শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট, ২০২৪, ০২:৩৯ রাত
আপডেট : ১৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শঙ্কার মধ্যেও আশা জাগাচ্ছে পুঁজিবাজার !

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন থেকে টানা চার দিন পুঁজিবাজারে সূচকের রেকর্ড পরিমাণ উত্থান হলেও এরপর আবার টানা পতনের মুখে পড়েছে পুঁজিবাজার। উত্থান-পতনের এই খেলার মধ্যে শঙ্কা থাকলেও নতুন করে আশার সঞ্চার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করে। টানা তিন কর্মদিবসে ৬৯৫ পয়েন্ট সূচক বেড়ে সপ্তাহ শেষ হওয়ার পর আবার ১১ আগস্ট একইভাবে সূচকের উত্থান ও লেনদেন বৃদ্ধির মাধ্যমে শেষ হয় লেনদেন।

টানা সূচক ও লেনদেন বাড়তে থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার সৃষ্টি হয়। এরইমধ্যে অনেক নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে ফিরে আসেন। অনেকে আবার নতুন করে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন।
 
পুঁজিবাজারের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহে পুঁজিবাজারে নতুন বিও হিসাব খোলা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি। এর বাইরে প্রায় ৬ হাজার নিষ্ক্রিয় বিও হিসাব নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে আবার নতুন করে আগ্রহ পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

তবে টানা উত্থানের ইতিবাচক প্রভাবের মধ্যেই আবার পতনের ধারা শুরু হয়েছে পুঁজিবাজারে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সূচক কমেছে দেশের দুই শেয়ারবাজারে। ডিএসইতে প্রধান সূচক কমেছে প্রায় ৪৯ পয়েন্ট। লেনদেন হয় প্রায় হাজার কোটি টাকা। দর হারিয়েছে ৬৯ ভাগ শেয়ারের। অন্যদিকে চট্টগ্রামে স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক সূচক কমেছে ১১০ পয়েন্ট।

শেষ কার্যদিবসের প্রথম ১০ মিনিটে প্রধান সূচক কমে প্রায় ৬১ পয়েন্ট। এরপর সূচক বাড়লেও দিনশেষে ডিএসইএক্স সূচক ৪৮ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯০৩ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হয় ৯৯৯ কোটি টাকা। আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে ২৪৪ কোটি টাকা। ডিএসইতে হাতবদলে অংশ নেয়া ৩৯৮ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯১টির, কমেছে ২৭৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর।
 
এদিকে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১১ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এরপর মু. মোহসিন চৌধুরীকে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়।
 
এরপর মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) অর্থনীতিবিদ ড. এম মাশরুর রিয়াজকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে সরকার। প্রজ্ঞাপন অনুসারে নিয়োগের তারিখ থেকে পরবর্তী চার বছরের জন্য এম মাশরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়।
 
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়োগের পর থেকে এখন পর্যন্ত অফিস শুরু করেননি মাশরুর রিয়াজ। এ ছাড়া শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মাশরুর রিয়াজের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন থাকলেও সেটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএসইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময় সংবাদকে বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে বিগত কয়েক দশক ধরে চলছে অস্থিরতা। পুরো এই বাজারটি আকণ্ঠ দুর্নীতি আর কারসাজিতে নিমজ্জিত। নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তার অফিস করার কথা ছিল ১৪ আগস্ট। কিন্তু সেদিন এবং এর পরদিন ১৫ আগস্টও তিনি অফিসে আসেননি। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও বিএসইসিকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেয়া হয়নি।
 
এমনিতেই পুঁজিবাজারের অবস্থা দোদুল্যমান। যদি এখনও এই বাজারকে ঢেলে সাজানো না যায় তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে আরও সময় লাগবে। বিগত কয়েকটি বাজেট এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের নানা সময়ের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তাদের পুঁজিবাজার নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যাথা ছিল না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি এখুনি কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারে তাহলে দরপতনের যে ধারা ছিল তা অব্যাহত থাকবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।
 
তিনি বলেন, বিগত এক সপ্তাহে পুঁজিবাজারে যে হারে বিনিয়োগকারী বাড়ছে এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বার্তা। তার থেকেও ইতিবাচক যারা এতদিন পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিষ্ক্রিয় ছিল তারাও সক্রিয় হতে শুরু করেছে। কিন্তু আবারও টানা দরপতনে তাদের মনের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেবে। বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হলে বাজার ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়