এপ্রিল-আগস্ট এই পাঁচ মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। যদিও এ সময় দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রফতানি কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগ থেকে প্রকাশিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (ভারতে অর্থবছর হিসাব করা হয় এপ্রিল-মার্চ সময়সীমায়) প্রথম পাঁচ মাসের পরিসংখ্যানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের এ চিত্র উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ভারতীয় অর্থবছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশটি থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানির অর্থমূল্য ছিল ৪৩৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির অর্থমূল্য ছিল ৪১৭ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। সে হিসাবে এ পাঁচ মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
যদিও আগস্ট মাসে ভারত থেকে আমদানি কমেছে ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জুলাই মাসে তীব্র হওয়া ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে আগস্ট মাসে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই মাসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে দুই দেশের বাণিজ্যে। টানা তিন দিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ ছিল। ভারতসহ প্রায় সব দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জুলাই ও আগস্ট মাসে বিঘ্নিত হয়।
এরপর সেপ্টেম্বর মাসের পর চলমান অক্টোবরেও বাংলাদেশের বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে ভারত থেকে পেঁয়াজ, ডিম ও কাঁচামরিচের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য বিপুল পরিমাণে আমদানি হচ্ছে।
ভারতীয় অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি হয়েছে ৭৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হওয়া পণ্যের অর্থমূল্য ছিল ৮১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এ হিসাবে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি কমেছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
দেশটির বাণিজ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারত থেকে বাংলাদেশে শীর্ষ আমদানি পণ্য হলো তুলা। দ্বিতীয় শীর্ষ পণ্য হলো সিরিয়াল বা খাদ্যশস্য। পাশাপাশি আমদানি হয় খনিজ ও জ্বালানি পণ্য। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হওয়া প্রধান পণ্য হলো তৈরি পোশাক।
দুই দেশের বাণিজ্যসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে এ তারতম্য স্বাভাবিক বিষয়। কারণ ভারত যত ধরনের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ তত ধরনের পণ্য রফতানি করতে পারে না। বাংলাদেশের রফতানি ঝুড়ি ছোট, ভারতের বড়। আবার দুই দেশের অর্থনীতিরও তুলনা চলে না। ভারত থেকে অনেক ধরনের পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করতে হয়। যেমন কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ বা চালের মতো নিত্যপণ্যের বড় একটি অংশ আমদানি করতে হয়। পাশাপাশি তুলা আমদানি করতে হয় টেক্সটাইল মিল চালানোর জন্য। কারখানায় পোশাক তৈরির জন্য কাপড়ও আমদানি করতে হয়। এগুলোর জন্য নির্ভরতা থাকায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ঘাটতি থেকেই যায়।
ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান সুলতান আহমেদ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সব সময় থাকবে। আমরা ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছি। আমাদের রফতানি এখন ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দুই বছর আগেও ছিল ১ বিলিয়নের নিচে। পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে। তারপরও বাণিজ্য ঘাটতি থাকবেই। এক্ষেত্রে সমান হওয়ার সুযোগ কম।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি বড় হয়েছে। অনেক শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আমাদের টেক্সটাইল মিলগুলোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণের তুলার উৎস ভারত। পোশাক কারখানার উল্লেখযোগ্য পরিমাণের কাপড় আসে ভারত থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের আমদানি বেড়েছে কারণ আমাদের জরুরি ভিত্তিতে কাঁচামরিচ, ডিম আমদানি করতে হয়েছে। আর রফতানি স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছে। রফতানি যা হওয়ার তাই হয়েছে। আমরা অতিরিক্ত আমদানি করেছি, যার প্রভাব রফতানিতেও পড়েছে। ভারতের সঙ্গে অনেক অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হচ্ছে। এটি যদি প্রতিরোধ করা যায় তাহলে রফতানি আরো বাড়বে।’
ভারতীয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে মোট পণ্য বাণিজ্য হয়েছে ১ হাজার ২৯১ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের। এর মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানির অর্থমূল্য ছিল ১ হাজার ১০৬ কোটি ৫৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আর রফতানি হয়েছে ১৮৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য।\
চলতি ২০২৪-২৫ ভারতীয় অর্থবছরে দেশটি থেকে পণ্য আমদানির মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম মাস এপ্রিলে আমদানি কমেছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। এরপর মে থেকে জুলাই টানা তিন মাস আমদানি বাড়ে। এ তিন মাসে দেশটি থেকে পণ্য আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৯৩, ২৪ দশমিক ৮৮ ও ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। এরপর আবার আগস্টে আমদানি কমে যায়। এ সময় প্রতিবেশী দেশটি থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
মাসভিত্তিক রফতানি পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রফতানি কমে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। মে মাসে তা বাড়ে ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর পর জুনে আবার রফতানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়। এ সময় রফতানি কমেছে ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। জুলাইয়ে আবার পণ্য রফতানি বেড়ে যায়, ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। আগস্টে প্রতিবেশী দেশটিতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম অর্থমূল্যের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। সূত্র : বণিক বার্তা
আপনার মতামত লিখুন :