শিরোনাম
◈ শাহবাগে আজও প্রাথমিকের নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা (ভিডিও) ◈ আধিপত্য থেকে বৈধতার সংকটে আওয়ামী লীগ! ◈ আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার ভেতরে  শ্রমিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার  ◈ গাজীপুরে ৮১ জন গ্রেফতার অপারেশন ডেবিট হান্টের ৩য় দিনে ◈ ডিসেম্বর ধরেই নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি (ভিডিও) ◈ বাধার মুখে ধর্ষণ মামলার আসামি ধরতে গিয়ে ফিরে এল র‍্যাব ◈ জাতীয় নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত ◈ চলতি মাসের মধ্যেই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ, কমিটিতে দেড় শতাধিক ছাত্রনেতা ◈ শহীদ মিনারে ৬ দফা দাবিতে বিডিআর সদস্যদের অবস্থান কর্মসূচি (ভিডিও) ◈ দুর্নীতি সূচকে দুই ধাপ অবনতি বাংলাদেশের (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৭:১৮ বিকাল
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৩:০৭ দুপুর

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

তিতাসের আবাসিক গ্যাস বিল পরীক্ষা করবে তৃতীয় পক্ষ

মনজুর এ আজিজ : এবার তিতাস গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের মিটার বিহীন গ্যাস বিল বৃদ্ধি সংক্রান্ত পরীক্ষা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যাচাই-বাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পেট্রোবাংলার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, মিটার বিহীন গ্রাহকদের এক চুলা ৫৫ ঘনমিটারের বিল এবং দুই চুলা ৬০ ঘনমিটারের বিল আদায় করা হয়। তিতাস দাবি করেছে তারা কোথাও কোথাও ৯০ ঘনমিটার ব্যবহারের তথ্য পেয়েছেন। অন্যদিকে জালালাবাদে ৪৫ ঘনমিটার দেখা গেছে। তারা দাবি করেছেন জালালাবাদ (সিলেট অঞ্চল) এলাকার লোকজন প্রবাসী হওয়ায় তাদের ব্যবহারের ধরণ ভিন্ন। এসব বিষয়ে যাচাই করা এবং প্রকৃত ব্যবহারের তথ্য নিশ্চিত হওয়ার জন্য তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য খাতের অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।

জানা যায়, গ্রাহক ব্যবহার করুক, বা না করুক অথবা বেশি ব্যবহার করলেও সরকার বা তিতাস কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত বিলেই মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের বিল আদায় করা হয়। বিইআরসি সর্বশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশ দেয় ২০২২ সালের ৫ জুন। ওই আদেশের পুর্বে গণশুনানি গ্রহণ করে। তখন বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গড়ে এক চুলা ৪০ এবং দুই চুলা সর্বোচ্চ ৫০ ঘনমিটার ব্যবহার করছে। প্রিপেইড গ্রাহকের ব্যবহারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এক চুলা ৭৩.৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭.৪১ ঘনমিটার থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়।

বিইআরসির আদেশের ১০ মাস পর তিতাস গ্যাস বিদ্যমান এক চুলা ৫৫ ঘনমিটার (৯৯০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৭৬.৬৫ ঘনমিটার দুই চুলা ৬০ ঘনমিটার (১০৮০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৮৮.৪৪ ঘনমিটার করার আবেদন দিয়েছে। আর পরিমাণ বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই দামও বেড়ে যাবে। তিতাস তার আবেদনে বলেছে, মিটার বিহীন কমবেশি ২৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে কোনো সমীক্ষা বা তথ্য বিশ্লেষণ না করেই ঘনমিটারের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। এতে কারিগরি ক্ষতি বেড়েছে এবং সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তিতাস আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। 
তিতাসের ওই আবেদনটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁলিয়ে রেখেছে বিইআরসি। কমিশন একটি কমিটি গঠন করেছিল সেই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। ৬ ফেব্রুয়ারি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিইআরসি চেয়ারম্যান।

সূত্র মতে, সারাদেশে প্রায় ৪৪ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে, তার মধ্যে ৫ লাখের মতো প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীদের তথ্য প্রমাণ কোনভাবেই গ্যাস কোম্পানিগুলোর দাবিকে সমর্থন করে না। বেশিরভাগ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গড়ে ৩০ ঘনমিটারের কম গ্যাস ব্যবহার করছেন প্রিপেইড গ্রাহকরা। শুধু সেই পরিসংখ্যান নয় ২০১৯ সালে বিআইডিএসকে (বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান) দিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে বিইআরসি। মূল লক্ষ্য ছিল আবাসিকে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী ও মিটার বিহীন গ্রাহকদের ওপর সমীক্ষা পরিচালনা করা। রিপোর্টে দেশের ৬টি কোম্পানির গ্রাহকের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর ওই প্রতিবেদনটি দাখিল করেন বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ ও তার টিম। ওই রিপোর্টে ছোট পরিবার, বড় পরিবার, বিতরণ কোম্পানি ভেদে ব্যবহারের তারতম্য এমনকি মিটার ও ননমিটারের মধ্যেও পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। ১৩ জেলার ১০৫৪ আবাসিক গ্রাহকের ওপর পরিচালিত সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, একক চুলার প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকরা ৩৫.৫ ঘনমিটার ও দুই চলার গ্রাহকরা ৫৯.৩ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করছে। গড়ে ৫৭.৯ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেছেন মিটার ব্যবহারকারীরা। আর ননমিটার গ্রাহকরা গড়ে ৫৬ মিটার গ্যাস ব্যবহার করেছেন।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেছেন, মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকরা অনেক বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে। ক্ষেত্র বিশেষে ১০০ ঘনমিটার পর্যন্ত গ্যাস ব্যবহারের রেকর্ড রয়েছে। তিনি বলেন, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী ও ননমিটার গ্রাহকের ব্যবহারের মধ্যে অনেক তারতম্য রয়েছে। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহক অনেকটা মিতব্যয়ী হন। তাই তাদের ব্যবহারের পরিমাণ অনেক কম হয়ে থাকে। 

গত ৬ জানুয়ারি বিদ্যমান গ্রাহকদের দর অপরিবর্তিত রেখে নতুন শিল্প কারখানার বয়লার ও শিল্প কারখানার জেনারেটরে (ক্যাপটিভ) সরবরাহ গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এর কয়েকদিনের মাথায় গ্যাসের অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিও দাম হুবহু প্রস্তাব জমা দিয়েছে। বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে দিয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর গণশুনানি হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

বিইআরসির তৎকালীন সদস্য (গ্যাস ২০২২) মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিতাস গ্যাসের অভিযোগ সত্য নয়। আমার তো মনে হয়, ৫০ ঘনমিটারের নিচে করা উচিত ছিল। তাদের যে সাড়ে ৩ লাখ প্রিপেইড মিটার ছিল (ওই সময়) সেখানে দেখা গেছে, গড়ে ৪৫ ঘনমিটারের কম ব্যবহৃত হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের বিলের তথ্য দেখলেই সহজেই তা বুঝা যায়। বিষয়টির জন্য রকেট সায়েন্স জানার দরকার হয় না।

এ প্রসঙ্গে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ জানান, রিপোর্টটি কমপ্লিট নয়, রিপোর্টটি ছিল সাক্ষাৎকার ভিত্তিক। সেখানে কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। আমরা চাচ্ছি, মতামতসহ পুর্ণাঙ্গ রিপোর্ট। সেই মতামত পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব বিইআরসির বিবেচনাধীন রয়েছে। তিতাস গ্যাসও তার গ্রাহকদের জন্য দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তিতাস আশা করেছিল তাদের মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকের গ্যাসের পরিমাণের ইস্যুটি সমাধান করতে। তবে শিল্পে গ্যাসের ইস্যুটি পুরোপুরি ভিন্ন ইস্যু। আমরা দুইটাকে আলাদা করে দেখছি। আবাসিকের ইস্যুটি তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়