মহসিন কবির: শেখ হাসিনার পতনের পরও দেশেরশেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না। বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কোন কাজে আসেনি। হতাশায় দিন গুনছে বিনোয়োগকারীরা। স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকারসহ সব স্টেকহোল্ডারের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যাবেন। সেখানে ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএল, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, ডিবিএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে ৫ ডিসেম্বর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শেয়ার মার্কেটে অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ করছেন। তবে দেখছি, কিছু কোম্পানির ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের শেয়ারের দাম বাড়ছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সংস্কারের লক্ষ্যে এক থেকে দেড় বছরের জন্য এসেছি। আমরা বেশি দিন থাকব না। কিছু ভালো কাজের উদাহরণ রেখে যেতে চাই। আমরা একটি মেঠোপথ রেখে যাবো, অন্যরা যেন সে পথে এগিয়ে যেতে পারেন।
এদিকে লেনদেন নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া ঝুঁকিমুক্ত করতে গঠিত সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ডিএসই। ২০১৯ সালে গঠিত সিসিবিএলের অন্যতম শেয়ারধারী হলো ডিএসই। সিসিবিএল সম্প্রতি সিসিপি প্রযুক্তি স্থাপনে ভারতের টাটা কনসালট্যান্সির সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ নিলেও ডিএসই আপত্তি জানিয়েছে। এতে পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সিসিপি প্রযুক্তি কেনা থেমে গেলে সিসিবিএলের পুরো কর্মকাণ্ডই বাধাগ্রস্ত হবে।
ডিএসইর মতে, অতীতে সিসিবিএল প্রযুক্তির মান উন্নয়নে ব্যর্থ হয়েছে। সিসিবিএল দাবি করেছে, তারা সব কার্যক্রম আইন মেনে এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে পরিচালনা করছে। সিসিবিএলের মালিকানায় রয়েছে ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল ও ১২টি ব্যাংক। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ৪৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা ডিএসইর। ২০ শতাংশ করে ৪০ শতাংশ মালিকানা সিএসই ও সিডিবিএলের হাতে। বাকি ১৫ শতাংশ মালিকানা ১২টি ব্যাংকের। ডিএসই ছাড়া অন্য কোনো শেয়ারহোল্ডার আপত্তি জানায়নি। আজ সোমবার বেলা ১১টায় বিএসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে স্টেকহোল্ডারদের এ বিষয়ে বৈঠক হবে।
কারিগরি ত্রুটিতে লেনদেন বিঘ্ন, উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন : নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ডিএসইতে নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু করা যায়নি। লেনদেন শুরু হয় দেড় ঘণ্টা পর বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে এবং এক ঘণ্টা কম সময় ধরে দুপুর ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত চলে। আর ২টা ৫০ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত চলে পোস্ট ক্লোজিং সেশন। এতে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে, মূল্যসূচকও পতন হয়। ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কম। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী লেনদেন হয়েছে। তবে এখানেও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে এবং মূল্যসূচকের পতন হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাত্বিক আহমেদ শাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু করা সম্ভব হয়নি। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে এই ধারা অব্যাহত থাকে। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দরপতনের মাত্রাও বাড়তে থাকে। কারিগরি ত্রুটির কারণ অনুসন্ধানে ডিএসই একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলেও জানান তিনি।
রোববার ডিএসইতে দাম বেড়েছে ৭৩ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭০টির এবং ৫৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৫ পয়েন্টে নেমেছে। ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৯২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৭টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মোট লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১০১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
আপনার মতামত লিখুন :