৫’ নামে এই জরিপ করেছে। সম্প্রতি এই জরিপের ফলাফলে এ তথ্য জানা গেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই কমিশনের কর্মকর্ত-কর্মচারীদের সঙ্গে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট আরও চরম আকার ধারণ করেছে।

বিএসইসির কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মুখোমুখি অবস্থা বিরাজ করছে। কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের অযোগ্য ও অদক্ষ দাবি করে তাদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা দাবি করেন, খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে বাদ দিয়ে দক্ষ ও যোগ্য লোকদের কমিশনে নিয়োগ দিতে হবে। পরে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় কড়া নিরাপত্তায় নিজ কার্যালয়ে এসে চেয়ারম্যান বলেন, কোনো অন্যায় চাপের

কাছে কমিশন নতি স্বীকার করবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কমিশনের অবস্থান আগামীতে আরও দৃঢ় হবে। এরপর এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ওটা আমার কিছু করার নেই। বিএসইসির চেয়ারম্যান আছেন, উনি দেখবেন। ওনাকে সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

সরকারের এমন বক্তব্যে বিনিয়োগকারীদের হতাশ আরও বেড়েছে। তারা জানিয়েছে, মূলত দেশের শেয়ারবাজার এখন অভিভাবকশূন্য। জাকিউল আহসান নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার খামখেয়ালিতে বলির পাঁঠা বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টির দ্রুত সমাধানও চেয়েছে সংগঠন দুটি।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাজারের মূল সমস্যা সমাধানে নজর নেই কারও। যখন যিনি চেয়ারে বসেন, তখন তিনি নিজের এজেন্ডা বাস্তবানে ব্যস্ত থাকেন। বছরের পর বছর শেয়ারবাজারে ভালো কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে, সেগুলোর মান ও স্বচ্ছতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠছে। শেয়ারবাজারে কারসাজি হচ্ছে কিন্তু দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে কারসাজি প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সরকারি কোম্পানিগুলো অপেক্ষাকৃত ভালো শেয়ার হিসেবে বিবেচিত হলেও গত দুই বছরে বেশ কয়েকটি সরকারি কোম্পানিতে সরকারের ঋণকে গ্রহণযোগ্য কোনো প্রক্রিয়া ছাড়াই শেয়ারে রূপান্তর করা হয়েছে। এতে এসব কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে। সুশাসনের অভাবে বিনিয়োগকারীরা এ বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন এবং তারা বাজার ছাড়ছেন।

বাজারের গলার কাটা মার্জিন ঋণ। যথেচ্ছ মার্জিন ঋণও শেয়ারবাজারে বড় সংকট তৈরি করছে। শেয়ারবাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী হয়, তখন মার্জিন ঋণ ওই ঊর্ধ্বমুখী ধারাকে যতটা বাড়িয়ে দেয়, পতনের সময় এর বিরূপ প্রভাব ফেলে আরও বেশি। দর পতনের সময় মার্জিন ঋণে শেয়ার কেনা বিনিয়োগকারীরা ‘ফোর্স সেল’-এ পড়ে বিনিয়োগের পুরোটাই হারিয়ে ফেলেন। বহু বছর ধরে মার্জিন ঋণকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হলেও এটা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এখন এমন এক পরিস্থিতি হয়েছে, অনেক বিনিয়োগকারী লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যেতে পারলেও ব্রোকারেজ হাউসসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা বন্ধ করে চলে যেতে পারছে না। শেয়ারবাজারের লেনদেন ক্রমে কমতে থাকায় সব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা হারিয়েছে। কোনোভাবে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে নিজের বিনিয়োগ করা শেয়ার বিক্রি করে কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা।

এমন পরিস্থিতিতে বিএসইসিতে তৈরি হওয়া কমিশনের সঙ্গে কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব বাজারকে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে। শেয়ারবাজারের অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাব ছাড়াও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থ বাজারের সংকটও চলমান শেয়ারবাজার সংকটকে আরও গভীর করছে বলে মনে করে তারা।

বাজার পরিস্থিতি : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ২১ হাজার ৯৬০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৩.৩৪ পয়েন্ট বা ০.৮৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০৩ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ২১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৪৬৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৭৪৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়