শিরোনাম
◈ সিলেটকে হারিয়ে বিপিএলের প্লে-অফে খেলার পথে দুর্বার রাজশাহী ◈ গ্যাসের দাম বাড়ালে পোশাক খাতে খরচ বাড়বে ১৮ হাজার কোটি টাকা ◈ পাকিস্তানের মাটিতে ৩৪ বছর পর টেস্ট জয় করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ◈ কারাগারে সাবেক বিচারপতি মানিকের মৃত্যুর খবর নিয়ে যা জানা গেল ◈ রংপুরের হয়ে খেলতে আসছেন টিম ডেভিড, সুনিল নারাইন ও ডেভিড ওয়ার্নার  ◈ বান্দরবানে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে কেএনএফের দুই সন্ত্রাসী আটক ◈ এবার আল্টিমেটাম দিয়ে নিউমার্কেট থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের ◈ বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা বন্ধ করা উচিত: নিক্কেই এশিয়ায় মতামত প্রতিবেদন ◈ সংস্কার  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কৌশল পরিবর্তন করতে হবে,তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান ◈ টেবিলের নিচ দিয়ে টাকা দেওয়া থেকে বাড়তি ভ্যাট ভালো: অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ০২:৫৪ দুপুর
আপডেট : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১৬ হাজার মেগাওয়াটেই হিমশিম, গ্রীষ্মে ১৮ হাজারে কী করবে বিদ্যুৎ বিভাগ!

মনজুর এ আজিজ: আগামী মার্চ থেকে শুরু হওয়া গ্রীষ্ম, রমজান ও সেচ মৌসুমে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার সম্ভাব্য প্রক্ষেপণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রতি বছরই গ্রীষ্মের সঙ্গে সেচ এবং রমজানের বাড়তি চাহিদা যোগ হয়। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে সারাদেশে জনসাধারণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। গেলো বছর গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ মেগাওয়াট নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিতরণ ব্যবস্থার বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহে লেজেগোবরে অবস্থা ছিল সাবেক সরকারের। এ সময়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াটেই হিমশিম খেতে হয় সরকারকে। সেখানে এবার ১৮ হাজার মেগাওয়াটে কী করবে বিদ্যুৎ বিভাগ, তা নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়লা ও ডলার সংকটে গত বছর কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্রীষ্মেই বন্ধ রাখতে হয়েছিল। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ হিসেবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকটের নাজুক পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছিল। তবে এবারও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দর আগের মতো অবস্থায় রয়েছে। ফলে গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। 

বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে একটু একটু করে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে শুরু করবে। ফেব্রুয়ারিতে সেচের জন্য অতিরিক্ত এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। এর বাইরে মার্চের শুরু থেকেই পবিত্র রমজান শুরু হবে। এই সময়েও বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে। অর্থাৎ মার্চ থেকে বিদ্যুতের চাহিদা একধাপে অনেকটা বেড়ে যাবে। মার্চ থেকে টানা আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা একই রকম থাকে। এর মধ্যে এপ্রিল, মে ও জুনে সর্বোচ্চ চাহিদা তৈরি হয়, যা সামাল দেয়া বরাবরই কঠিন হয়ে পড়ে।

জানা যায়, গত বছর মার্চ মাসের শুরুর দিন অর্থাৎ ১ মার্চ ওই মাসের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াট। একই বছর এপ্রিলে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ২৩ এপ্রিল ১৬ হাজার ২২৫ মেগাওয়াট। মে মাসে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১ মে ১৬ হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট, জুন মাসে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১২ জুন ১৫ হাজার ৭৭৮ মেগাওয়াট, জুলাই মাসে ওই মাসের সর্বোচ্চ ২৯ জুলাই উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট এবং আগস্টে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১ আগস্ট ১৪ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতবারের মতো এবারও বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি প্রায় একই রকম রয়েছে। কেবল পটুয়াখালীতে একটি ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পরীক্ষামূলক উৎপাদনে এসেছে। গ্রীষ্মের মধ্যে কেন্দ্রটি তার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি। সাবেক সরকার দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধানে মনোযোগ না দিয়ে একতরফা আমদানিনির্ভর জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করায় প্রতি মাসে গ্রীষ্মে অন্তত এক বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি প্রয়োজন হয়। যে ব্যয় বহন করা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
এদিকে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিইপপা) নেতারা বলছেন, তেলচালিত কেন্দ্র না চালালে গ্রীষ্মে ৩ হাজার মে.ও লোডশেডিং হবে। তাদের মতে, আগামী মার্চ মাসে রোজা, সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াবে। তারা বলছে, বকেয়া পরিশোধ না করা হলে তেলচালিত কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে না। তেলচালিত কেন্দ্র না চালালে ৩ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হবে গ্রীষ্মে।

বিইপপা সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত বলেন, মার্চ থেকে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়বে। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় গ্যাস থেকে ৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে পারে। কয়লা থেকে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় উৎপাদন করা হলেও আসবে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট। আমদানি থেকে আসতে পারে ২ হাজার ১২৫ মেগাওয়াট। এ সময় ৭৫ শতাংশ সক্ষমতা কাজে লাগালে তেল থেকে ৪ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। তাই তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখতে হলে দ্রুত বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান তিনি। 

এ প্রসঙ্গে পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বাড়তি চাহিদার কথা চিন্তা করে পরিকল্পনা করেছি। গ্রীষ্মের বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে হলে আমাদের যে পরিমাণ জ্বালানি অর্থাৎ গ্যাস, তেলের প্রয়োজন হবে সেসব আমরা ইতোমধ্যে জানিয়েছি। এখন জ্বালানির চাহিদা পূরণ হলে আমরা আশা করি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবো।

অবশ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, আগের সরকারের সময় থেকেই জনগণের মধ্যে এ নিয়ে চরম অসন্তোষ আছে। এবারও এই অসন্তোষ থেকে বের হওয়ার কোন কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সরকার পরিবর্তনের ফলে আমরা আশা করেছিলাম, এই খাতে যে অন্যায়ভাবে ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে সেটি বের করা হবে। সরকার সেদিকে না গিয়ে তারা দাম বাড়ানোর দিকে এগোচ্ছে। বর্তমানে অর্থনীতির একটি বড় অংশ নির্ভর করছে জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি করা এবং তার ওপর জনগণের স্বত্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করার ওপরে। যাতে মানুষ তার প্রয়োজনীয় পণ্য, জ্বালানি এবং জ্বালানিজাত পণ্য কিনতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়