শিরোনাম
◈ নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ ◈ জাতীয় সংসদের আসন ৬০০ করার সুপারিশ নারী সংস্কার কমিশনের ◈ ১১ ওভারের মধ্যে জিতেও বিদায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ◈ অফিস সময়ে সভা করতে সম্মানী নয়: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ হজ ফ্লাইট ২৯ এপ্রিল, বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ ছাড়াই হজে যাবেন যাত্রীরা ◈ নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ছাপিয়ে বিলি করা হবে: ড. ইউনূস ◈ ৪ বিয়ে করে বিপাকে বৃদ্ধ, থানায় দেখা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ◈ প্রধানমন্ত্রী নয়, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার চায় এনসিপি: নাহিদ ইসলাম ◈ ইসরাইলিদের আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করার গুঞ্জন, ফিলিস্তিনের সতর্কবার্তা ◈ শেখ মুজিবের ছবি অপসারণের ঘটনায় শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ছাত্রদলের প্রতিবাদ

প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:৩৮ সকাল
আপডেট : ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আসছে বছর খেলাপি ঋণ ছাড়াতে পারে পাঁচ লাখ কোটি টাকা

আসছে বছর মার্চের মধ্যে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণে সব ধরনের ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা কঠোরের পরিপ্রেক্ষিতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। 

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বা ৯ শতাংশ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া ঋণখেলাপি চিহ্নিত হতে শুরু করায় এভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া অবলোপনকৃত ঋণ ৬০ হাজার কোটি, অর্থঋণ আদালতে আটকা দুই লাখ ৭৮ হাজার কোটি।আদালতে রিট করার মাধ্যমে স্টে অর্ডার নেওয়া ৭৬ হাজার কোটি টাকাও আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী খেলাপির খাতায় যুক্ত হবে। তাই আগামী বছর প্রকৃত হিসাবায়ন করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর নজিরবিহীন সব জালিয়াতি ঘটেছে ব্যাংক খাতে। বেসিক ব্যাংক, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট, সাদ-মুসার ঋণ জালিয়াতি প্রকাশ হলেও আড়ালে ছিল অন্যান্য রাঘববোয়ালের অপকর্ম। এখন তাদের বেনামি ঋণ খেলাপি হতে শুরু করেছে। আবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক দখল, জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার ও কয়েকটি শরিয়াহ ব্যাংক পঙ্গু করে দেওয়া হয়। এখন এসব ব্যাংক প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করায় কার্পেটের নিচে রাখা খেলাপি সামনে আসছে। দ্রুত বাড়ছে খেলাপি। গত তিন মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে ঋণ শ্রেণিবিন্যাসের জন্য খসড়া দিকনির্দেশনা তৈরি করেছে। শিগগিরই এই দিকনির্দেশনা প্রকাশ করা হবে।

২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে তা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা হুসনে আরা শিখা।

খসড়া নির্দেশিকা অনুসারে, ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত তারিখের পর তিন মাসের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ না করলে ব্যাংক যেকোনো ধরনের ঋণকে বকেয়া হিসেবে গণ্য করবে। বর্তমানে কোনো ঋণগ্রহীতা সময়মতো কিস্তি দিতে না পারলে ঋণ পরিশোধের তারিখের ছয় মাস পর সেই ঋণ বকেয়া হিসেবে গণ্য হয়।

প্রথম দফায় মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাস করা। মেয়াদি ঋণ হচ্ছে ব্যাংক থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণের ঋণ। এটি পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সূচি আছে। এর নির্দিষ্ট বা শর্তসাপেক্ষে পরিবর্তনশীল সুদের হার আছে। গত সেপ্টেম্বরে এর প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের অনুপাত এখন সবচেয়ে বেশি। দেশের মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশই মন্দ। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগামীতে খেলাপি ঋণ বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ডিসেম্বর নাগাদ খেলাপি ঋণ তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তার মতে, ঋণ শ্রেণীকরণের নিয়ম কঠোর করা হলে এটি আরো বেশি হবে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। তারা এই সময়সীমার মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের ঋণ শ্রেণীকরণ বিধিমালা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক একসময় ঋণ শ্রেণীকরণে আন্তর্জাতিক রীতি মানলেও ২০১৫ সালে সেখান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের জন্য বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। সংস্থাটি ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকের ১০ শতাংশের নিচে নামানোর শর্ত দিয়েছে। তবে এ খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য আগের মতো নীতিসহায়তা দেওয়া যাবে না। বরং ২০১৯ সাল থেকে মেয়াদি ঋণ এক বছর কোনো কিস্তি না দিলেও তা মেয়াদোত্তীর্ণ না করার বিধান তুলে দিতে হচ্ছে। বেনামি ও ভুয়া ঋণ ঠেকানো, এক জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে আরেকখানে সমন্বয়, বারবার ঋণসীমা বাড়ানোর সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। এরই মধ্যে একের পর এক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, সুশাসন জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। উৎস: চ্যানেল আই অনলাইন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়