সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া এখন থেকে পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের প্রতি মাসে সুদের টাকা দেয়া হবে। এর আগে তারা ৩ মাস পর পর সুদ বা মুনাফার টাকা পেতেন।
এছাড়া, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডসহ সঞ্চয় অধিদপ্তর পরিচালিত ১১টি সঞ্চয় স্কিমের বিনিয়োগসমূহ মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগ হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মূলত সরকারের রাজস্ব আয়ে ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট মোকাবেলায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বর্তমানে মেয়াদ শেষে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের অর্থ সুদাসলে বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে ফেরত দেয় সরকার। আইএমএফ এর চাপ ও অধিক সুদ ব্যয়ের কারণে গত কয়েকবছর ধরে সরকার জনগণের জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা কঠিন করে তুলেছিল।
কিন্তু রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ায় এবং ব্যাংকখাত থেকে ঋণ নেয়া কমাতে আবারও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার দিকে ঝুঁকছে সরকার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ কমিয়েছে। এ বছর সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া নিট ঋণের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩,৩৪৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮,০০০ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ৭,৩১০ কোটি নির্ধারণ করা হয়েছে। আর চলতি অর্থবছর এখাত থেকে ১৫,৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
একইভাবে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের অর্থও সুদাসলে ফেরত দেয়া হয়। ডলার সংকটের কারণে কোনো কোনো ব্যাংক এসব বন্ডে বিনিয়োগকারীদের সুদাসল বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে ।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সভা শেষে আব্দুর রহমান খান বলেন, এতদিন ধরে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা তিন মাস অন্তর অন্তর সুদ বা মুনাফার টাকা পেতেন। এখন থেকে প্রতিমাসে তাদের মুনাফার অর্থ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকে আমানতের সুদহার বাড়ার কারণে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহারও বাড়ানো হবে। এজন্য অর্থবিভাগের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। সে কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানো হবে।
আব্দুর রহমান খান জানান, বর্তমানে সঞ্চয় অধিদপ্তর ১১টি সঞ্চয় স্কিম পরিচালনা করছে। এসব স্কিমে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ মেয়াদ শেষে ফেরত দেয়া হয়। যারা আবারও বিনিয়োগ করতে চান, তাদের নতুন করে আবার বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।
আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের অর্থ প্রত্যাহার করে না নিলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগ হবে, বলেন তিনি।
ওয়েজন আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগও মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগ হবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
আব্দুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশি মেরিনার, পাইলট ও কেবিন ক্রু'রা এতদিন ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পেতেন না, সভায় তাদেরকে এই বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে চারটি সঞ্চয়পত্র, দুটি ডাকঘর সঞ্চয় হিসাব, একটি ডাক জীবনবিমা, একটি প্রাইজবন্ড ও তিনটি প্রবাসী বন্ড চালু রয়েছে। এসবে বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ বা মুনাফার হার ভিন্ন। পরিবার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, বছরভিত্তিক হিসাবে প্রথম বছর শেষে সাড়ে ৯ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ১০, তৃতীয় বছর শেষে সাড়ে ১০ এবং চতুর্থ বছর শেষে ১১ শতাংশ। উৎস: বাংলাদেশ জার্নাল।
আপনার মতামত লিখুন :