মহসীন কবির: বাজারে এখন সবজির দাম ব্যাপক চড়া। প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৭০-১৭৫ টাকা। মুরগি ও মাছের দামেও স্বস্তি নেই। সব মিলিয়ে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট কমেনি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দুই মাসে ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র দুটির।
টিসিবির বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৮ আগস্টের তুলনায় শুক্রবার (৪ অক্টোবর) মোটা চাল কেজিতে ১ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৬ টাকা, পাম তেল ১২ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১০ টাকা, চিনি ৩ টাকা ও ডিম ডজনে ১৫ টাকা বেড়েছে। বিপরীতে পেঁয়াজ ও আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা কমেছে।
বেগুনের দাম এখন জাতভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, যা ৮ আগস্ট ছিল ৪০ থেকে ৮০ টাকা। একইভাবে চলতি মৌসুমের সবজি চিচিঙ্গার কেজি ছিলো ৩০-৪০টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভোজ্যতেল ও চিনির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হতে পারে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজ ও আলুর আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে আমদানি শুল্ক কমানো হলেও বাজারে এ দুটি পণ্যের দাম তেমন কমেনি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে শুরু করেছে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। এ অবস্থায় দেশে যাতে এ দুটো নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে লক্ষ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে
বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছুদিন আগে টানা বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষকের সবজিক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। আবার চাহিদার তুলনায় ডিম ও মুরগির সরবরাহ কম হওয়ায় সেখানেও দাম বাড়ছে।
তবে সাধারণ ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের এ ধরনের অজুহাত মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সড়কে চাঁদাবাজি কমিয়ে আনলেও এখনো বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। নানা অজুহাত দেখিয়ে বাজার সিন্ডিকেট চাল, সবজি, ডিম ও মুরগির দাম বাড়াচ্ছে। এতে চাপে থাকা সাধারণ ভোক্তারা আরো বেশি চাপে পড়ছেন।
রাজধানীর মোআম্মদপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলার কেজি ৮০-১০০ টাকা, ঢেঁড়স কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, চিচিঙ্গা কেজি ৮০ টাকা, কাঁকরোল কেজি ৮০-১০০ টাকা, ঝিঙা কেজি ৮০-১০০ টাকা, বরবটি কেজি ১২০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, টমেটো কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, চায়না গাজর কেজি ১৮০ টাকা, শিম কেজি ২৬০-২৮০ টাকা, কচুমুখী কেজি ৮০-৯০ টাকা, পেঁপে কেজি ৫০ টাকা, চালকুমড়া ফালি আগে ছিলো ৩০ টাকা এখন ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। লম্বা লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, আলু কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগিও। রাজধানীতে ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি মানভেদে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা এবং সোনালি মুরগির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বাজারগুলোয় দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা প্রচুর পেঁয়াজের সরবরাহ রয়েছে। তবু কমছে না দাম। বর্তমানে খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা এবং আমদানি করা বড় সাইজের রসুন কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আদা মানভেদে ২২০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মাঝারি আকারের তথা বিআর-২৮ ও পায়জাম জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকায়। মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এছাড়া চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। দুই মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০, মাঝারি চাল ৫৪ থেকে ৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ৮ শতাংশ।
বাজারে অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
আপনার মতামত লিখুন :