এবার ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন চাল এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৭৩৯ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে এই চাল ও সার কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
মঙ্গলবার ৯২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
এদিকে একই বৈঠকে ভারত থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল কেনার অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ভিয়েতনাম থেকে সরকারি (জিটুজি) পর্যায়ে ১ লাখ টন আতপ চাল আমদানির প্রস্তাব নিয়ে আসে খাদ্য মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে এই চাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৯ লাখ টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়। এরই আলোকে দেশের সরকারি খাদ্য মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে ১ লাখ টন আতপ চাল জিটুজি পদ্ধতিতে ভিয়েতনাম থেকে আমদানির জন্য সিদ্ধান্ত হয়।
ভিয়েতনামের সাউদার্ন ফুড করপোরেশন চাল সরবরাহের আগ্রহ ব্যক্ত করে চিঠি পাঠায়। পরবর্তী সময়ে দুই দেশের মধ্যে ভার্চুয়াল সভায় আলোচনা মাধ্যমে প্রতি টনের দাম ৪৭৪ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে এতে মোট ব্যয় হবে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ২৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির একটি প্রস্তাবে দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবটিও অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, মরক্কো থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে টিএসপি সার আমদানি করে বিএডিসি। ইতোমধ্যে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্তগুলো অভিন্ন রেখে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে পুনরায় চুক্তি নবায়ন করা হয়।
সার আমদানি চুক্তিতে উল্লেখ করা মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে মরক্কো থেকে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৩২ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর সমপরিমাণ ১৬১ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রতি টন টিএসপি সারের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৪০ ডলার।
১ লাখ ৩০ হাজার টিন ডিজেল কিনবে সরকার: ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ সংক্রান্ত দরপ্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ২০২৫ সালের পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। এর আলোকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তির আওতায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেডের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
এই ডিজেল আমদানির ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল ডিজেলের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ ডলার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় ২০১৬ থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে। পাইপলাইন নির্মাণের আগে এনআরএল থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ থেকে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে। সূত্র : খবরের কাগজ
আপনার মতামত লিখুন :