শিরোনাম
◈ যে কারণে সাকিবের সঙ্গে তুলনা চান না মিরাজ ◈ ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ কতটুকু তাণ্ডব চালাতে পারে বাংলাদেশে  ◈ স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবি : তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, মহাখালীতে তীব্র যানজট ◈ সচিবালয়ে ঢুকে পড়া ২৮ জনকে মুচলেকায় মুক্তি, ২৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা (ভিডিও) ◈ সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় খালাস পেলেন মামুনুল হক ◈ চট্টগ্রামে টায়ার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট ◈ কানাডা সফরে ভিসা সহজীকরণ-প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় ওপর গুরুত্বারোপ সেনাপ্রধানের ◈ তোপের মুখে জাস্টিন ট্রুডো ◈ বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের প্রধান কোচ সুজন ◈ রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি

প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট, ২০২৪, ০৩:১৯ দুপুর
আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২৪, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এলাচের কমছে দাম, বাকিতে বিক্রি বন্ধ !

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতিকেজি এলাচ পাইকারিতে ২,৫০০ টাকা থেকে ২,৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একমাস আগেও যা ছিল ৩,৩০০-৩,৮০০ টাকা। সর্বশেষ রমজানের ঈদের পর পণ্যটি ৪,০০০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে।

চাহিদা কম থাকা ও বাকিতে বিক্রি বন্ধ হওয়ায় কমতে শুরু করেছে মসলা জাতীয় পণ্য এলাচের দাম। একমাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম প্রতিকেজিতে ৫০০ টাকারও বেশি কমেছে। 

মসলা পণ্যের আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের মীর গ্রুপের স্বত্ত্বাধিকারী মীর নাসির বলেন, "বাজারে কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না। এ কারণে নগদ টাকায় অল্প-স্বল্প বিক্রি হচ্ছে। দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে গত দুই মাসে অনুষ্ঠান বা রেস্তোরাঁয় মন্দা ছিল। এজন্য এলাচের বাজার ঠান্ডা। চাহিদার তুলনায় মজুদ বেশি থাকায় পণ্যটির দাম কমছে।"

দেশে মসলাপণ্য এলাচের বার্ষিক চাহিদা ৮,০০০ টনের কম হলেও গত জুনে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) কেনাবেচার মাধ্যমে প্রতিদিন এক হাজার টনেরও বেশি বেচাকেনা হয়েছে। অনেকটা জুয়া খেলার মতো মুখে মুখে ডিও স্লিপের মাধ্যমে পণ্যটি বিক্রি হওয়ায় অস্থির হয়ে উঠেছিল বাজার। কোনো কর্তৃপক্ষই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।

ডিও হলো— পণ্য বিক্রির বিপরীতে দেওয়া ডেলিভারি অর্ডার। এলাচের ক্ষেত্রে ডিও ট্রেডিংয়ের মধ্যমে সাথে সাথে এলাচের ডেলিভারি না নিয়ে ভবিষ্যতে নেওয়ার জন্য মসলাটির কেনা-বেচার চুক্তি করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে পণ্যটির মূল্য ওঠানামা থেকে মুনাফা অর্জনের লোভে প্রায়ই বড় অঙ্কের চুক্তিতে যান। তাদের এই কারসাজিতে অস্থির হয়ে ওঠে এলাচের বাজার। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হন ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয়ই। 

তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রায় ৭৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যান। এরপর বাজারে আস্থাহীনতার সংকট তৈরি হয়। নগদ টাকা ছাড়া কেনাবেচা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।

আমদানিকার ও ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৮ সালে গুয়াতেমালায় এলাচ উৎপাদন কম হওয়ায় পণ্যটির দাম নিয়ে বাংলাদেশের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। ওই সময় প্রতিকেজি এলাচ ১,৫০০-২,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫,০০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। পরের দুই বছর আমদানিকারকরা এলাচ আমদানি কমিয়ে দেন। অস্থিরতার সুযোগে খাতুনগঞ্জের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ২০২২ সালের দিকে এলাচে বিনিয়োগ শুরু করেন। এরপর থেকে পণ্যটির আমদানি বাড়তে থাকে দেশীয় বাজারে।

আমদানিকারকদের তথ্যমতে, দেশে আমদানি হওয়া এলাচের বেশিরভাগই আসে গুয়াতেমালা থেকে। চলতি বছর ২০২৪ সালের প্রথম দুই মাসে (২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ১৩টি প্রতিষ্ঠান ২৩৭ টন ৮০ কেজি এলাচ আমদানি করেছে। ঘোষিত মূল্য ও রাজস্বসহ প্রতিকেজি এলাচের দাম পড়েছে ১,২৬৭ টাকা। গত বছর ২০২৩ সালে ৮৫টি প্রতিষ্ঠান ৪,৬৭৭ টন ২৯০ কেজি এলাচ আমদানি করে। আমদানিকারকদের ঘোষিত মূল্য ও রাজস্বসহ প্রতিকেজি এলাচের আমদানি খরচ পড়ে ১,২৫৭ টাকা করে।

এর আগে, ২০২২ সালে ১০৪টি প্রতিষ্ঠান রেকর্ড ৬ হাজার ১ টন ২০৫ কেজি, ২০২১ সালে ৭০টি প্রতিষ্ঠান ৪,৩৯৫ টন ৮০ কেজি, ২০২০ সালে ৬০টি প্রতিষ্ঠান ৩,১০১ টন ৬৮৩ কেজি এবং ২০১৯ সালে ৫০টি প্রতিষ্ঠান ৩,৬৭১ টন ২৫৬ কেজি এলাচ আমদানি করে।

প্রকৃত আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী ছাড়াও খাতুনগঞ্জে একটি মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি তৈরি হয়েছে, যারা কখনো মসলা ব্যবসা করতেন না কিংবা এখনও সরাসরি মসলা ব্যবসায় যুক্ত নন। মূলত ডিও স্লিপ হাতবদলের মাধ্যমে এলাচের বাজার অস্থির করে তোলেন তারা। সময়-সুযোগে কয়েক হাত বদল হয়ে দাম বাড়িয়ে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয় প্রভাবশালী চক্রটি।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অমর কান্তি দাশ বলেন, "মানুষ কিনছে না। চাহিদা কমে যাওয়ায় কম দামে হলেও বিক্রি হচ্ছে। মসলা পণ্যের বাজারে আর কারসাজি হওয়ার সম্ভবনা নেই। মসলার বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে সব। তবে টাকা নিয়ে উধাওসহ অস্থিরতার কারণে অনেকে এলাচের ব্যবসা করবেন না। এটা নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে।"

এদিকে বাজারে চীন এবং পাকিস্তানি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি কমেছে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯২-৯৫ টাকায়; চীন থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ (বড় আকৃতির) ৪৫-৫০ টাকা এবং পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৪-৭৫ টাকায়।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের আদা পাইকারিতে প্রতিকেজি ১৫০ টাকা এবং চীনের আদা ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর রসুন (চীন) বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭৫ টাকায়। পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় এবং বাজারে বেচাকেনা কমায় মসলা জাতীয় কাঁচা পণ্যগুলোর দামও কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় কুমার পোদ্দার টিবিএসক বলেন, "৮-১০ দিন ধরে দেশের চীনা পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। যা ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের দামও কমবে।" 

একইসঙ্গে, আদা ও রসুনের দামও কিছুটা কমেছে। দেশের অস্থিরতার কারণে বেচাকেনা কমে গেছে বিধায় দাম কিছুটা কমছে বলে জনান তিনি। সূত্র : টিভিএস নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়