শিরোনাম
◈ এবার সেনাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ◈ বিদেশে অসুস্থ হয়ে পড়া নারী শ্রমিকরা বেশির ভাগই জরায়ুর সমস্যায় ভুগছেন ◈ ১৯০ বন্দীর বিনিময় করলো রাশিয়া-ইউক্রেন আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় ◈ সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির শঙ্কা, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যা জানাগেল ◈ নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেফতার ◈ আ’লীগ নেতাদের কুমিল্লা সীমান্তে বৈঠকের গুঞ্জন ◈ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার : সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক ◈ নিজ বাসা থেকে কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোরের মরদেহ উদ্ধার, পুলিশের ধারণা ৪-৫ দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে ◈ লালন মেলায় চুরি হওয়া ১৬ মোবাইলসহ যুবক আটক ◈ বেতন গ্রেড না বাড়ালে টিকা নয়, আল্টিমেটাম স্বাস্থ্যকর্মীদের !

প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৩৬ দুপুর
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শেখ হাসিনার দেশি-বিদেশি ঋণের বোঝা রেখে গেছেন ড. ইউনূসের ঘাড়ে

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি যখন শেখ হাসিনা ক্ষমতা নেন তখন দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল দুই লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। এরপর সাড়ে ১৫ বছর টানা ক্ষমতায় থেকেছেন তিনি। আর এই সময়ে ঋণ ফুলেফেঁপে গিয়ে ঠেকেছে সাড়ে ছয় গুণে। অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ আমলে না নিয়েই একের পর এক মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি আর সেই দুর্নীতি আড়াল করতে তিনি দৃষ্টি দেন দেশি ঋণের প্রতি। ফলে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর জনগণের ওপর রেখে যাওয়া শেখ হাসিনার তৈরি এই পর্বতসম ঋণের বোঝা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। সূত্র : এনটিভি

অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় শেখ হাসিনা দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে যে ঋণের বোঝা রেখে গেছেন, তা স্থানীয় মুদ্রায় ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার সময় যে ঋণ ছিল দুই লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। 

৩৭ বছরে ঋণের পরিমাণ 

স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৩৭ বছরে যত সরকার এসেছে, তারা দেশি ঋণে খুব বেশি মনোযোগী ছিলেন না। অর্থনীতিবিদদের মতে এর কারণ ছিল রিজার্ভ শক্তিশালী করা ও দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত ভিত্তি দেওয়া। অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্য বলছে, ওই সময়ে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে সরকার যে ঋণ নিয়েছে, ২০০৯ পর্যন্ত তার স্থিতি ছিল দুই লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা।

যেমন ছিল শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছর

২০০৯ সাল পর্যন্ত ৩৭ বছরে যতগুলো সরকার এসেছে, সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারও ছিল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালে দুই লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা ঋণের স্থিতি নিয়ে ক্ষমতায় এসে টানা চার মেয়াদে গড়ে তোলেন ঋণের পর্বত। বর্তমানে ঋণের যে স্থিতি আছে, তার মধ্যে বিদেশি ঋণের থেকে বেশি দেশি ঋণ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, গত সাড়ে ১৫ বছরের শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রায় ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে আভ্যন্তরীণ ঋণ ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা আর বিদেশি ঋণ আট লাখ এক হাজার কোটি টাকা।

দুর্নীতি আড়ালে করতে দেশীয় ঋণ

জবাবদিহিতা এড়িয়ে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ করতেই শেখ হাসিনা দেশীয় উৎস থেকে ঋণ নিয়েছেন বলে অভিযোগ অর্থনীতিবিদদের। তাদের মতে, পদ্মা সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১১ হাজার কোটি টাকার মতো। সেটা ধাপেধাপে বেড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়। বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা মেগা প্রকল্পে ঋণ দিতে চাইলেও তারা সরে পড়ে। এর পেছনে যে কারণ তারা দেখায়, তাতেও উঠে আসে দুর্নীতির কথা। এটি সাপে বর হয়ে আসে শেখ হাসিনার কাছে। পরে দেশীয় খাত থেকে ঋণ নিয়েই হাতে নেন মেগা দুর্নীতিগ্রস্ত সব প্রজেক্ট। আর তাতে শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আর কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি। 

অর্থনীতিবিদের উদ্বেগ আমলে নেননি শেখ হাসিনা

মেগা প্রকল্পের নামে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে লাগামহীনভাবে ঋণ নিয়ে জনগণের ওপর বোঝা চাপানোর ঘটনায় বরাবরই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে আমলেই নেননি শেখ হাসিনা। নিজের একক সিদ্ধান্ত ও তোষামোদকারীদের উৎসাহে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও ঋণ গ্রহণে উৎসাহী ছিলেন তিনি। 

শেখ হাসিনার ঋণের চাপ ড. ইউনূসের ঘাড়ে

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকার গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে যত ঋণ নিয়েছেন সুদসহ এ ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে আগামী বছর থেকেই। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে যেসব প্রকল্প নিয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে—কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের জন্য ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে কঠিন শর্তের ঋণ নিয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার।

শেখ হাসিনার আমলের দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও আর্থিক নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৫ সেপ্টম্বর বাংলাদেশ সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেছেন, 'আমরা দুর্নীতির সাগরে ছিলাম। সরকার আগের স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজদের পাচার করা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ 

গত ২৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়ীদের একটি অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বলেছেন, দুর্নীতি ও অনিয়ম বাংলাদেশের রাজস্ব ও মুদ্রা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর টাকা পাচার হওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যাতে আর না কমে, সে জন্য আমরা সরকারের মধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যা বলছেন অর্থনীতিবিদরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবউল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি দেশ ও দেশের অর্থনীতিকে ডুবিয়ে গেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন গত সাড়ে ১৫ বছরে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার সবগুলোই নেওয়া হয়েছে অর্থ আত্মসাৎ ও লুটপাটের দিকটি সামনে রেখে। 

শেখ হাসিনার নেওয়া প্রতিটি প্রকল্প ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেন ড. মাহবুবউল্লাহ। তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রতিটি প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। কোনো কোনো প্রকল্পের ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি। এটি খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। এরচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি আর কিছুই হতে পারে না বলেও জানান এ অর্থনীতিবিদ। 

শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া ঋণের বোঝা বর্তমান সরকারের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, এমন প্রশ্নের জবাবে এনটিভি অনলাইনকে ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, অবশ্যই একটি বর্তমান সরকারের ওপর একটি বড় ধরণের বোঝা। যেখানে আগের সরকার নগদ টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। এতে মুল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। এ সরকার অর্থনীতিতে একটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে সহায়তার প্রতিশ্রুতি আদায় করেছেন। এতে দেশের রিজার্ভ একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। 

অর্থনীতিবিদ ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গতকাল রাজশাহীতে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, দুর্নীতি দূর করতে না পারলে অনেক সম্ভাবনা কার্যকর হবে না। এ জন্য পাচার হওয়া অর্থ যেমন ফেরত আনতে হবে, দেশের ভেতরে যারা দুর্নীতি করেছেন, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের দৃশ্যমান শাস্তি না হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না। আবার মূল্যবোধভিত্তিক যে নজরদারির কথা আমরা বলছি, তা–ও দুর্বল হয়ে পড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়